মিরাজ অধিনায়ক হওয়ায় খুলনায় আনন্দ-উচ্ছ্বাস
Published: 13th, June 2025 GMT
‘আমাদের গর্ব, মিরাজ মিরাজ’, ‘ক্যাপ্টেন মিরাজ লং লিভ’- এভাবে মিছিলে কারো হাতে মিরাজের ছবি, কারো হাতে প্ল্যাকার্ড। বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেট দলের নতুন অধিনায়ক হিসেবে মেহেদী হাসান মিরাজের নাম ঘোষণার পর তার নিজ জেলা খুলনায় উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সিদ্ধান্ত প্রকাশের পর বৃহস্পতিবার (১২ জুন) রাতে মিরাজের বাড়ির এলাকা খুলনার খালিশপুরে শুরু হয় আনন্দ-উচ্ছ্বাস। এলাকাবাসী তাৎক্ষণিক আনন্দ শোভাযাত্রা বের করেন।
খালিশপুরের কাশিপুর ক্রিকেট একাডেমি থেকে মিরাজের ক্রিকেট-জীবনের যাত্রা শুরু সেখান থেকেই আনন্দ র্যালির আয়োজন করা হয়। র্যালিটি একাডেমি থেকে শুরু হয়ে খালিশপুর এলাকার প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। র্যালিতে অংশ নেন স্থানীয় তরুণ ক্রিকেটার, ক্রীড়াপ্রেমী, এলাকাবাসী এবং নানা বয়সী ভক্ত-সমর্থকরা।
র্যালিজুড়ে স্লোগান ছিল, ‘আমাদের গর্ব, মিরাজ মিরাজ’, ‘ক্যাপ্টেন মিরাজ লং লিভ’। কারও হাতে মিরাজের ছবি, কেউ হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। পরে স্থানীয়রা একে অন্যকে মিষ্টিমুখ করিয়ে মিরাজের অধিনায়কত্বের খুশি ভাগাভাগি করেন।
মিরাজের শৈশবের কোচ আল মাহমুদ বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক হিসেবে মিরাজ একদম যোগ্য একজন ক্রিকেটার। বয়স, অভিজ্ঞতা, ক্রিকেট বোধ সব মিলিয়ে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ওয়ানডে দল নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।’
খালিশপুরের স্থানীয় ক্রিকেটার সজল বলেন, ‘মিরাজ আমাদের খুলনার অহংকার। সে শুধু মাঠেই নয়, মাঠের বাইরেও হাজার তরুণের প্রেরণা। সে অধিনায়ক হওয়ায় এখানকার ক্ষুদে ক্রিকেটাররা আরও অনুপ্রাণিত হবে। আমরা বিশ্বাস করি, খুলনা থেকে আরও মিরাজ তৈরি হবে।’
২০১৬ সালে জাতীয় দলে অভিষেকের পর থেকে জাতীয় দলে নিয়মিত মিরাজ। ধারাবাহিক পারফরম্যান্সে এ অলরাউন্ডার এরই মধ্যে বাংলাদেশ ক্রিকেটের নির্ভরতার প্রতীক হয়ে উঠেছেন। নতুন দায়িত্বের শুরুতে মিরাজের প্রতি খুলনাবাসীর এমন ভালোবাসা শুধু তার অর্জনের স্বীকৃতিই নয়, বরং দেশের ক্রিকেট ভবিষ্যতেরও আশাবাদের এক প্রতিচ্ছবি।
ঢাকা/নুরুজ্জামান/টিপু
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য
দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।
আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।
লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।
আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।
কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।