ঈদুল আজহা উপলক্ষে দীর্ঘ ১০ দিনের ছুটি পেয়েছিলেন সরকারি চাকরিজীবীরা। বেসরকারি চাকরিজীবীসহ অন্যান্য পেশাজীবীরাও তুলনামূলক বেশি দিন ছুটি পেয়েছেন এবার। দেখতে দেখতে শেষ হয়ে এলো সে ছুটি। ইতোমধ্যে অনেক অফিস ও প্রতিষ্ঠানে কর্মব্যস্ততা শুরু হয়েছে। তাই, ঈদ উদযাপন শেষে জীবিকার তাগিদে ঢাকায় ফিরতে হচ্ছে কর্মজীবী মানুষদের।

দীর্ঘ ছুটির শেষদিকে শুক্রবার (১৩ জুন) সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন প্রবেশপথে মানুষের ঢল নেমেছে। গুলিস্তান, গাবতলী, ফুলবাড়িয়া, সায়েদাবাদ, ধোলাইপাড় ও রায়েরবাগ এলাকায় দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা মানুষদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। কাপড়ের ব্যাগ ও কোরবানির মাংস হাতে ঢাকায় ফিরছেন চাকরিজীবী, শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।

গুলিস্তানে দেখা গেছে, শত শত মানুষ নামছেন বাস ও মাইক্রোবাস থেকে। তার পর রিকশা, অটোরিকশা বা লোকাল বাসে করে যাচ্ছেন নিজ নিজ গন্তব্যে। 

বাংলাদেশ সচিবালয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ে চাকরি করেন আমানুর রহমান। তিনি রাইজিংবিডি ডটকমের এ প্রতিবেদককে বলেন, গ্রামে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করার আনন্দের তুলনা হয় না। কিন্তু, ঢাকায় ফিরতেই হচ্ছে, কাজ তো থেমে থাকে না। বাসে সিট পেতে কষ্ট হয়েছে। ভাড়াও আগের চেয়ে অনেক বেশি।

মাদারীপুর থেকে ঢাকায় আসা আসমা খাতুন বলেন, “আমার স্কুল শুরু হবে রবিবার (১৫ জুন)। তাই, ভিড় ঠেলে ফিরতে হলো। বাসে প্রচণ্ড ভিড় ছিল। ৩০০ টাকার বাসভাড়া ৫০০ টাকা দিতে হয়েছে।”

বাংলাদেশ বাস মালিক সমিতির সদস্য তোফায়েল হোসেন বলেন, প্রতি ঈদের আগে-পরে বাসে মানুষের চাপ বাড়ে। এবার ছুটি লম্বা হওয়ায় অনেকেই দেরিতে ফিরছেন। অতিরিক্ত বাস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, যাত্রীসংখ্যা এত বেশি যে সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

খুলনা ও বরিশাল বিভাগের যাত্রীরা পদ্মা সেতু ও এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে রায়েরবাগ ও ধোলাইপাড় এলাকা দিয়ে রাজধানীতে প্রবেশ করছেন। সকাল থেকে এসব এলাকায় যাত্রীদের বাস থেকে নেমে রিকশা বা অটোরিকশায় করে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চল থেকে আসা যাত্রীরা সায়েদাবাদ এলাকা দিয়ে রাজধানীতে ফিরছেন।

ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের ক্ষোভ
অটোরিকশায় অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ করেছেন অনেক যাত্রী। সুজাতা নামের এক নারী জানান, ফুলবাড়িয়া থেকে শনিরআখড়ার ভাড়া ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, আজ দিতে হয়েছে ৬০০ টাকা। আমি খুলনা থেকে এসেছি। বাসেও দ্বিগুণ ভাড়া দিতে হয়েছে।

সিএনজি অটোরিকশার চালক মো.

কাদের বলেন, সকাল থেকেই যাত্রীর চাপ বেশি। অনেকেই দূরে যেতে চান। ফেরার পথে যাত্রী পাই না বলে ভাড়াও একটু বেশি নিতে হচ্ছে।

টার্মিনালে ভিড়, নিরাপত্তা ভালো
গুলিস্তান, ফুলবাড়িয়া ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকায় যাত্রীদের ভিড় স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। ট্রাফিক পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা টার্মিনালগুলোতে তৎপর আছেন।

দালাল বা পকেটমারদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে যাত্রীদের পরামর্শ দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের যাত্রাবাড়ী অঞ্চলের এসআই মনির হোসেন বলেন, ফিরতি যাত্রার চাপ সকাল থেকেই বাড়ছে। এখনো বড় কোনো যানজট হয়নি। তবে, ধোলাইপাড়, রায়েরবাগ ও পোস্তগোলায় যাত্রীরা হঠাৎ সড়কে নামায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়েছে। আমরা সতর্ক অবস্থানে আছি।

চাপ থাকবে আরো দুই দিন
সরকারি চাকরিজীবীদের ছুটি শেষ হচ্ছে শনিবার (১৪ জুন)। ফলে, আজ ও আগামীকাল ঢাকামুখী মানুষের চাপ আরো বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, আগামী দুই দিনের পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হবে।

ঢাকা/এএএম/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চ কর জ ব

এছাড়াও পড়ুন:

অজ্ঞাতনামা লাশ আর কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে, শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় জনমনে সন্দেহ: এমএসএফ

