৩২০ কোটি টাকার জমি ৩৯ প্রভাবশালীর দখলে
Published: 12th, June 2025 GMT
চট্টগ্রাম মহানগরের উত্তর কাট্টলী সাগরপারের টোল রোড। তার পাশেই সাত একরের বিশাল জায়গাজুড়ে কাভার্ডভ্যান ও এক্সক্যাভেটর ইয়ার্ড। ইয়ার্ডটির মালিক আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি দিদারুল আলম। ১৬ বছর ধরে এ জমি দখল করে গাড়ি ও কাভার্ডভ্যান ভাড়া দিয়ে বছরে তাঁর বাড়তি আয় কোটি টাকা। তবে প্রভাবশালী এ নেতার তৈরি করা বিশাল ইয়ার্ডটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) জায়গায়। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ১০ কোটি টাকার সরকারি জমিতে রাজত্ব করছেন তিনি।
শুধু এমপি দিদার নন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) সাবেক প্যানেল মেয়র নিছার উদ্দিন আহম্মেদ মঞ্জুও দখল করেছেন পাউবোর আড়াই একর জায়গা। সরকারি জমি ভাড়া দিয়ে বছরে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তিনি। এ আওয়ামী লীগ নেতা মুনছুর মিস্ত্রির কাছে বছরে ১৫ লাখ টাকায় দশমিক ৪২ একর জায়গা, আরিফুর রহমান রুবেলের কাছে ১৮ লাখ টাকায় দশমিক ৩৮ একর আরেকটি জায়গা, আবদুল মমিনের কাছে ২৪ লাখ টাকায় দশমিক ৫৪ একর জায়গা এবং নিজে দশমিক ৮৫ একর জায়গা দখল করে লুটেপুটে খাচ্ছেন। একইভাবে চসিকের সাবেক কাউন্সিলর আবুল হাসেম দশমিক ০১৬২ একর জায়গায় ট্রলি ডিপো ভাড়া দিয়ে বছরে ১৮ লাখ টাকা তুলছেন। এভাবে ৩৯ প্রভাবশালীর পেটে চট্টগ্রামের হালিশহর ও পাহাড়তলী এলাকার বর্তমান বাজারদরে পাউবোর ৩২০ কোটি টাকার ৩২ একর জমি। ১৯৭২ সালে শহর রক্ষা বাঁধের জন্য জায়গাগুলো অধিগ্রহণ করেছিল সংস্থাটি। ১৬ বছর ধরে তাদের জায়গা দখল করে কাভার্ডভ্যান ইয়ার্ড, এক্সক্যাভেটর ডিপো, ডেইরি ফার্ম, গাড়ির গ্যারেজ ভাড়া দিয়ে বছরে শতকোটি টাকা পকেটে ভরেছেন তারা।
পাউবো চট্টগ্রাম বিভাগ-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে সাহীদ সমকালকে বলেন, শহর রক্ষা বাঁধ করতে সত্তরের দশকে ২ হাজার ৬৪২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। কিছু অংশ বাঁধ-কাম সড়ক হলেও অধিকাংশ জায়গা জমি শ্রেণিতে রয়ে গেছে। সেই জমিতে ৩৯ দখলদার কাভার্ডভ্যান ইয়ার্ডসহ নানা স্থাপনা তৈরি করে ভাড়া দিয়ে কোটি কোটি টাকা খাচ্ছেন। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে সরকার থেকে ১২ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছি।
