আ.লীগ থেকে বিএনপিতে আসা যুবককে কুপিয়ে হত্যা
Published: 12th, June 2025 GMT
রাজবাড়ীর কালুখালীতে চালককে হত্যা করে ইজিবাইক ছিনিয়ে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। যশোরের শার্শায় দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে হত্যা করেছে লিটন নামে এক বিএনপিকর্মীকে। মঙ্গলবার রাতে তারা হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।
গতকাল বুধবার সকালে কালুখালীর চাঁদপুর সেতুর নিচে চন্দনা নদীতে পাওয়া যায় চালক আসলাম প্রামাণিকের লাশ। তিনি পাশের পাংশা উপজেলার যশাই ইউনিয়নের চরলক্ষ্মীপুর গ্রামের পিয়ার আলী প্রামাণিকের ছেলে।
আসলামের ভাই সিদ্দিক প্রামাণিক জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সকালে ইজিবাইক নিয়ে বের হন তাঁর ভাই। রাতে বাড়ি না ফেরায় বেশ কয়েকবার ফোন নম্বরে কল দিয়ে বন্ধ পান। রাতেই তিনি আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের বাড়িতে খোঁজ নেন। বুধবার সকালে খবর পান, দৌলতদিয়া-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের চাঁদপুর সেতুর নিচে লাশ উদ্ধার হয়েছে। তারা গিয়ে সেটি আসলামের বলে শনাক্ত করেন।
সিদ্দিকের ধারণা, ইজিবাইক ছিনিয়ে নিতেই দুর্বৃত্তরা তাঁর ভাইকে হত্যা করেছে। তিনি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে হত্যাকারীদের শনাক্ত করে শাস্তির দাবি করেন।
কালুখালী থানার ওসি মুহাম্মদ জাহেদুর রহমান জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তাঁর ইজিবাইকের সন্ধান মেলেনি। দুর্বৃত্তরা তাঁকে শ্বাসরোধে অথবা নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে পানিতে ফেলে হত্যা করেছে বলে মনে করেন তিনি। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে মামলা হবে।
চা-পানের সময় কোপায় দুর্বৃত্তরা
যশোরের শার্শা উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে হত্যার শিকার হন লিটন (৩০)। মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে দুর্গাপুর বাজারের একটি দোকানে চা-পানের সময় তাঁকে কোপায় কয়েকজন দুর্বৃত্ত। লিটনকে উদ্ধার করে শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত লিটন দুর্গাপুর গ্রামের আজগার আলীর ছেলে। এলাকাবাসীর ভাষ্য, লক্ষণপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কামাল হোসেনের লাঠিয়াল হিসেবে পরিচিত ছিলেন লিটন। আওয়ামী লীগ শাসনামলে কামালের নেতৃত্বে নানা সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়েছেন তিনি। ৫ আগস্টের পর লিটন বিএনপি সমর্থক হয়ে ওঠেন। এমনকি এলাকায় চাঁদাবাজিসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করলেও শার্শা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান লিটন জানিয়েছেন, লিটন বিএনপির সক্রিয় কর্মী। তাঁর ভাষ্য, পূর্বশত্রুতার জেরে সেলিম ও রমজানসহ তিন-চারজন সন্ত্রাসী লিটনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। তিনি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।
যশোরের সহকারী পুলিশ সুপার (নাভারণ সার্কেল) নিশাত আল নাহিয়ান বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় লিটন বাজারে বসে চা খাচ্ছিল। এ সময় একই এলাকার সেলিম ও রমজান তাঁকে কোপায়। চিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। পরে তাঁকে উদ্ধার করে শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পাঠানো হয়। চিকিৎসক লিটনকে মৃত ঘোষণা করেন। পূর্বশত্রুতার জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড হয়েছে বলে তাদের ধারণা। জড়িত ব্যক্তিদের আটকে চেষ্টা চলছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: যশ র আওয় ম ল গ ব এনপ হত য দ র ব ত তর হত য ক ব এনপ উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য
দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।
আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।
লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।
আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।
কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।