সিরাজগঞ্জে স্ত্রীকে গলাকেটে হত্যার পর স্বামীর আত্মহত্যার চেষ্টা!
Published: 12th, June 2025 GMT
সিরাজগঞ্জের সলঙ্গায় রোজিনা খাতুন (২৫) নামে এক গৃহবধূকে গলা কেটে হত্যার পর স্বামীও নিজের গলা কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছে। স্বামী মোতালেব হোসেনকে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মোতালেব হোসেন বর্তমানে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) সকালে রায়গঞ্জ উপজেলার সলঙ্গা থানার এরান্দহ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত রোজিনা খাতুন সলঙ্গা থানার এরান্দহ গ্রামের আব্দুল আজিজের মেয়ে ও মোতালেবের স্ত্রী। পুলিশ নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে।
নিহত রোজিনার চাচাতো ভাই জাহিদ হাসান বলেন, ‘‘প্রেমের সম্পর্কে ৩ বছর আগে রোজিনা ও মোতালেব বিয়ে করেন। মোতালেবের পরিবার বিষয়টি মেনে না নেওয়ায় বিয়ের পর থেকে এরান্দহ গ্রামে শ্বশুর বাড়িতেই থাকতেন তারা। গত ৬ দিন আগে ফেনী জেলা থেকে রাজমিস্ত্রির কাজ শেষ করে বাড়িতে আসেন মোতালেব। পারিবারিক কলহের জের ধরে কথা কাটাকাটি হয় তাদের। পরে নিজের রুমে ঘুমিয়ে পড়ে তারা। রাত আড়াইটার দিকে পাশে ঘর থেকে রোজিনার ভাতিজা বায়জিদ কান্নাকাটির শব্দ পেয়ে জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখে গলাকাটা অবস্থায় রোজিনার রক্তাক্ত মরদেহ বিছানায় পড়ে আছে। তাদের ৮ মাসের ছোট বাচ্চাটি কান্নাকাটি করছে। পাশে তার ফুফা আহত অবস্থায় কাতরাচ্ছে। তার চিৎকারে আশেপাশের লোকজন এসে ঘরের দরজা খুলে রোজিনার গলা কাটা রক্তাক্ত মৃত অবস্থায় দেখতে পায়। আহত মোতালেব হোসেনকে সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে শহীদ জিয়াউর রহমনার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।’’
সলঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির বলেন, ‘‘গলাকাটা অবস্থায় এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে পারিবারিক কলহ থেকেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনার প্রকৃত কারণ জানতে তদন্ত চলছে।’’
ঢাকা/অদিত্য/টিপু
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স র জগঞ জ অবস থ য় হত য র মরদ হ সলঙ গ
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য
দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।
আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।
লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।
আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।
কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।