সরেজমিন গত ৪ জুন টোল রোডের হালিশহর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সাগরিকা স্টেডিয়ামসংলগ্ন অংশে হাতের ডানে ‘জেএসবি’ বিশাল কাভার্ডভ্যান ইয়ার্ড তৈরি করেছে। চারদিকে সবুজ টিন দিয়ে ঘেরা দিয়ে সেখানে শতাধিক কাভার্ডভ্যান রয়েছে। তার পাশেই রয়েছে মোস্তফা হাকিম মিনি স্টেডিয়াম। এটির চারদিকে ইটের দেয়াল দিয়ে ঘেরা। স্টেডিয়ামের প্রবেশপথে লোহার গেট, মাঠে টিনশেড ও একপাশে বসার মিনি গ্যালারিও তৈরি করা হয়েছে। তার পাশেই চায়না কোম্পানির কাছে ২ দশমিক ৭৫ একর জায়গা ১২ টাকা বর্গফুটে ভাড়া দিয়েছে তারা। তার পাশে নুরুল হুদা চৌধুরীর দখলে রয়েছে সাত একরের বিশাল জায়গা। চারদিকে টিন দিয়ে ঘেরা জায়গায় ১০০ থেকে দেড়শ কাভার্ডভ্যান ও এক্সক্যাভেটর রয়েছে। ডিপোর প্রবেশপথে কোনো সাইনবোর্ড না থাকলেও ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, হোলার অ্যাঙ্গেল দিয়ে বিশাল অফিস স্থাপনা তৈরির কাজ চলছে। আরেকটু সামনে তিনটি বড় আরমানের চিংড়ি ঘের। এভাবে কাট্টলী থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এলাকায় দখলদারদের একের পর এক বিশাল ইয়ার্ড ও ডিপোর দেখা মিলেছে।
চট্টগ্রামের সাগরপারের দক্ষিণ কাট্টলী এলাকায় পাউবোর দুই একর জায়গা ১৬ বছর ধরে দখল করে ১২টি আধাপাকা ঘর তৈরি করে এরশাদ উদ্দিন বছরে ১৫ লাখ টাকা ভাড়া নিচ্ছেন। তার পাশে গোলাপুর রহমানের দখলে আছে দুই একর জায়গা। কাভার্ডভ্যান ইয়ার্ড ভাড়া দিয়ে বছরে ৪৫ লাখ টাকা আয় করছেন তিনি। তাদের মতো দক্ষিণ কাট্টলীতে দশমিক ৪৯ একর জমি আকরাম সিদ্দিক চৌধুরীর এক্সক্যাভেটর ইয়ার্ড ভাড়া দিয়ে বছরে ১২ লাখ টাকা ভাড়া পাচ্ছেন।
হুমায়ুন কবির চৌধুরী দশমিক ৫০ একর দখল করে কাভার্ডভ্যান ইয়ার্ড, নুরুল হুদা চৌধুরী সাত একর দখল করে কাভার্ডভ্যান, মোস্তফা হাকিম ৪ একর জমি দখল করে মিনি স্টেডিয়াম ও ইয়ার্ড ব্যবসা– এভাবে আরাফাত হোসেন, মো.
সংশ্লিষ্টরা জানান, অভিযুক্ত সাবেক এমপি দিদারুল আলম ও চসিকের সাবেক প্যানেল মেয়র নিছার উদ্দিন আহম্মেদ মঞ্জু আত্মগোপনে রয়েছেন। তাদের একাধিকবার মোবাইল ফোনে কল দিলেও পাওয়া যায়নি।
দখলে থাকা আকরাম সিদ্দিক চৌধুরী
বলেন, এগুলো আমাদের পূর্বপুরুষদের জায়গা। পাউবো কিছু জায়গা অধিগ্রহণ করেছিল; কিন্তু আমরা সব টাকা পাইনি। দখলে থাকা সবই আমাদের জায়গা।
এসএ করপোরেশনের মো. মোশাররফ বলেন, এগুলো আমাদের জায়গা। এখানে কোনো সরকারি জায়গা নেই। আমার জায়গা আমি ভাড়া দিয়েছি। হাজি মো. শাহাজাহান বলেন, পাউবো বাঁধ করার জন্য আমাদের পূর্বপুরুষদের জমি অধিগ্রহণ করে। কিন্তু তারা বাঁধ না দেওয়ায় এমনিতে খালি পড়ে থাকা জমিতে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা করছি। খালি পড়ে থাকা জমি ব্যবহার দোষের কিছু না।
দখলদার গোলাপুর রহমান বলেন, আমাদের দুই একর জমি অধিগ্রহণ করলেও সরকার সেই জমিতে কোনো কাজ করেনি। তাই সেই জমি আমরা ব্যবহার করছি। এখানে দুই টাকা আয় করলে ক্ষতির কী আছে!