চলতি অক্টোবর মাসে দেশে অজ্ঞাতনামা লাশ এবং কারা হেফাজতে মৃত্যু সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় বেশ খানিকটা বেড়েছে। এ তথ্য তুলে ধরেছে মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। প্রতিষ্ঠানটির অক্টোবর মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এমএসএফ বলেছে, এসব ঘটনায় জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ দুই ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জনমনে সন্দেহ আছে।

এমএসএফ প্রতি মাসে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে। আজ শুক্রবার অক্টোবর মাসের প্রতিবেদন গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং নিজস্ব তথ্যানুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে এমএসএফ মানবাধিকার প্রতিবেদন তৈরি করে।

বেড়েছে অজ্ঞাতনামা লাশ

এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্টোবর মাসে মোট ৬৬টি অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে। এটি অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়; বরং নাগরিক জীবনে নিরাপত্তাহীনতার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত মাসে (সেপ্টেম্বর) এর সংখ্যা ছিল ৫২। এসব অজ্ঞাতনামা লাশের বেশির ভাগই নদী বা ডোবায় ভাসমান, মহাসড়ক বা সড়কের পাশে, সেতুর নিচে, রেললাইনের পাশে, ফসলি জমিতে ও পরিত্যক্ত স্থানে পাওয়া যায়। অল্পসংখ্যক মৃতদেহ গলাকাটা, বস্তাবন্দী ও রক্তাক্ত বা শরীরে আঘাতের চিহ্নসংবলিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।

এমএসএফ বলেছে, অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের ঘটনা বেড়েই চলেছে এবং তা জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় উদ্ধারে অপারগতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১টি শিশু, ১ কিশোর, ১১ জন নারী ও ৫৩ জন পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭ বছর বয়সী শিশু; ১৫ বছর বয়সী কিশোর; ২০ থেকে ৩০ বয়সী ১৫ জন পুরুষ ও ২ জন নারী; ৩১ থেকে ৪০ বয়সী ১৯ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী; ৪১ থেকে ৫০ বয়সী ১ নারী ও ৫ জন পুরুষ এবং ৫০ বছর বয়সের বেশি ১১ জন পুরুষ ও ১ নারী রয়েছেন। এর মধ্যে অজ্ঞাতনামা তিনজনের বয়স শনাক্ত করা যায়নি।

এমএসএফ বলেছে, শুধু অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না; বরং পরিচয় জানার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। পরিচয় উদ্ধার করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য।

কারা হেফাজতে মৃত্যু বাড়ছেই

এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে কারা হেফাজতে মোট ১৩ জন বন্দীর মৃত্যু হয়েছে। গত মাসে এ সংখ্যা ছিল মোট ৮। এ মাসে ছয়জন কয়েদি ও সাতজন হাজতির মৃত্যু হয়েছে।

কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চারজন কয়েদি ও দুজন হাজতি, গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে একজন কয়েদি ও শেরপুর জেলা কারাগারে একজন কয়েদি মারা যান। এ ছাড়া খুলনা জেলা কারাগারে, টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে, চট্টগ্রাম জেলা কারাগারে, সিরাজগঞ্জ কারাগারে ও মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে একজন করে হাজতি বন্দী মারা যান। সব বন্দীর মৃত্যু হয় কারাগারের বাইরে হাসপাতালে।

এমএসএফের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কারা হেফাজতে মৃত্যু এবং অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের সংখ্যা বৃদ্ধি মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতির চিত্র তুলে ধরে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই লাশ উদ্ধার করেই ক্ষান্ত হচ্ছে। কিন্তু এসব লাশ উদ্ধার করে তার পরিচয় শনাক্ত করা এবং সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত করে মৃত্যুর কারণ উদ্‌ঘাটন করাই শুধু নয়, এসব লাশ আত্মীয়-পরিজনের কাছে পৌঁছে দেওয়া এসব বাহিনীর কাজ। কিন্তু একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা করা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আর কোনো কাজ নেই।

সাইদুর রহমান বলেন, অজ্ঞাতনামা লাশের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং হেফাজতে মৃত্যু বৃদ্ধি জনমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করে।

গণপিটুনিতে হত্যা চলছেই, বেড়েছে রাজনৈতিক সহিংসতা

অক্টোবর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার শিকার হয়েছেন ৫৪৯ জন। এর মধ্যে ২ জন নিহত এবং ৫৪৭ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে চারজন গুলিবিদ্ধ এবং নিহত ব্যক্তিরা বিএনপির কর্মী–সমর্থক। সেপ্টেম্বর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৩৮টি ঘটনা ঘটেছিল।

সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার মধ্যে ১১টি ঘটনায় রাজনৈতিক বিরোধ ও সহিংসতাকে কেন্দ্র করে পার্টি অফিস, বসতবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নিকাণ্ড এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

অক্টোবর মাসে মোট গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে ৪৪টি। আগের মাসে এ ঘটনা ঘটেছিল ৪৩টি। এ মাসে গণপিটুনির শিকার হয়ে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ১২। আগের মাসে নিহত হয়েছিলেন ২৪ জন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মানবাধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবতা ভিন্ন
  • প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
  • প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ, নির্বাচন প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা
  • ‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’ তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কঠিন: সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা
  • গণভোট নিয়ে উত্তাপ নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না: প্রেস সচিব
  • অজ্ঞাতনামা লাশ আর কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে, শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় জনমনে সন্দেহ: এমএসএফ
  • কথার আগে গুলি চালায় ‘কাকন বাহিনী’, দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পদ্মার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল