রাজবাড়ীর কালুখালীতে চালককে হত্যা করে ইজিবাইক ছিনিয়ে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। যশোরের শার্শায় দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে হত্যা করেছে লিটন নামে এক বিএনপিকর্মীকে। মঙ্গলবার রাতে তারা হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। 

গতকাল বুধবার সকালে কালুখালীর চাঁদপুর সেতুর নিচে চন্দনা নদীতে পাওয়া যায় চালক আসলাম প্রামাণিকের লাশ। তিনি পাশের পাংশা উপজেলার যশাই ইউনিয়নের চরলক্ষ্মীপুর গ্রামের পিয়ার আলী প্রামাণিকের ছেলে।

আসলামের ভাই সিদ্দিক প্রামাণিক জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সকালে ইজিবাইক নিয়ে বের হন তাঁর ভাই। রাতে বাড়ি না ফেরায় বেশ কয়েকবার ফোন নম্বরে কল দিয়ে বন্ধ পান। রাতেই তিনি আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের বাড়িতে খোঁজ নেন। বুধবার সকালে খবর পান, দৌলতদিয়া-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের চাঁদপুর সেতুর নিচে লাশ উদ্ধার হয়েছে। তারা গিয়ে সেটি আসলামের বলে শনাক্ত করেন। 

সিদ্দিকের ধারণা, ইজিবাইক ছিনিয়ে নিতেই দুর্বৃত্তরা তাঁর ভাইকে হত্যা করেছে। তিনি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে হত্যাকারীদের শনাক্ত করে শাস্তির দাবি করেন। 

কালুখালী থানার ওসি মুহাম্মদ জাহেদুর রহমান জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তাঁর ইজিবাইকের সন্ধান মেলেনি। দুর্বৃত্তরা তাঁকে শ্বাসরোধে অথবা নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে পানিতে ফেলে হত্যা করেছে বলে মনে করেন তিনি। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে মামলা হবে। 

চা-পানের সময় কোপায় দুর্বৃত্তরা
যশোরের শার্শা উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে হত্যার শিকার হন লিটন (৩০)। মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে দুর্গাপুর বাজারের একটি দোকানে চা-পানের সময় তাঁকে কোপায় কয়েকজন দুর্বৃত্ত। লিটনকে উদ্ধার করে শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত লিটন দুর্গাপুর গ্রামের আজগার আলীর ছেলে। এলাকাবাসীর ভাষ্য, লক্ষণপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কামাল হোসেনের লাঠিয়াল হিসেবে পরিচিত ছিলেন লিটন। আওয়ামী লীগ শাসনামলে কামালের নেতৃত্বে নানা সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়েছেন তিনি। ৫ আগস্টের পর লিটন বিএনপি সমর্থক হয়ে ওঠেন। এমনকি এলাকায় চাঁদাবাজিসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে।

এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করলেও শার্শা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান লিটন জানিয়েছেন, লিটন বিএনপির সক্রিয় কর্মী। তাঁর ভাষ্য, পূর্বশত্রুতার জেরে সেলিম ও রমজানসহ তিন-চারজন সন্ত্রাসী লিটনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। তিনি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন। 

যশোরের সহকারী পুলিশ সুপার (নাভারণ সার্কেল) নিশাত আল নাহিয়ান বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় লিটন বাজারে বসে চা খাচ্ছিল। এ সময় একই এলাকার সেলিম ও রমজান তাঁকে কোপায়। চিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। পরে তাঁকে উদ্ধার করে শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পাঠানো হয়। চিকিৎসক লিটনকে মৃত ঘোষণা করেন। পূর্বশত্রুতার জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড হয়েছে বলে তাদের ধারণা। জড়িত ব্যক্তিদের আটকে চেষ্টা চলছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: যশ র আওয় ম ল গ ব এনপ হত য দ র ব ত তর হত য ক ব এনপ উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