একদিকে ভারতীয় বিমান দুর্ঘটনায় ২৪২ যাত্রীর মৃত্যু, অন্যদিকে আকস্মিক ঘটনায় দুই সন্তানের পিতাকে হারিয়ে শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েছেন অভিনেত্রী কারিশমা কাপুর। একইভাবে ভাইয়ের মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ ‘টুয়েলভথ ফেল’ সিনেমার আলোচিত অভিনেতা বিক্রান্ত ম্যাসি। এ ঘটনায় উভয় বলিউড তারকার পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

আনন্দবাজার ও সংবাদ প্রতিদিনসহ ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে জানা গেছে, ব্রিটেনে পোলো  খেলার সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুরবণ করেছেন কারিশমা কাপুরের সাবেক স্বামী ও তাঁর দুই সন্তানের পিতা সঞ্জয় কাপুর। বৃহস্পতিবার লন্ডনের এক ক্লাবে পোলো খেলতে গিয়েছিলেন এই ভারতীয় শিল্পপতি। সেখানেই  ঘটে বিপত্তি। হঠাৎ একটা মৌমাছি তাঁর গলায় ভেতরে ঢুকে যায়। চেষ্টা করে সেটা বের করতে না পারায় এতটাই ঘাবড়ে যান যে, ভয়ে হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে মৃত্যু ঘটে তাঁর। এই আকস্মিক ঘটনায় চিকিৎসকের দ্বারস্থ হওয়ারও সুযোগ পাননি সঞ্জয়।

এদিকে তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই কারিশমার বাড়িতে ভিড় জমাতে শুরু করেন ছবিশিকারিরা। এদিন কাঁদো কাঁদো মুখে গাড়ি থেকে নামতে দেখা গেছে অভিনেত্রীকে। থমথমে মুখ নিয়ে কারিশমার বাড়িতে যেতে দেখা গেছে মালাইকা আরোরা, কারিনা কাপুর, সাইফ আলি খানসহ আরও কয়েকজন বলিউড তারকা ও অভিনেত্রীর আত্মীয়-স্বজনকে।

তারকাদের ভিড় সামলাতে এ দিন রাত থেকেই কারিশমার বাড়ির সামনে রাখা হয়েছে পুলিশি প্রহরা। তবে সঞ্জয়ের মৃত্যুতে কারিশমার পক্ষ থেকে এখনও কোনো বিবৃতি আসেনি।

অন্যদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে আচমকাই বিমান দুর্ঘটনায় স্বজন হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে বলিউড অভিনেতা বিক্রান্ত ম্যাসির পরিবার। এদিন ভারতের আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়ার ড্রিমলাইনার ৭৮৭ বোয়িং বিধ্বস্তের ঘটনায় সেই বিমানের সহকারী পাইলটের দায়িত্বে থাকা বিক্রান্তের কাকাতো ভাই ক্লাইভ কুন্দরও মৃত্যু হয়েছে।

সে কথা উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিক্রান্ত লিখেছেন, ‘আহমেদাবাদের মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের পরিবার এবং প্রিয়জনের কথা ভেবে আমার মন দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে। আরও বেশি কষ্ট হচ্ছে, এই শোক আমার ব্যক্তিগত। এই দুর্ঘটনায় আমার কাকা ক্লিফোর্ড কুন্দের তাঁর ছেলে ক্লাইভ কুন্দেরকে হারিয়েছেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে যিনি ওই বিমানের সহকারী পাইলট ছিলেন। ঈশ্বর আমাদের সবাইকে শক্তি দিন।’

বিক্রান্তের এই শোকবার্তার পরই শোরগোল পড়ে গেছে সিনেদুনিয়ায়। একের পর এক শোকবার্তার ভিড় জমতে থাকে অভিনেতার সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডলে। সবাই ভেবেছিলেন, মৃত সহকারী পাইলট সম্ভবত বিক্রান্ত ম্যাসির তুতো ভাই। তবে শুক্রবার সকালেই ধোঁয়াশা পরিষ্কার করলেন ‘টুয়েলভথ ফেল’ অভিনেতা।

