প্রিয়জনের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার সময় উপহার দেওয়ার প্রথা বহু পুরোনো। প্রায় সব দেশে সব যুগে এই সামাজিক রীতি মানা হয়। নতুন করে সেটিই স্মরণ করালেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গতকাল শুক্রবার যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। তবে খালি হাতে যাননি। উপহার হিসেবে দুটি বই ও কলম নিয়ে গিয়েছিলেন।
গতকাল বাংলাদেশ সময় বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম তাঁর ফেসবুক পেজে এ উপহারের ছবি পোস্ট করেন। বইয়ের মধ্যে রয়েছে পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গের লেখা ‘নো ওয়ান ইজ টু স্মল টু মেক অ্যা ডিফারেন্স’ (কেউই এত ছোট নয় যে, পরিবর্তন আনতে পারবে না) এবং মোনা আরশি ও ক্যারেন ম্যাকার্থি উলফ সম্পাদিত ‘নেচার ম্যাটারস: ভাইটাল পোয়েমস ফ্রম দ্য গ্লোবাল মেজরিটি’ (প্রকৃতির গুরুত্ব: বিশ্বব্যাপী সংখ্যাগরিষ্ঠদের গুরুত্বপূর্ণ কবিতা)।
এর মধ্যে গ্রেটা থুনবার্গের বইটি বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং জলবায়ু সংকট সম্পর্কে লেখা। এটি মূলত বিশ্বের বিভিন্ন ফোরামে দেওয়া বক্তৃতার সংকলন। বইটির জন্য সে বছর ‘ওয়াটারস্টোনস বুকসেলার লিমিটেড’ তাঁকে বর্ষসেরা লেখক হিসেবে মনোনীত করে। সুইডিশ পরিবেশকর্মী গ্রেটা বিশ্বনেতাদের প্রতি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি তুলে ধরার জন্য পরিচিত। অ্যামাজনে এই বইটির দাম দেখা গেছে ৭ দশমিক ৩৫ পাউন্ড (প্রায় ১ হাজার ২০০ টাকা)।
অন্য বইটি নির্বাচিত কবিতা সংগ্রহ। এটি প্রকৃতি এবং পরিবেশবিষয়ক। বিভিন্ন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা। এ সংগ্রহে বিভিন্ন দেশ ও জাতির কবিদের লেখা কবিতা স্থান পেয়েছে। বইটি সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত মোনা আরশি ও ক্যারেন ম্যাককার্থি ব্রিটিশ লেখক। এই বইয়ের চিত্ররূপময় এবং বৈচিত্র্যময় কবিতাগুলোতে জলবায়ু সংকট, নৃতাত্ত্বিকতা, নগর প্রকৃতি, নির্জনতা, বিচ্ছিন্নতা, প্রতিবাদ, সহানুভূতি, আদিবাসী জ্ঞান এবং বিকল্প ইতিহাস উঠে এসেছে। প্রকাশক ফেবারের ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, এই বইটির দাম ১৪ দশমিক ৯৯ পাউন্ড (প্রায় ২ হাজার ৫০০ টাকা)।
এ ছাড়া উপহার দেওয়া কলমটি ওয়াটারম্যান হেমিস্ফিয়ার ব্র্যান্ডের। ফ্রান্সে তৈরি। রুচিশীল নকশা এবং মসৃণ লেখার অভিজ্ঞতার জন্য এই কলম বিখ্যাত। অ্যামাজনে কলমটির দাম দেখা গেছে ১৪৩ দশমিক ৭৪ ডলার (প্রায় ১৭ হাজার টাকা)। মডেল, রং ও বিক্রেতা ভেদে কলমটির দাম হেরফের হতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য
দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।
আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।
লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।
আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।
কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।