ঈদকেন্দ্রিক মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে, রোধ করার উপায় কী
Published: 12th, June 2025 GMT
ঈদ-পার্বণে বাড়ি ছুটে যাওয়া বাংলাদেশের মানুষের সাধারণ বৈশিষ্ট্য। আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে ঈদ করার জন্য সবাই বাড়ি ফেরে। চোখেমুখে খেলা করে অন্য রকম দ্যুতি! কী সেই অমোঘ টান, যার জন্য মানুষ হাজারো কষ্ট স্বীকার করে বাড়ি ফেরে? যানবাহনে কোথাও পা ফেলার জায়গা নেই, তবু কারও মধ্যে যেন এতটুকু বিরক্তি নেই। সবাই নিজে এবং চেনা-অচেনা মানুষদের সঙ্গে ফেরে আপন নিবাসে।
দেশে কোনো লম্বা ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে আসা-যাওয়ার পথে কিংবা বাড়িতে থাকার সময় নানা ধরনের দুর্ঘটনার খবর প্রতিনিয়ত শোনা যায়। বিশেষ করে সড়ক দুর্ঘটনা ও পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যায়। বাংলাদেশে প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনা ও পানিতে ডুবে মৃত্যুর সংখ্যা ঈদের সময় বেশি দেখা যায়। দেশে প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় যত মৃত্যু হয়, তার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সম্ভবত পানিতে ডুবে মৃত্যু।
১.
সড়ক দুর্ঘটনা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, বিশ্বে প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় ১৩ লাখ মানুষ প্রাণ হারান। বাংলাদেশে মারা যান ২৫ হাজারের কাছাকাছি। আর সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, সড়কে প্রতিদিন ৬৪ জন মানুষের প্রাণহানি ঘটছে। সে হিসাবে, প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় ২৩ হাজার ৩৬০ জন মানুষের প্রাণহানি হচ্ছে। ১৮৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৮তম।
ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশে কোনো উৎসবকালে গৃহযাত্রা মানেই একধরনের অঘোষিত যুদ্ধ। রাস্তার দীর্ঘ যানজট, অসম্ভব ভিড়, চাপাচাপি, গাদাগাদি, ঠেলাঠেলি করে যানবাহনে জায়গা হাসিল করে তবেই স্বল্প পথও পাড়ি দিতে হয় দীর্ঘ সময়ে। ঈদ উদ্যাপনের জন্য মাত্র ৪ থেকে ৫ দিনে বিপুলসংখ্যক মানুষকে পরিবহনসেবা দেওয়ার মতো মানসম্পন্ন নিরাপদ গণপরিবহন দেশে নেই। ফলে মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহনে গন্তব্যে যাত্রা করেন এবং দুর্ঘটনার শিকার হন। পাশাপাশি দায়িত্বহীনতা ও অসচেতনতার কারণেও অনেক দুর্ঘটনা ঘটে।
এক হিসাবমতে, গত ঈদুল ফিতরে দেশের সড়ক–মহাসড়কে ৩১৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২২ জন নিহত ৮২৬ জন আহত হয়েছেন। একই সময়ে রেলপথে ২১টি দুর্ঘটনায় ২০ জন নিহত, ৮ জন আহত হয়েছেন। নৌপথে ৪টি দুর্ঘটনায় ১০ জন নিহত, ১ জন আহত ও ১ জন নিখোঁজ আছেন। সড়ক, রেল ও নৌপথে মোট ৩৪০টি দুর্ঘটনায় ৩৫২ জন নিহত ও ৮৩৫ জন আহত হয়েছেন।
বরাবরের মতো গত রোজার ঈদে দুর্ঘটনার শীর্ষে ছিল মোটরসাইকেল। ১৩৫টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৫১ জন নিহত, ১৫৫ জন আহত হয়েছেন, যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৪২ দশমিক ৮৫ শতাংশ, নিহতের ৪৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং আহতের ১৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ প্রায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে সড়ক দুর্ঘটনার মূলে রয়েছে লাইসেন্সবিহীন চালকের বেপরোয়া মনোভাব, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, রাস্তার অপ্রশস্ততা, সচেতনতার অভাব ও আইন প্রয়োগে উদাসীনতা থাকায় দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে।
