ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) বর্জ্য পরিবহনের পরী-১০২৪ নম্বরের কনটেইনার ক্যারিয়ার গাড়িটির চালক আনোয়ার হোসেন। এ গাড়ি দিয়ে মগবাজার, মিরপুর-১৪ ও আদাবর এসটিএস (অস্থায়ী বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র) এবং রাইনখোলা এসটিএস থেকে একটি করে মোট চারটি ট্রিপে বর্জ্য আমিনবাজার ল্যান্ডফিলে নেওয়া হয়।

প্রতিদিনের মতো রাতের বর্জ্য নেওয়ার কাজ শেষে বুধবার সকালে গাড়িটি নেওয়া হচ্ছিল ধলপুরে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পার্কিংয়ের জায়গায়। ধলপুর কমিউনিটি সেন্টার হয়ে পার্কিংয়ের জায়গায় পৌঁছানোর আগেই দুর্ঘটনায় পড়ে ওই গাড়ি। সড়কের পাশে বর্জ্য রাখার কনটেইনারে সজোরে ধাক্কা লেগে গাড়িটির সামনের অংশ দুমড়েমুচড়ে যায়। পরে আরেকটি গাড়ি এনে দুর্ঘটনাকবলিত গাড়িটিকে ধলপুরের পার্কিংয়ে নেওয়া হয়।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আনোয়ার চালক থেকে বনে যান পরিবহননেতা। তাঁর পদবি এখন ঢাকা উত্তর সিটির পরিবহন চালক শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক। এ পদের ক্ষমতাবলে তিনি দীর্ঘদিন ধরেই নিজে না চালিয়ে তাঁর নামে বরাদ্দ থাকা গাড়িটি বহিরাগত ওই সহকারীকে দিয়ে চালাতেন।

ঢাকা উত্তর সিটির একাধিক কর্মকর্তা ও চালক বলেছেন, দুর্ঘটনার পর থেকেই ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। কারণ, তখন গাড়িটি চালাচ্ছিল বহিরাগত একজন। কিশোর বয়সী ওই ছেলের নাম মো.

মারুফ। চালক আনোয়ার হোসেন ছেলেটিকে সহকারী হিসেবে কাজে নিয়েছেন। গাড়ি চালানোর কাজটি আনোয়ার ওই সহকারীকে দিয়ে করাতেন।

পরিবহননেতা হয়ে দাপট

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আনোয়ার চালক থেকে বনে যান পরিবহননেতা। তাঁর পদবি এখন ঢাকা উত্তর সিটির পরিবহন চালক শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক। এ পদের ক্ষমতাবলে তিনি দীর্ঘদিন ধরেই নিজে না চালিয়ে তাঁর নামে বরাদ্দ থাকা গাড়িটি বহিরাগত ওই সহকারীকে দিয়ে চালাতেন।

ঢাকা উত্তর সিটির আরও অনেক চালকের বিরুদ্ধে এভাবে বহিরাগত সহকারীকে দিয়ে গাড়ি চালানোর অভিযোগ রয়েছে। কয়েক দিন আগে গত শনিবার ঈদুল আজহার দিন সন্ধ্যায়ও বর্জ্য পরিবহনের কাজ ফেলে ঢাকা উত্তর সিটির বর্জ্য পরিবহনের গাড়ির একজন অপারেটর ও চারজন চালক প্রশাসকের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। এ নিয়ে গত সোমবার ‘বর্জ্য সরানোর কাজ ফেলে চালক-অপারেটররা ছিলেন সংবাদ সম্মেলনে’ শিরোনামে প্রথম আলো অনলাইনে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।

বৃহস্পতিবার দুপুরে কথা হয় দুর্ঘটনার সময় গাড়ি চালানো কিশোর মারুফের বাবা মোহাম্মদ আক্কাসের সঙ্গে। দুর্ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি সঠিকটা বলতে পারি না। সকালে গিয়ে দেখেছি (ধলপুর পার্কিংয়ে) গাড়িটা ঢাইকা রাখা হয়েছে।’ মারুফের অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মারুফরে অহনতরি দেখতাসি না। ওই যে ডরাইয়া কই গেছে, ওরে পাইতাসি না। ওয় কি ব্যথা পাইল, না কি—এ পর্যন্ত ওরেই পাই নাই।’

সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে দুর্ঘটনাকবলিত গাড়িটি

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ র ঘটন র সহক র ক বর জ য

এছাড়াও পড়ুন:

দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা

সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।

উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।

আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’

তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’

আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’

ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।

ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’

পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।

গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।

২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।

তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।

জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।

দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
  • ‘সাংস্কৃতিক জাগরণেই মুক্তি’
  • যদি ঠিক পথে থাকো, সময় তোমার পক্ষে কাজ করবে: এফ আর খান
  • বিবাহবিচ্ছেদ ও খোরপোষ নিয়ে ক্ষুদ্ধ মাহি
  • ফতুল্লায় দুই ট্রাকের মাঝে পড়ে যুবকের মৃত্যু
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ২০ মামলার আসামি নিহত, গুলিবিদ্ধ ৩
  • নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
  • তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের বিজয়ী সামিয়া
  • আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স
  • নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের ৩১ বিভাগকে প্রস্তুতির নির্দেশ ইসির