ঘুমন্ত শিশু নিখোঁজের পর ডোবায় মিলল মরদেহ
Published: 11th, June 2025 GMT
সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে ফারিহা আক্তার নামের পাঁচ বছর বয়সী এক শিশু শিক্ষার্থীর মৃত্য ঘিরে নানা প্রশ্ন উঠছে। এনিয়ে উদ্বিগ্ন এলাকাবাসীও। নিহতের পরিবারের অভিযোগ হত্যা করে লাশ ফেলে দেওয়া হয়েছে ডোবায়। গত সোমবারের উপজেলার রামনগর গ্রামে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটোনায় রামনগরসহ আশেপাশের এলাকায় উৎকন্ঠা বিরাজ করছে। বুধবার এ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য জানা যায়।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হোসেন জানান, মৃত্যুর ঘটনাটি প্রাথমিকভাবে রহস্যজনক মনে করছে পুলিশ। তদন্ত চলমান আছে। ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
ফারিহার দাদী ফাতেমা বেগম বলেন, সোমবার পরিবারের সঙ্গে রাতের খাবার খেয়ে আনুমানিক ১০টা থেকে ১১ টার মধ্যে বসত ঘরের মেঝেতে প্লাস্টিকের মাদুর বিছিয়ে শুয়ে পড়েন ফারিহা ও তিনি। রাত তিনটায় ঘুম ভাঙলে তিনি দেখেন ঘরের লাইট নেভানো, দরজা খোলা এবং বিছানায় ফারিহা নেই। তিনি উঠে বিষয়টি ফারিহার বাবা ও মাকে জানান। কিছুক্ষণের মধ্যে প্রতিবেশীরাসহ পরিবারের সদস্যরা শিশু ফারিহাকে খুঁজতে বের হয়। মঙ্গলবার ভোরে রামনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশের একটি পরিত্যক্ত ডোবা থেকে তার অর্ধ নিমজ্জিত দেহ উদ্ধার করা হয়।
খবর পেয়ে জামালগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ফারিহার মরদেহ উদ্ধার করে। সুরতহাল শেষে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।
সাহান আরা ও মুজিবুর রহমান দম্পতির দুই মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে ফারিহা আক্তার দ্বিতীয়। তিন সন্তান, শাশুড়ি, দেবরের স্ত্রীসহ ৭ সদস্য তাদের পরিবারে। দলে দলে লোকজন ও স্বজনরা বাড়িতে আসছেন শেষ বারের মতো ফারিহাকে দেখতে। সবার মুখে বিষাদের কালো ছায়া, উৎকণ্ঠার চাপ। ফারিহার মা বাবা ও স্বজনের কান্নার আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে ওঠেছিল। শোক ছড়িয়ে পড়েছে হাওরঘেরা রামনগর গ্রামে।
নিহত ফারিহা আক্তারের মা সাহান আরা বলেন, খাওয়া শেষে নিজে মেয়েকে সঙ্গে করে টয়লেটে নিয়ে যান। পরে সেখান থেকে এসে ঘুমিয়ে পড়ে সে। তাদের বসতঘরে একটি মাত্র বৈদ্যুতিক লাইট রয়েছে। লাইটটি সারা রাত জ্বালানো থাকে। রাতে তার শশুড়ির ঘুম ভাঙলে তিনি দেখেন ঘরের লাইট নেভানো। পরে তিনি লাইট জ্বালিয়ে দেখেন ঘরের দরজা খোলা ফারিহা বিছানায় নেই। অনেক খুঁজেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরদিন ওই ডোবাতে থালাবাসন ধুতে গিয়ে গ্রামের লোকমান নামের এক ব্যক্তি ফরিহার অর্ধ নিমজ্জিত মরদেহ দেখতে পেয়ে ভয়ে চিৎকার করে ওঠে। পাশের মাঠে খেলতে থাকা তিন শিশু সে দৃশ্য দেখে বাড়ির লোকজনকে খবর দেয়। এদের মধ্যে জাহিদ হোসেন (১৪) সাহস করে ফারিহার মরদেহ ডোবা থেকে তুলে বাড়ি নিয়ে আসে।
প্রতিবেশী শহিদুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ভোর রাতে তিনি ফারিহা আক্তার নিখোঁজের খবর জানতে পেরে ঘর থেকে বের হয়ে নিজে খোঁজাখুঁজি করেন। পরে ভোর ছয়টায় স্কুলের পাশে পরিত্যাক্ত ডোবা থেকে ফারিহার মরদেহ উদ্ধারের খবর পান। এ ধরনের ঘটনা রামনগর গ্রামে আগে কখনো ঘটেনি। সবার মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অভিভাবকরা শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
ফরিহার চাচাতো ভাই আমির উদ্দিন বলেন, ঘুমন্ত শিশু নিখোঁজের পর ডোবা থেকে লাশ উদ্ধারের ঘটনা এটাই প্রথম। এটি অকল্পনীয় অবিশ্বাস্য। ঘটনার পর থেকে গ্রামবাসী শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কে আছেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হোসেন জানান, প্রত্যেকটি মৃত্যুর কোন না কোন রহস্য ও কারণ নিয়ে সন্দেহ থাকে। পুলিশ সুপারের নির্দেশে তিনি নিজে রামনগর গ্রামে এসে সব কিছু পরিদর্শন করেছেন। প্রাথমিক রহস্য উদ্বঘাটনে কাজ চলছে। বসতঘরটি বিভিন্নভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। কিভাবে কেন হলো, এসব প্রশ্নের প্রাথমিক ধারনা পাওয়ার চেষ্টা করছেন। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। রিপোর্টে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ শ হত য স ন মগঞ জ র মনগর গ র ম পর ব র তদন ত মরদ হ
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য
দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।
আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।
লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।
আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।
কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।