সড়ক দুর্ঘটনার কারণকে প্রাথমিকভাবে বোঝার জন্য হেনরিক একটি তত্ত্ব দিয়েছেন, যা ডমিনো তত্ত্ব নামে সর্বাধিক পরিচিত। এ তত্ত্ব অনুযায়ী, দুর্ঘটনা কোনো ভাগ্যের গতানুগতিক বিষয় নয়; বরং ধারাবাহিক ঘটনা। এ তত্ত্ব প্রয়োগকারীদের দুর্ঘটনায় হস্তক্ষেপকারী বিষয়কে চিহ্নিত করাতে সহায়তা করে। এদিকে দুর্ঘটনার মানব উপাদান তত্ত্বে বলা হয়েছে, কোনো দুর্ঘটনার পেছনে ক্রমাগত নানা মানবীয় ক্রটি কাজ করে, যা দুর্ঘটনা ঘটায়; অর্থাৎ দুর্ঘটনা বাহ্যিক উপাদানের প্রভাবের ফল। যেমন রাস্তার ক্রটি, প্রতিকূল আবহাওয়া, চালকের মনোযোগের অভাব ইত্যাদি।
২. পানিতে ডুবে মৃত্যু
জনসংখ্যার অনুপাতে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি শিশু পানিতে ডুবে মারা যায় বাংলাদেশে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ১৮ হাজার মানুষ পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করেন এবং এক থেকে চার বছর বয়সী শিশু মৃত্যুর ঘটনার ৪৩ শতাংশই পানিতে ডোবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
ইউনিসেফের তথ্যানুযায়ী, প্রতিবছর বাংলাদেশে গড়ে ১৭ হাজার শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। এ মৃত্যুর সংখ্যা বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ, যা মোট শিশুমৃত্যুর ২৮ ভাগ। হিসাবমতে, গড়ে দিনে ৪০টি শিশু মারা যায় পানিতে ডুবে। আরও বলা হয়, প্রতিবছর ১ থেকে ১৭ বছর বয়সী কমপক্ষে ১৮ হাজার শিশু মারা যায় কেবল পানিতে ডুবে। আর মারা যাওয়া বেশির ভাগ শিশুর বয়স ১০ মাস থেকে দুই বছরের মধ্যে। আর ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের মৃত্যু হয় সাঁতার না জানার কারণে। এসব শিশু মূলত সচেতনতার অভাব, বয়স্কদের দ্বারা শিশু তত্ত্ববধানের অভাব এবং অবহেলাকে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে গণ্য করা হয়।
দেশে প্রতিবছর পানিতে ডুবে মৃত্যুর সংখ্যা বছরের বড় ছুটিগুলোতে বেশি দেখা যায়। বিশেষ করে ঈদের ছুটিতে শহরে থাকা অধিকাংশ মানুষই গ্রামের বাড়িতে যান। ছুটিতে গ্রামের পুকুরে বা নদীতে গোসল করতে গিয়ে অহরহ পানিতে ডুবে মৃত্যুর দুর্ঘটনা ঘটে। এ দুর্ঘটনাগুলোতে শিশুদের সংখ্যা থাকে সবচেয়ে বেশি।
গত বছর দুই ঈদে ১৩৯ জন পানিতে ডুবে মারা যান। শূন্য থেকে ১৮ বছর বয়সীদের মৃত্যুহার সর্বোচ্চ, যার মধ্যে ৬ থেকে ১০ এবং শূন্য থেকে ৫ বছরের শিশুর হার বেশি। আবার ১৯ থেকে ৬০ বছর বয়সী পুরুষদের মধ্যে মৃতের সংখ্যা ১৪ এবং ৬০ বছরের ওপরে পানিতে ডুবে ১ জন মারা যান। চলতি বছর ২৬ মার্চ থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত ঈদুল ফিতরের ছুটিতে; অর্থাৎ ১২ দিনে মোট ৪৯ জন পানিতে ডুবে মারা গেছেন। গড়ে প্রতিদিনই চারজন পানিতে ডুবে মারা গেছেন। এর মধ্যে শিশু ৪৭ জন (ছেলেশিশু ৩০ এবং মেয়েশিশু ১৭ জন)।
গণমাধ্যম উন্নয়ন ও যোগাযোগবিষয়ক প্রতিষ্ঠান সমষ্টি। সংগঠনটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত পানিতে ডুবে মৃত্যুর তথ্য-উপাত্ত সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে। সংগঠনটির হিসাবে, ২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এই তিন বছরে পানিতে ডুবে ৩ হাজার ২৮৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের ৮৭ শতাংশই শিশু। তবে বাস্তবে এ সংখ্যা অনেক বেশি।
