রাজবাড়ীতে দুই স্কুলছাত্রীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের মামলায় আরেক আসামি গ্রেপ্তার
Published: 17th, June 2025 GMT
রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলায় প্রাইভেট পড়ে বাড়ি ফেরার পথে দুই স্কুলছাত্রীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলার আরেক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁর নাম হাসমত আলী মণ্ডল (২১)।
গতকাল সোমবার রাতে উপজেলার কসবামাজাইল ইউনিয়নের কুঠিমালিয়াট গ্রামের নিজ এলাকা থেকে হাসমতকে গ্রেপ্তার করে পাংশা মডেল থানার পুলিশ।
এর আগে গত রোববার রাতে ভুক্তভোগী দুই স্কুলছাত্রীর মা ও বাবা পৃথকভাবে বাদী হয়ে ধর্ষণের অভিযোগে পাংশা মডেল থানায় দুটি মামলা করেন। এতে হাসমত আলী মণ্ডল (২১) ও শিহাব মণ্ডল (২০) নামের দুই তরুণকে আসামি করা হয়। তাঁদের দুজনের বাড়ি উপজেলার কুঠিমালিয়াট গ্রামে। মামলার পর রোববার রাতেই অভিযান চালিয়ে শিহাবকে নিজ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। শিহাব ও হাসমত দুজনই বেকার তরুণ এবং এলাকায় বখাটে হিসেবে পরিচিত।
ভুক্তভোগী দুই স্কুলছাত্রী স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তাঁদের একজনের বয়স ১৩ ও অপরজনের বয়স ১৪ বছর।
মামলার এজাহার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রোববার সকাল ১০টার দিকে বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়া শেষ করে একসঙ্গে বাড়ি ফিরছিল দুই ছাত্রী। এ সময় তাদের পথরোধ করেন শিহাব ও হাসমত। ওই দুই তরুণ ধারালো ছুরি ও ব্লেড বের করে ভয় দেখিয়ে ছাত্রীদের রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে যান। একজনকে একটি বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত কক্ষে ও অন্যজনকে বিদ্যালয়ের পেছনে নিয়ে ধর্ষণ করেন দুই তরুণ। বিষয়টি কাউকে না জানাতে ভয়ভীতি দেখান তাঁরা। পরে দুই শিক্ষার্থী বাড়ি ফিরে বিষয়টি পরিবারের কাছে বলে।
পাংশা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, গ্রেপ্তার দুজন পুলিশের কাছে প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের অভিযোগ স্বীকার করেছেন। শিহাব মণ্ডলকে গতকাল আদালতে পাঠানো হয়েছে। হাসমত আলীকে আজ মঙ্গলবার রাজবাড়ীর আদালতে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। এ ছাড়া আদালতের নির্দেশে গতকাল দুই স্কুলছাত্রীর ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়েছে।
আরও পড়ুনপ্রাইভেট পড়ে ফেরার পথে দুই স্কুলছাত্রীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ, গ্রেপ্তার ১১৬ জুন ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হ সমত
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য
দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।
আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।
লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।
আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।
কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।