বিশ্বের সব দূতাবাস বন্ধ করবে ইসরায়েল
Published: 13th, June 2025 GMT
সাম্প্রতিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বের সব কূটনৈতিক মিশন বন্ধ করবে ইসরায়েল। ইতোমধ্যে বার্লিনের ইসরায়েলি দূতাবাস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে কতদিন মিশনগুলো বন্ধ থাকবে, তা জানানো হয়নি।
আজ শুক্রবার বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুইডেনের ইসরায়েলি দূতাবাস জানিয়েছে, সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বজুড়ে তাদের কূটনৈতিক মিশন বন্ধ করবে ইসরায়েল এবং কোনো কনস্যুলার পরিষেবা প্রদান করা হবে না বলে জানানো হয়।
আজ শুক্রবার ভোরে ইরানে পাঁচ ধাপে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। অজ্ঞাত এক সামরিক কমকর্তা টাইমস অব ইসরায়েলকে জানিয়েছেন, ইরানে শত শত হামলা চালানো হয়েছে এবং অন্তত আটটি স্থানে (শহরে) লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা হয়েছে।
এই হামলায় ইরানের অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নিহত হন। দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, আজ শুক্রবার ভোররাতে ইরানের রাজধানী তেহরানসহ একাধিক স্থানে হামলা চালায় ইসরায়েল। এ সময় তেহরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডের (আইআরজিসি) সদর দপ্তরে হামলা হয়।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় ইরানের ইসলামি রেভল্যুশনারি গার্ডের কমান্ডার ইন চিফ জেনারেল হোসাইন সালামি, খাতাম-আল আম্বিয়া কেন্দ্রীয় সদর দপ্তরের কমান্ডার গোলাম আলী রাশিদ ও সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি নিহত হন। এছাড়া ছয় বিজ্ঞানীকে হত্যা করা হয়। তারা হলেন- আব্দুল্লাহ মিনৌচেহর, আহমাদ রেজা জলফাঘারি, সায়েদ আমির হোসেন ফাকহি, মোতলাবিজাদেহ, ফারেদুন আব্বাসি এবং মোহাম্মদ মেহেদি তেহরানচি।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘অপারেশন রাইসিং লায়ন’ নামে ইরানে হামলা করে ইসরায়েল। ইসরায়েলের দাবি, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে ব্যর্থ করে দিতে এই হামলা করা হয়।
প্রাথমিকভাবে পাওয়া বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ইরানের ছয়টি স্থানে বিমান হামলা চালিয়েছে।
আর ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, গত কয়েক ঘণ্টায় অন্তত দুটি ধাপে হামলা চালানো হয়। তবে নিশ্চিত না হলেও এখন তৃতীয় দফার হামলা চলমান থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যেসব স্থানে হামলার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে- রাজধানী তেহরান ও এর আশপাশের সামরিক স্থাপনা; তেহরানের দক্ষিণে নাতানজ শহর, যেখানে ইরানের প্রধান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র অবস্থিত; তেহরানের উত্তর-পশ্চিমে তাবরিজ শহর, যেখানে একটি পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র ও দুটি সামরিক ঘাঁটির কাছে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে; তেহরানের দক্ষিণে ইস্পাহান শহর; তেহরানের দক্ষিণ-পশ্চিমে আরাক শহর ও পশ্চিমে কেরমানশাহ শহর।
ইরানের সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, তেহরানজুড়ে ৬ থেকে ৯টি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। হামলা হয়েছে আবাসিক ভবনেও।
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাসহ দেশটির বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলের প্রাণঘাতী এসব হামলার কঠোর জবাব দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে তেহরান।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সবজির দামে স্বস্তি, মজুরি বৃদ্ধির হার এখনো কম