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ হওয়ায় পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু বেশি। বছরে যে সময়গুলোতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে, সে সময়ে এমন মৃত্যুর ঘটনা বেড়ে যায়। এর মধ্যে পানিতে ডোবার ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিবারের লোকজনের ব্যস্ততার সময় তাঁরা শিশুদের প্রতি অমনোযোগী হয়ে পড়লে এসব দুর্ঘটনা ঘটে। শিশুরা বাড়ির উঠানে খেলা করার সময় পরিবারের লোকজনের অগোচরে বাড়ির পাশে থাকা পুকুরের পানিতে পড়ে যায়। তারা বলছে, বসতবাড়ির আশপাশে অরক্ষিতভাবে ডোবা বা পুকুর থাকার কারণে শিশুরা খুব সহজেই পানিতে পড়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে এবং ডোবা বা পুকুর চারপাশে ঘের দিয়ে দিলে দুর্ঘটনা কমে আসবে।
পানিতে ডুবে মৃত্যু একটি বৈশ্বিক স্বাস্থ্যগত বিষয়। জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার আমন্ত্রণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্বব্যাপী পানিতে ডুবে মৃত্যু বিষয়ে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালনে সম্মত হয়েছে।
একই সঙ্গে ২০২৩ সাল থেকে প্রতিবছর ২৫ জুলাই বিশ্ব পানিতে ডুবে মৃত্যু পরিহার দিবস পালনের ঘোষণা দিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জনস্বাস্থ্য কর্মসূচির আওতায় পানিতে ডুবে মৃত্যু পরিহার বিষয়ে জনসচেতনতা কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। পানিতে ডুবে মৃত্যু পরিহারযোগ্য। কিন্তু এমন মৃত্যু পরিহারে প্রতিরোধমূলক কর্মসূচি বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশে অপেক্ষাকৃত কম।
বাংলাদেশ সরকার ২০১১ সালের স্বাস্থ্যনীতিতে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুকে একটি জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে। শিশুর নিরাপত্তায় পাইলট প্রকল্পে পানিতে ডুবে মৃত্যু বিবেচনা করলেও সরকার কর্তৃক বাস্তবায়িত প্রকল্প এখনো সীমিত। এদিকে ডিজাস্টার অ্যাকশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (দাদু) পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু নিবারণে বৈজ্ঞানিক গবেষণা, জনসচেতনতা, মানুষের সক্ষমতা বৃদ্ধি, সাঁতার প্রশিক্ষণ, জলাধার থেকে সুরক্ষা কৌশল শেখানো, অনিরাপদ জলাধারে বেষ্টনী প্রদান এবং কমিউনিটি ডে–কেয়ার স্থাপনে কাজ করছে। মোটকথা, পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু নিবারণে সরকারি ছাড়াও এনজিও, কমিউনিটি অর্গানাইজেশন ও বেসরকারি খাতের কার্যক্রম এখনো সীমিত। পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু নিবারণ কৌশল বাস্তবায়নে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার পাশাপাশি সমাজের সব স্তরের জনগণের অংশগ্রহণ ও অবদান জরুরি।
খ. ম. রেজাউল করিম সহযোগী অধ্যাপক ও প্রধান, সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজ, যশোর।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সড়ক দ র ঘটন য় দ র ঘটন র বছর বয়স পর হ র তত ত ব র জন য র সড়ক র বয়স সরক র বছর র বছর ব র সময়
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য
দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।
আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।
লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।
আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।
কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।