বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলায় গজারিয়া নদীতে নিঁখোজ দুই বোনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। এ ছাড়া বান্দরবানের আলীকদমে স্রোতে ভেসে যাওয়া পর্যটক ও মানিকগঞ্জের দৌলতপুরে যমুনায় নিখোঁজ অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূর লাশ পাওয়া গেছে।  
গজারিয়া নদীতে গত বুধবার দুপুরে গোসলে গিয়ে নিখোঁজ হয় জয়নগর ইউনিয়নের রফিকুল ইসলাম সরদারের মেয়ে রাইসা (১২) ও ঢাকার গেন্ডারিয়া এলাকার জসিম বেপারির মেয়ে জান্নাত (১৩)। তারা সম্পর্কে মামাতো-ফুফাতো বোন। দু’দিন পর গতকাল তাদের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। দুপুরে মৃতদেহ দুটি ভেসে উঠলে নৌপুলিশ উদ্ধার করে। রহমানের হাট খেয়াঘাট এলাকায় গোসলের সময় তারা স্রোতের টানে ভেসে যায়। ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল তল্লাশি চালিয়ে ব্যর্থ হয়। নানাবাড়িতে ঈদ উদযাপনের জন্য পরিবারের সঙ্গে জান্নাত জয়নগর এসেছিল।  
বান্দরবানের আলীকদমে উদ্ধার পর্যটকের নাম স্মৃতি ইসলাম। গতকাল দুপুরে উপজেলার তৈনখালের আমতলী নৌঘাট এলাকা থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগে বৃহস্পতিবার জুবাইরুল ইসলাম নামে এক পর্যটকের লাশ উদ্ধার হয়। এ ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন ট্যুর গ্রুপের সহসমন্বয়ক হাসান চৌধুরী। গতকাল সকালে তৈনখালের আমতলী নৌঘাট এলাকায় লাশটি ভাসতে দেখে পুলিশে খবর দেন স্থানীয়রা। পরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা লাশটি উদ্ধার করেন।  
৯ জুন ট্যুর এক্সপার্ট নামে ৩৩ জনের একটি পর্যটক দল থানচি-আলীকদমের মাঝখানে অবস্থিত ক্রিসতং পাহাড়ে বেড়াতে যায়। একটি পাহাড়ি ঝরনা পার হতে গিয়ে দুই পর্যটক ও একজন ট্যুর অপারেটর প্রবল স্রোতে ভেসে যান।  
অন্যদিকে মানিকগঞ্জের দৌলতপুরের ইসলামপুর এলাকায় যমুনা নদীতে নিখোঁজ অন্তঃসত্ত্বা বর্ষা খাতুনের মরদেহ গতকাল সকালে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এখনও শিশু লামিয়া খাতুনের সন্ধান মেলেনি। বর্ষা উপজেলার বাচামারা ইউনিয়নের পূর্বপাড়া এলাকার আব্দুল বয়াতীর মেয়ে। গতকাল সকালে ঘটনাস্থলের অদূরে ভাটিতে ভাসমান অবস্থায় বর্ষার মরদেহ দেখতে পান স্থানীয়রা। গত বুধবার দুপুরে বাচামারা ইউনিয়নের বাচামারা পূর্বপাড়া এলাকায় যমুনায় পাঁচজন গোসল করতে নেমে স্রোতে ভেসে যান। তিনজন জীবিত উদ্ধার হলেও বর্ষা খাতুন ও লামিয়া খাতুন নিখোঁজ ছিল।  
(তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যুরো ও প্রতিনিধিরা)

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র মরদ হ এল ক য় ইসল ম গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য

দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।

আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।

লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।

আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।

সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা।

কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