তিনি জানান, ওই বিমান দুর্ঘটনায় মৃত সহকারী পাইলট ক্লাইভ কুন্দেরের সঙ্গে আদতে তাঁর রক্তের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে ক্লাইভের সঙ্গে সম্পর্কটা আপন ভাইয়ের চেয়ে কোনোভাবেই কম নয়।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব ম ন দ র ঘটন য় র পর ব র প ইলট সহক র

এছাড়াও পড়ুন:

পরাবাস্তবতার আবেদন কি ফুরিয়েছে

অবচেতনের মানচিত্র ধরে এক অন্তহীন অভিযাত্রা কবি–সাহিত্যিকেরা যুগ যুগ ধরে করে আসছেন। সাহিত্যের দীর্ঘ যাত্রাপথে এমন কিছু বাঁক আসে, যা তার গতিপথকে চিরতরে বদলে দেয়। পরাবাস্তবতা বা সুররিয়ালিজম ছিল এমনই এক যুগান্তকারী আন্দোলন, যা কেবল শিল্পের আঙ্গিক নয়; বরং শিল্পীর বিশ্ববীক্ষা এবং আত্মবীক্ষণকে সম্পূর্ণ নতুন এক দর্শন দান করেছিল। এটি ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ। এর মূল লক্ষ্য ছিল মানব মনের সেই গভীরে প্রবেশ করা, যেখানে যুক্তির আলো পৌঁছায় না; সেই অবচেতনের অন্ধকার মহাসাগর থেকে তুলে আনা বিস্মৃত স্বপ্ন, অবদমিত ইচ্ছা আর আদিম প্রবৃত্তির মণি–মুক্তা। পরাবাস্তবতা তাই কেবল একটি শিল্পরীতি নয়, এটি চেতনার শৃঙ্খলমুক্তির এক দুঃসাহসী ইশতেহার।

১৯২৪ সালে ফরাসি কবি ও লেখক আঁদ্রে ব্রেটন তাঁর ‘পরাবাস্তবতার প্রথম ইশতেহার’ (ম্যানিফেস্টো অব সুররিয়ালিজম) প্রকাশের মাধ্যমে এই আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। ব্রেটনের সংজ্ঞায়, পরাবাস্তবতা হলো, ‘বিশুদ্ধ মানসিক স্বয়ংক্রিয়তা, যার মাধ্যমে মুখ বা লেখনী দিয়ে অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে চিন্তার আসল কার্যকারিতাকে প্রকাশ করার ইচ্ছা পোষণ করা হয়। এটি যুক্তির সমস্ত নিয়ন্ত্রণ থেকে এবং সকল প্রকার নান্দনিক ও নৈতিক উদ্দেশ্য থেকে বিযুক্ত চিন্তার এক শ্রুতলিখন।’

এই দর্শনের প্রধান পাথেয় ছিল ভিয়েনার মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের যুগান্তকারী মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব। ফ্রয়েড দেখিয়েছিলেন যে মানুষের সচেতন মনের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক বিশাল অবচেতন জগৎ, যা তার আচরণ, স্বপ্ন ও ব্যক্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। পরাবাস্তববাদীরা ফ্রয়েডের এই তত্ত্বকে লুফে নিয়েছিলেন। তাঁদের কাছে শিল্পসৃষ্টির উদ্দেশ্যই ছিল যুক্তির সেন্সরশিপকে ফাঁকি দিয়ে অবচেতন মনের এই লুকানো জগৎকে উন্মোচিত করা। তাঁরা চেয়েছিলেন, স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে একীভূত করে এক ‘পরম বাস্তবতা’ বা ‘সুররিয়ালিটি’ তৈরি করতে।

পরাবাস্তবতা ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ।

পরাবাস্তবতার পদযাত্রা প্যারিসের শৈল্পিক পরিমণ্ডল থেকে শুরু হলেও এর ঢেউ খুব দ্রুতই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আঁদ্রে ব্রেটন ছিলেন এই আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা, কিন্তু তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় সমবেত হয়েছিলেন বহু প্রতিভাবান স্রষ্টা, যাঁরা নিজ নিজ ভাষায় ও সংস্কৃতিতে পরাবাস্তবতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।

আঁদ্রে ব্রেটন (জন্ম: ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৬—মৃত্যু: ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬)

সম্পর্কিত নিবন্ধ