স্কাউটদের উদ্যোগে নির্বিঘ্নে গন্তব্যে গেলেন ট্রেনযাত্রীরা
Published: 14th, June 2025 GMT
যাত্রীদের টিকিট দেখে তাদের আসন দেখিয়ে দিচ্ছিলেন কেউ। আবার ভিড় সামাল দিয়ে যাত্রীদের ট্রেনে উঠিয়ে দিচ্ছিলেন কয়েকজন। কারও কাঁধে বয়স্ক যাত্রীর লাগেজ। কারও হাতে ট্রেনের ‘ক’, ‘খ’, ‘গ’ লেখা বগির প্ল্যাকার্ড। গতকাল শনিবার ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন স্টেশনে একদল স্কাউট সদস্যকে এভাবেই যাত্রীর পাশে দাঁড়াতে দেখা যায়।
ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থলমুখী মানুষের ট্রেনযাত্রা সহজ করতে এবং ভিড় সামাল দিতে স্বেচ্ছাশ্রমে সেঞ্চুরী রেলওয়ে মুক্ত স্কাউট গ্রুপের ৩০ জন সদস্য ব্যতিক্রমী এ সেবা দিয়েছেন। এতে ঈদ শেষে যাত্রীদের দুর্ভোগ কিছুটা হলেও লাঘব হয়েছে।
স্কাউট সদস্যরা নারী ও বয়স্ক যাত্রীদের ট্রেনে উঠতে সহায়তা করেন। এ ছাড়া ওভারব্রিজ পার হতে গিয়ে যেসব যাত্রী দুর্ভোগে পড়েন, তাদের ব্যাগ-লাগেজ কাঁধে নিয়ে ট্রেনে উঠিয়ে দেন।
সিনিয়র টিটিই আবদুল আলিম বিশ্বাস মিঠু বলেন, ঈদের পর কর্মস্থলমুখী যাত্রীদের সামাল দিতে রেল কর্মচারীদের হিমশিম খেতে হয়। এমন সময়ে স্কাউটের সদস্যরা সহায়তা করায় তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করা সহজ হয়েছে।
চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ থেকে বিরত থাকতেও মাইকে প্রচার চালিয়েছেন স্কাউটরা। সেঞ্চুরি স্কাউট গ্রুপের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল চিশতী, ইছামতি মুক্ত স্কাউট গ্রুপের সম্পাদক সোহেল আহমেদ, পাকশী রেলওয়ে জেলা স্কাউটের সম্পাদক আসাদুজ্জামান, গ্রুপ সম্পাদক আল-আমিনসহ অন্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ইছামতি মুক্ত স্কাউট গ্রুপের সম্পাদক সোহেল আহমেদ বলেন, ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরার সময় রেলপথে ও স্টেশনে মানুষের ভোগান্তি হয়। তাদের জন্যই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঈশ্বরদী স্টেশন দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৪০টি ট্রেন বিভিন্ন রুটে চলাচল করে।
স্কাউটদের এমন উদ্যোগে সন্তোষ প্রকাশ করেন ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন স্টেশনের সুপারিনটেনডেন্ট মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, স্কাউট সদস্যরা নিজেদের উদ্যোগে সহায়তা করায় তারা মুগ্ধ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ট শন স ক উট গ র প র সদস য র লওয়
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য
দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।
আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।
লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।
আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।
কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।