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র রহম ন ই একর জ আম দ র র দখল সরক র দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ
গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক নিন্দার মধ্যে, ইসরায়েলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রি আটকাতে মার্কিন সিনেটে তোলা একটি বিল পাস হতে ব্যর্থ হয়েছে।
ব্যর্থ হলেও, বুধবারের ভোটে দেখা গেছে, মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভেতরে ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরোধিতা জোরদার হয়ে উঠেছে।
আজ বৃহস্পতিবার কাতারভিত্তিক আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর প্রচেষ্টায় এবারের ভোটে উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক ডেমোক্র্যাট যোগ দিয়েছেন।
আরো পড়ুন:
ভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা
পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্নের ঘোষণা ট্রাম্পের
ইসরায়েলের কাছে ২০ হাজার স্বয়ংক্রিয় অ্যাসল্ট রাইফেল বিক্রি বন্ধ করার প্রস্তাবের পক্ষে ২৭ জন ডেমোক্র্যাট ভোট দিয়েছেন, আর ৬৭৫ মিলিয়ন ডলারের বোমার চালান বন্ধ করার পক্ষে ২৪ জন ভোট দিয়েছেন।
অন্যদিকে, ভোটদারকারী সব রিপাবলিকান সিনেটররা প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান হামলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রির দুটি চুক্তি আটকে দিতে প্রস্তাবগুলো সিনেটে আনেন ভার্মন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। তিনি প্রগতিশীল ঘরানার স্বতন্ত্র সিনেটর।
ভোটের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে স্যান্ডার্স বলেন, “ওয়াশিংটন ইসরায়েলের ‘বর্ণবাদী সরকার’কে এমন অস্ত্র সরবরাহ করা চালিয়ে যেতে পারে না, যা নিরীহ মানুষদের হত্যা করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।”
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে একজন ‘জঘন্য মিথ্যাবাদী’ হিসেবে উল্লেখ করে স্যান্ডার্স ‘এক্স’ পোস্টে আরো বলেন, “গাজায় শিশুরা না খেয়ে মারা যাচ্ছে।”
প্রথমবারের মতো স্যান্ডার্সের প্রস্তাবকে সমর্থনকারী আইন প্রণেতাদের মধ্যে, ওয়াশিংটন রাজ্যের সিনেটর প্যাটি মারে বলেছেন, প্রস্তাবগুলো ‘নিখুঁত’ না হলেও, তিনি গাজার নিষ্পাপ শিশুদের অব্যাহত দুর্ভোগকে সমর্থন করতে পারেন না।
মারে এক বিবৃতিতে বলেন, “ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও আমি প্রস্তাবের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিচ্ছি এই বার্তা দিতে: নেতানিয়াহু সরকার এই কৌশল চালিয়ে যেতে পারবে না।”
তিনি বলেন, “নেতানিয়াহু ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রতিটি পদক্ষেপে এই যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করেছেন। আমরা গাজায় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ প্রত্যক্ষ করছি- সীমান্তের ওপারে যখন প্রচুর পরিমাণে সাহায্য ও সরবরাহ পড়ে আছে, তখন শিশু এবং পরিবারগুলোর অনাহার বা রোগে মারা যাওয়া উচিত নয়।”
মার্কিন জনগণের মধ্যে গাজা যুদ্ধের বিরোধিতা ক্রমবর্ধমান হওয়ার পাশাপাশি ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন নিয়ে ব্যাপক আকারে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত গ্যালাপের একটি জরিপে দেখা গেছে, ৩২ শতাংশ আমেরিকান বলেছেন, তারা গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান সমর্থন করেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৪২ শতাংশ আমেরিকান ইসরায়েলি অভিযান সমর্থন করেছিলেন।
গ্যালাপের মতে, মাত্র ৮ শতাংশ ডেমোক্র্যাট বলেছেন যে তারা ইসরায়েলের অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, যেখানে ৭১ শতাংশ রিপাবলিকান জানিয়েছেন যে, তারা ইসরায়েলি পদক্ষেপকে সমর্থন দিয়েছেন।
ঢাকা/ফিরোজ