দেশে অবশেষে মূল্যস্ফীতির হার কমতে শুরু করেছে। এটি নিয়ে এত দিন মানুষের মধ্যে যে হাঁসফাঁস ভাব ছিল, সেই অবস্থা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি মিলছে। বিশেষ করে এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে সবজির দাম কমে যাওয়ায় খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে স্বস্তি এসেছে।
খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার কমে আসায় মানুষ স্বস্তি পেয়েছে। কেননা দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের দৈনন্দিন ব্যয়ের বড় অংশ যায় খাদ্য কেনায়। কিন্তু সংকটের জায়গা হলো, মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানুষের মজুরি বাড়েনি। মূল্যস্ফীতির হার কমে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতি ও মজুরি বৃদ্ধির ব্যবধান কমে এসেছে, তাতেও মানুষের জীবনে স্বস্তি এসেছে।
গত জুন মাসে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ হয়েছে, যা বিগত ৩৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০২২ সালের জুলাইয়ে ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ মূল্যস্ফীতি ছিল। সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বলছে, গত জুন মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ। এই সময়ে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয় ৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ। জুনসহ টানা চার মাস দেশে মূল্যস্ফীতি কমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ইনফ্লেশন ডায়নামিকস ইন বাংলাদেশ: এপ্রিল-জুন ২০২৫’ (বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির গতি-প্রকৃতি: এপ্রিল-জুন ২০২৫) শীর্ষক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের চতুর্থ তথা শেষ প্রান্তিকে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতিতে খাদ্যপণ্যের গড় অবদান কিছুটা কমেছে। খাদ্য ও জ্বালানিবহির্ভূত পণ্যের অবদান বেড়েছে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে দেশের সামগ্রিক মূল্যস্ফীতিতে খাদ্য ও জ্বালানিবহির্ভূত পণ্যের গড় ভূমিকা ছিল ৪৯ দশমিক ৭ শতাংশ; যা আগের প্রান্তিকে ছিল ৪৫ দশমিক ৭ শতাংশ। এই সময়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতির গড় ভূমিকা কমেছে। এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে তা ছিল ৪৩ দশমিক ৩ শতাংশ, যা এর আগের প্রান্তিকে ছিল ৪৫ দশমিক ৩ শতাংশ। অন্যদিকে তৃতীয় ও চতুর্থ উভয় প্রান্তিকেই সার্বিক মূল্যস্ফীতিতে জ্বালানি পণ্যের গড় ভূমিকা ছিল ৯ শতাংশ।
বিদায়ী অর্থবছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে সবজির দাম কমায় তা খাদ্য মূল্যস্ফীতি হ্রাসে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এই প্রান্তিকে সামগ্রিক খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে সবজির ভূমিকা ছিল মাত্র ৪ দশমিক ১ শতাংশ, যদিও আগের (তৃতীয়) প্রান্তিকে সবজির ভূমিকা ছিল ১৪ দশমিক ১ শতাংশ। খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে শস্যজাতীয় খাদ্য। চতুর্থ প্রান্তিকে খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে শস্যজাতীয় খাদ্যের ভূমিকা ছিল ৪৩ দশমিক ৭ শতাংশ, যা গত কয়েক প্রান্তিকের মধ্যে সর্বোচ্চ। আমিষজাতীয় খাদ্যের ভূমিকা ছিল ৩৩ দশমিক ৯ শতাংশ। বাস্তবতা হলো, আমিষের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য হলেও চতুর্থ প্রান্তিকে আমিষের দাম কমে যাওয়ায় খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে আমিষের ভূমিকা কমেছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
খাদ্যপণ্যের মধ্যে সোনালি মুরগি, মাঝারি মানের চাল, সয়াবিন তেল ও মসুর ডালের দাম চতুর্থ প্রান্তিকের মাঝামাঝি সময়ে কমলেও শেষ দিকে আবার বেড়ে যায়। বিশেষ করে জুন মাসে সোনালি মুরগির দাম অনেকটা বেড়ে যায়। যদিও এপ্রিল ও মে মাসে সোনালি মুরগির দাম রেকর্ড পরিমাণে কমে যায়। এ ছাড়া আলু, কাঁচা মরিচ ও পেঁয়াজের দাম এই প্রান্তিকে অনেকটা স্থিতিশীল ছিল।
খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে দেখা যায়, এ ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করেছে কাপড় ও জুতার দাম। অর্থাৎ এই সময় এ দুটি পণ্যের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতিতে এই দুটি পণ্যের ভূমিকা ১৭ দশমিক ৮ শতাংশ। জ্বালানির ভূমিকা ছিল ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ। এ ছাড়া স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যোগাযোগ ও অন্যান্য পণ্যের ভূমিকা ছিল স্থিতিশীল।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মৌসুমি কারণ ও সরবরাহ ঠিক থাকার কারণে বাজারে সবজির দাম কমেছে। আমরা অনেক দিন ধরেই বলে আসছি, সরবরাহ ঠিক থাকলে বাজারে কারসাজির সুযোগ কম থাকে। সেটা হয়তো কিছুটা হয়েছে। তবে বর্ষাকাল শুরু হয়েছে। বন্যার সম্ভাবনা থেকেই যায়। ফলে এসব খেয়াল রেখে এবং কবে কখন কী সংকট হতে পারে, তা নিরূপণ করে নীতি নির্ধারণ করতে হবে।’
সামগ্রিকভাবে সেলিম রায়হান মনে করেন, কিছুটা স্বস্তি হয়তো এসেছে; কিন্তু এখনো সন্তুষ্ট হওয়ার অবকাশ নেই। এই ধারা টেকসই করতে নীতিগত সমন্বয় থাকতে হবে।
উদ্বেগের জায়গা মজুরিউদ্বেগের বিষয় হলো, তিন বছরের বেশি সময় ধরে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। এই সময়ে ধারাবাহিকভাবে মানুষের মজুরি বৃদ্ধির হার মূল্যস্ফীতির চেয়ে কম ছিল। ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে শুরু করে মূল্যস্ফীতির হার ধারাবাহিকভাবে মজুরি বৃদ্ধির হারকে ছাড়িয়ে গেছে। ফলে ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে এবং প্রকৃত আয় কমেছে। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে যখন মূল্যস্ফীতি কমতে শুরু করে, তখন থেকে এই ব্যবধান কমতে থাকে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের চতুর্থ প্রান্তিক এপ্রিল-জুনে মজুরি ও মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির ব্যবধান উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে, বিশেষ করে জুন মাসে। এই ঘাটতি কমে আসার পেছনে মূল কারণ ছিল বার্ষিক মূল্যস্ফীতির হার কমে আসা। চতুর্থ প্রান্তিকে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৯ শতাংশ। একই সময়ে মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল তুলনামূলক স্থিতিশীল—গড়ে ৮ দশমিক ২ শতাংশ।
ফলে পারিবারিক ক্রয়ক্ষমতা এখন কিছুটা বাড়ছে। মোমেন্টাম ইফেক্ট (ধরা যাক, মার্চ মাসে মূল্যস্ফীতি হঠাৎ বেড়ে যায়। সেই বাড়তি মূল্যস্ফীতির ধারা যদি এপ্রিলেও কিছুটা প্রভাব ফেলে, তবে তাকে মোমেন্টাম ইফেক্ট বলা হয়) বা গতিপ্রবাহের প্রভাবের কারণে মাঝেমধ্যে ওঠানামা দেখা গেলেও মজুরি বৃদ্ধির গতি পুরো প্রান্তিকজুড়েই তুলনামূলকভাবে মন্থর ছিল। এর অন্যতম কারণ হলো এত দিন মূল্যস্ফীতি ও মজুরি বৃদ্ধির মধ্যে উচ্চ ব্যবধান ছিল। অর্থাৎ আগে এই ব্যবধান বেশি থাকায় পরবর্তীকালে কমলেও তার প্রভাব তেমন একটা দেখা যায় না। পুরো প্রান্তিকে এর প্রভাব ছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের চতুর্থ প্রান্তিকে মজুরি বৃদ্ধিতে সামগ্রিকভাবে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী ধারা দেখা গেছে, যদিও প্রান্তিকের শেষ দিকে এসে তা সামান্য কমেছে। দেশের সব বিভাগেই আগের প্রান্তিকের তুলনায় সামান্য হারে মজুরি বেড়েছে। এর মধ্যে রংপুর বিভাগে মজুরি বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মজুরি বৃদ্ধির গতি এখনো কম এবং তার ইতিবাচক প্রভাব তুলনামূলকভাবে সীমিত। এই প্রেক্ষাপটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা ও স্থিতিশীল সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিবেশ বজায় রাখতে ধারাবাহিক নীতিগত তৎপরতা অপরিহার্য।