ইরানের পাল্টা হামলায় সুরক্ষিত এলাকায় ইসরায়েলের লাখ লাখ মানুষ
Published: 14th, June 2025 GMT
ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে ইসরায়েলি হামলার জবাবে রাতে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। ভোর হওয়ার ঠিক আগে ইসরায়েলে বেজে ওঠে সাইরেন। এর ফলে ইসরায়েলের লাখ লাখ মানুষ নিরাপদ আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে দেশটির জনগণকে আশ্রয়স্থল থেকে বেরিয়ে আসতে বলেছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র একটি বিবৃতিতে জানিয়েছেন, পরিস্থিতি পর্যালোচনার পর জনগণকে দেশের সব অঞ্চলে সুরক্ষিত এলাকা (আশ্রয়স্থল) থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে। তবে আশ্রয়স্থলের কাছাকাছি অবস্থান করতে হবে।
ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে কাজ করছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। ইসরায়েলিদের নিরাপদ এলাকায় চলে যেতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। খবর আল জাজিরার
এএফপির খবর বলছে, শনিবার ভোরে ইরান নতুন করে ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, ইরান থেকে ছোড়া বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র তাঁরা শনাক্ত করেছে।
ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে রক্ষা পেতে ইসরায়েলের অনেক অঞ্চলে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা চালু করা হয়। ইরান ইসরায়েলে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর ইসরায়েলের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করা হয়েছে। দেশটির সেনাবাহিনী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে এ কথা জানিয়েছে।
এক্সে দেওয়া পোস্টে তারা লিখেছে, ‘ইরানের ভূখণ্ড থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ার বিষয়টি শনাক্ত হওয়ার পর-ই বিভিন্ন অঞ্চলের ওয়ার্নিং সিস্টেম চালু করা হয়েছে।’ সেখানে আরও বলা হয়, ইসরায়েলি বিমান বাহিনী হামলার উৎস শনাক্ত করছে। প্রয়োজন অনুযায়ী উৎসকে লক্ষ্য করে প্রতিরোধমূলক অভিযানে নামছে।
তবে, ইসরায়েলের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম তথা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘শতভাগ দুর্ভেদ্য না’ উল্লেখ করে দেশটির সাধারণ নাগরিকদের উদ্দেশ্যে বলা হয়, তারা যেন সমস্ত নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলে।
ইসরায়েলের ইংরেজি পত্রিকা দ্য জেরুজালেম পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরানের হামলায় ইসরায়েলে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৩ জন আহত হয়েছেন। তেল আবিব ও জেরুসালেমে সতর্কতামূলক সাইরেনের শব্দ শোনা গেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। সোশ্যাল মিডিয়ায় ইসরায়েলের একটি আবাসিক রাস্তার ছবি দেখা গেছে যা ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বিধ্বস্ত হয়েছে। রাস্তাজুড়ে ধ্বংসস্তূপ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ইরানের পাল্টা হামলায় একজন নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েলের কেন্দ্রীয় উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চলে ইরানের রকেট হামলায় আহত একুশ জনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলের জরুরি সেবা বিভাগ ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম (এমডিএ)। এক্স-এ প্রকাশিত একটি পোস্টে, এমডিএ জানিয়েছে, আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর, অন্যদের অবস্থা হালকা থেকে মাঝারি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত সিএনএনকে জানিয়েছেন, ইসরায়েলে একজন নারী নিহত এবং ‘প্রায় ৪০ জন’ আহত হয়েছেন। নিউইয়র্ক টাইমসও ইসরায়েলি পুলিশের একজন মুখপাত্রের বরাত দিয়ে এই খবর জানিয়েছে। ওই পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শুক্রবার রাতে তেল আবিবের কাছে একটি শহরে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ঘটনাস্থলেই ওই নারীকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ইসর য় ল র দ শট র ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
