সুনামগঞ্জে ঘুমন্ত অবস্থায় আগুনে পুড়ে কিশোরের মৃত্যু
Published: 14th, June 2025 GMT
সুনামগঞ্জ সদরে ঘরের ভেতর ঘুমন্ত অবস্থায় আগুনে পুড়ে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। একই ঘটনায় ঘরে থাকা ১৪টি ছাগলও পুড়ে মারা গেছে। গতকাল শুক্রবার গভীর রাতে উপজেলার টুকেরঘাট (বাগানবাড়ি) গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত কিশোরের নাম সুন্দর আলী (১৫)। সে সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার চালবন গ্রামের গোলাপ মিয়ার ছেলে।
পুলিশ জানায়, যে বাড়িতে ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি একজন ফ্রান্সপ্রবাসীর। বাড়িটি দেখাশোনা করার জন্য দুজন থাকতেন। সুন্দর আলী গতকাল সেখানে কাজে যায়। পুকুরের পানি সেচ দেওয়ার জন্য একটি পাম্প নিয়ে গিয়েছিল সে। রাতে সে বাড়ির পুকুরপাড়ের একটি ঘরে ঘুমিয়েছিল। ওই ঘরে ছাগলও রাখা ছিল। দিবাগত রাত দুইটার দিকে ঘরে আগুন দেখে স্থানীয় লোকজন ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে আগুন নেভান এবং ঘরের ভেতর থেকে দগ্ধ হওয়া সুন্দর আলীর মৃতদেহ উদ্ধার করেন।
সুনামগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের টিম লিডার সোহেল রানা বলেন, ‘মরদেহটি খাটের ওপর পাওয়া গেছে। আমরা মরদেহটি উদ্ধার করে পুলিশে হস্তান্তর করেছি।’ তিনি বলেন, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে বলে তাঁদের ধারণা।
সুনামগঞ্জ সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) দীপক দাস বলেন, ঘরে আগুন লাগার সময় পাশের ঘরে থাকা দুই ব্যক্তি বের হয়ে যেতে পারলেও সুন্দর আলী বের হতে পারেনি। এতে তার মৃত্যু হয়েছে। আজ শনিবার দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য
দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।
আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।
লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।
আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।
কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।