ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের সোনিপাতের একটি খাল থেকে আজ সোমবার এক মডেলের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মরদেহের গলায় ছিল ধারালো অস্ত্রের কোপের চিহ্ন। দুই দিন আগে মিউজিক ভিডিওর শুটিংয়ের কথা বলে বাড়ি ছেড়েছিলেন তিনি। এ ঘটনায় তাঁর কথিত প্রেমিককে আটক করা হয়েছে। খবর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের

আরও পড়ুনশুটিং সেটে কোরিওগ্রাফারের মৃত্যু নিয়ে চাঞ্চল্য, মরদেহ উদ্ধার২৫ এপ্রিল ২০২৫

পুলিশ জানিয়েছে, নিহত তরুণীর নাম শীতল ওরফে সিমি চৌধুরী (২৭)। হাতে ও বুকে উল্কিচিত্র দেখে তাঁর পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। মরদেহটি সোনিপাত জেলার খারখোদার রিলায়েন্স খাল থেকে উদ্ধার করা হয়।

নিহত শীতলের বোন নেহা পুলিশকে জানান, শনিবার একটি ভিডিও কলে শীতলের সঙ্গে তাঁর কথা হয়। এর পর থেকে শীতলের ফোন বন্ধ ছিল। সেই কলেই শীতল অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর প্রেমিক সুনীল তাঁকে মারধর করছেন। রোববার সকালে পানিপথ জেলার একটি খাল থেকে সুনীলের গাড়ি উদ্ধার করে পুলিশ। জানা গেছে, সেই গাড়ি থেকেই তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সোমবার তাঁকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়। সোনিপাতের সহকারী পুলিশ কমিশনার অজিত সিং জানান, শীতলের পরিবার শনিবারই নিখোঁজ ডায়েরি করে, যা পানিপথের উরলানা কালান পুলিশ পোস্টে নথিভুক্ত হয়। তদন্ত শুরুর পর সোমবার খারখোদা এলাকা থেকে এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। বর্ণনার সঙ্গে মিল পাওয়ায় পরিবার সেটিকে শীতলের দেহ বলে শনাক্ত করে। এখনো তদন্ত চলছে।

নেহা পুলিশের কাছে বলেন, ‘শনিবার শীতল জানান, তিনি আহার গ্রামে একটি অ্যালবামের শুটিংয়ে যাচ্ছেন। প্রায় ছয় মাস আগে শীতলের সঙ্গে সুনীলের পরিচয় হয়, তখন শীতল ওর হোটেলে কাজ করতেন। পরে ও জানতে পারেন, সুনীল বিবাহিত এবং তাঁর দুই সন্তান রয়েছে। এরপর শীতল হোটেলের চাকরি ছেড়ে মডেলিংয়ে মন দেন। কিন্তু সুনীল তাঁর পিছু ছাড়েননি। শনিবার রাত ১২টার দিকে শীতল আমাকে ভিডিও কল করে জানায় শুটিং শেষ হয়েছে, বাড়ি ফিরছে। সে সময় ও আরও বলেন, সুনীল সেখানে এসে তাঁকে মারধর করছেন।’

নেহা আরও বলেন, ‘শীতল আমাকে জানিয়েছিল, সুনীল জোর করে ওকে নিজের সঙ্গে নিয়ে যেতে চাইছে। কথার মাঝপথেই কল বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এর পর থেকে আমি চেষ্টা করেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। পরে রোববার সকালে জানতে পারি, সুনীলের গাড়ি খালে পড়ে গেছে।’ পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত চলছে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য

দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।

আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।

লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।

আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।

সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা।

কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