রাগ নিয়ন্ত্রণে হাদিসের ৭ উপদেশ
রাগ মানুষের স্বাভাবিক একটি আবেগ, যা অনিয়ন্ত্রিত হলে মানুষের জীবনে বিধ্বংসী প্রভাব ফেলতে পারে। এটি মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি সামাজিক সম্পর্ককেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। তবে ইসলাম রাগ নিয়ন্ত্রণের জন্য সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছে, যা কোরআন ও হাদিসে বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে।
রাগ একটি মানসিক অবস্থা, যা অভ্যন্তরীণ উত্তেজনা ও প্রতিশোধের ইচ্ছা থেকে উৎপন্ন হয়। যখন এ উত্তেজনা তীব্র হয়, তখন ক্রোধের আগুনকে আরও উসকে দেয়। ফলে মানুষের মন ও বুদ্ধি নিয়ন্ত্রণ হারায় এবং শিষ্টাচার ও নির্দেশনার প্রতি উদাসীন হয়ে পড়ে।
ইমাম বাকির (আ.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই এই রাগ হলো শয়তানের প্রজ্বলিত একটি স্ফুলিঙ্গ, যা আদম সন্তানের হৃদয়ে জ্বলে ওঠে।’ (আল-কুলায়নী, আল-কাফি, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৩০৪, হাদিস: ১২)
নিশ্চয়ই এই রাগ হলো শয়তানের প্রজ্বলিত একটি স্ফুলিঙ্গ, যা আদম সন্তানের হৃদয়ে জ্বলে ওঠে।ইমাম বাকির (আ.), আল-কুলায়নী, আল-কাফিরাগকে অনেকে শক্তির প্রকাশ মনে করলেও এটি আসলে একটি দুর্বলতা। রাগের কারণে মানুষ অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে, যা তার জীবনে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ হয়।
রাগের ক্ষতিরাগ যদি নিয়ন্ত্রণ না করা যায়, তবে এটি ব্যক্তি ও সমাজের জন্য ধ্বংসাত্মক হয়ে ওঠে। মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর এর প্রভাব হলো উদ্বেগ, বিষণ্নতা, অপরাধবোধ, হতাশা ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতা। শারীরিকভাবেও এটি মাথাব্যথা, চোখের সমস্যা, পেটের গোলযোগ ও হৃদ্রোগের মতো সমস্যা সৃষ্টি করে।
সামাজিক পরিসরে রাগ সম্পর্কের অবনতি ঘটায়। রাগের বশে মানুষ এমন কথা বলে বা কাজ করে, যা তার সঙ্গে অন্যদের সম্পর্ক ছিন্ন করে। কখনো কখনো এটি হত্যা বা রক্তপাতের মতো চরম পরিণতির দিকে নিয়ে যায়।
সবচেয়ে বড় কথা, রাগের কারণে মানুষ আল্লাহর অসন্তুষ্টি অর্জন করে এবং সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়। এ ক্ষতি থেকে মুক্তি পেতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও রহমত প্রার্থনা করা অপরিহার্য।
শারীরিকভাবেও এটি মাথাব্যথা, চোখের সমস্যা, পেটের গোলযোগ ও হৃদ্রোগের মতো সমস্যা সৃষ্টি করে।রাগ নিয়ন্ত্রণ আল্লাহর সন্তুষ্টির উপায়রাগ একটি শক্তিশালী আবেগ, যা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। তবে কোরআন এ সমস্যার সমাধানে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘যারা সচ্ছলতায় ও অভাবে আল্লাহর পথে ব্যয় করে, যারা রাগ দমন করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে, নিশ্চয়ই আল্লাহ মুহসিনদের ভালোবাসেন।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩৩-১৩৪)
এ আয়াতে রাগ দমনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের কথা বলা হয়েছে।
কোরআনে নবীদের জীবন থেকে উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। নবী ইবরাহিম (আ.)-এর পিতা তাঁকে পাথর ছুড়ে মারার হুমকি দিলে তিনি শান্তভাবে বলেছিলেন, ‘তোমার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক।’ (সুরা মারয়াম, আয়াত: ৪৭)
কোরআনে আরও বলা হয়েছে, ‘তোমাদের যা দেওয়া হয়েছে, তা এই পার্থিব জীবনের ক্ষণস্থায়ী ভোগ। কিন্তু আল্লাহর কাছে যা আছে, তা উৎকৃষ্ট ও স্থায়ী। এটি তাদের জন্য যারা ঈমান আনে, তাদের রবের ওপর ভরসা করে, বড় পাপ ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত থাকে এবং রাগের সময় ক্ষমা করে।’ (সুরা শুরা, আয়াত ৩৬-৩৭)
এ আয়াতে রাগ নিয়ন্ত্রণকে সততার লক্ষণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যা জান্নাতের পথ প্রশস্ত করে।
আরও পড়ুনহজরত আলী (রা.)-এর ১০টি কালজয়ী উক্তি২৮ জুন ২০২৫হাদিসে রাগ নিয়ন্ত্রণের উপদেশইসলামে রাগকে শয়তানের কুমন্ত্রণা হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য মহানবী (সা.) বিভিন্ন উপায় বাতলে দিয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো—
যারা সচ্ছলতায় ও অভাবে আল্লাহর পথে ব্যয় করে, যারা রাগ দমন করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে, নিশ্চয়ই আল্লাহ মুহসিনদের ভালোবাসেন।সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩৩-১৩৪১. শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা: সুলায়মান ইবনে সারদ বলেন, ‘আমি নবীজি (সা.)-এর সঙ্গে বসেছিলাম। দুজন লোক একে অপরের বিরুদ্ধে গালমন্দ করছিল। তাদের একজনের মুখ লাল হয়ে গিয়েছিল এবং তার ঘাড়ের শিরা ফুলে উঠেছিল।
নবীজি (সা.) বললেন, ‘আমি এমন একটি কথা জানি, যদি সে তা বলে, তার এ অবস্থা দূর হয়ে যাবে। তা হলো, আউযু বিল্লাহি মিনাশ শাইতনির রজিম (আমি শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি)’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫০২)।
২. নীরব থাকা: নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ ক্রুদ্ধ হলে সে যেন নীরব থাকে।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ৬৯৩, ৪০২৭)
রাগের সময় কথা বললে অযৌক্তিক বা ক্ষতিকর কথা বেরিয়ে আসতে পারে, যা সম্পর্ক নষ্ট করে। তাই নীরব থাকা রাগ নিয়ন্ত্রণের একটি কার্যকর উপায়।
৩. শারীরিক অবস্থান পরিবর্তন: নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ ক্রুদ্ধ হলে যদি সে দাঁড়িয়ে থাকে, তবে সে যেন বসে পড়ে। তাতে তার রাগ দূর না হলে সে যেন শুয়ে পড়ে।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৪৭৬৪)
আবু জর (রা.) রাগের সময় এ নির্দেশ পালন করেছিলেন এবং শান্ত হয়েছিলেন।
৪. নবীর (সা.) পরামর্শ অনুসরণ: একজন সাহাবি নবীজি (সা.)-এর কাছে পরামর্শ চাইলে তিনি বারবার বলেছিলেন, ‘ক্রুদ্ধ হয়ো না।’ (সহিহ বুখারি, ফাতহুল বারী, ১০/৪৫৬)
৫. জান্নাতের প্রতিশ্রুতি স্মরণ: নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে, যখন তার রাগ প্রকাশ করার ক্ষমতা থাকে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার হৃদয়কে সন্তুষ্টিতে ভরিয়ে দেবেন।’ (তাবারানি, হাদিস: ১২/৪৫৩)।
৬. নবীর (সা.) আদর্শ অনুসরণ: মহানবী (সা.)-এর জীবনে রাগ নিয়ন্ত্রণের অসাধারণ উদাহরণ রয়েছে। একবার একজন বেদুইন তাঁর গলায় রুক্ষভাবে ধরে তাঁকে কিছু দেওয়ার দাবি করেন। নবীজি (সা.) শান্তভাবে হেসে তাঁকে কিছু দিতে আদেশ করেন। (ফাতহুল বারী, খণ্ড ১০, পৃষ্ঠা ৩৭৫)
৭. দোয়া: দোয়া মুমিনের শক্তিশালী অস্ত্র। নবীজি (সা.)-এর একটি দোয়া ছিল, ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে প্রকাশ্যে ও গোপনে তোমার ভয় করার তৌফিক প্রার্থনা করি এবং সন্তুষ্টি ও রাগের সময় সত্য কথা বলার তৌফিক চাই।’ (সহিহ আল-জামি, হাদিস নং ৩০৩৯)
তবে রাগ যদি আল্লাহর অধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে হয়, তবে তা প্রশংসনীয়। নবীজি (সা.) যখন দেখতেন যে কেউ আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করছে, তখন তিনি রাগ প্রকাশ করতেন, তবে তা ছিল নিয়ন্ত্রিত এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।
আরও পড়ুনরাগ নিয়ন্ত্রণ করতে যা করা যায়১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