ছোট্ট শিশুটিকে কুপিয়ে ফেলে রাখা হয়েছিল মাঠে, পরে মৃত্যু
Published: 18th, June 2025 GMT
হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলায় সুমাইয়া আক্তার (৯) নামে এক শিশুকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গত সোমবার সন্ধ্যায় শিশুটিকে কে বা কারা কুপিয়ে উপজেলার ছাতিয়ান ইউনিয়নের এক্তিয়ারপুর গ্রামের একটি মাঠে ফেলে রাখে। রক্তাক্ত অবস্থায় মধ্যরাতে তাকে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতাল থেকে ঢাকায় নেওয়ার পথে সে মারা যায়।
সুমাইয়া এক্তিয়ারপুর গ্রামের বেনু মিয়ার মেয়ে। শিশুটির বাবার অভিযোগ, জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে তাঁর আপন ভাই রেনু মিয়া সুমাইয়াকে খুন করেছে।
ছাতিয়ান ইউনিয়নের ইউপি সদস্য আবদুর রউফ জানান, বেনু মিয়ার সঙ্গে তাঁর ভাই রেনু মিয়ার জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। তাদের মধ্যে এ নিয়ে প্রায়ই ঝগড়াঝাঁটি হতো। ঘটনার পর থেকে রেনু মিয়াকে গ্রামে দেখা যাচ্ছে না।
ছাতিয়ান পুলিশ ফাঁড়ির এসআই আশীষ কুমার দে জানান, নিহত সুমাইয়ার শরীরে অনেক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মাধবপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কবির হোসেন বলেন, শিশু সুমাইয়া হত্যার ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি। অভিযোগ পাওয়া সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
একই রাতে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলায় নিখোঁজের তিন দিন পর সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে আবু রায়হান নেহাল (১৭) নামে স্কুলছাত্রের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার রাতে উপজেলার ভাইটকান্দি গ্রামের সোবহানের বাড়ির পেছনের সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে নেহালের পচা-গলা দেহ উদ্ধার করা হয়। নেহাল ভাইটকান্দি স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র এবং ছনধরা ইউনিয়নের হরিণাদী গ্রামের মৃত তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে। গত ১৩ জুন রাত থেকে সে নিখোঁজ ছিল। তার সন্ধানে গত ১৫ জুন নেহালের ভাই মো.
স্থানীয়দের দাবি, নেহালের সঙ্গে তাদের প্রতিবেশী ও সহপাঠী একটি মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এর জেরে চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি মেয়েটির বাবা শেখ ফরিদ ও ভাই সাগর মিলে নেহালকে মারধর করে। নেহাল নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই ওই মেয়ের পরিবার ঘরে তালা ঝুলিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে। ফুলপুর থানার ওসি আব্দুল হাদী বলেন, মামলার প্রক্রিয়া চলছে। সন্দেহভাজনরা পলাতক। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে সোমবার বিকেলে নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার সোমপাড়া বাজারে ভাড়া নিয়ে বাগ্বিতণ্ডার জেরে মারামারিতে সাইফুল ইসলাম কিরণ (৩৫) নামে এক অটোরিকশাচালক মারা গেছেন। এ ঘটনায় পুলিশ অভিযুক্ত মিজান হোসেনকে আটক করেছে। কিরণ উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের প্রসাদপুর দাই বাড়ির মৃত মো. হানিফের ছেলে। আটক মিজান একই ইউনিয়নের মমিনপুর গ্রামের আব্দুল হাশেম মুন্সিবাড়ির মৃত নাজির আহম্মদের ছেলে। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, সোমবার বিকেলে সোমপাড়া বাজারে অটোরিকশার ভাড়া নিয়ে থাই অ্যালুমিনিয়ামের ব্যবসায়ী মিজানের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা হয় কিরণের। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতি ও মারামারি হয়। সন্ধ্যায় কিরণ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার পূর্ব শিয়াচর লালখা এলাকা থেকে গতকাল হাত-পা বাঁধা বস্তাবন্দি অবস্থায় জনি সরকার (২৫) নামে এক পোশাকশ্রমিকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। স্থানীয়রা জানান, সকালে গার্মেন্ট শ্রমিকরা পূর্ব শিয়াচর লালখা এলাকার ড্রেনে বস্তা থেকে মানুষের পায়ের একটি অংশ বের হওয়া দেখেন। তারা কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হান্নানুর রফিক রঞ্জুকে জানালে তিনি পুলিশকে খবর দেন।
জনি সরকার সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ থানার বিষ্টপুর গ্রামের করুনা সরকারের ছেলে। করুনা সরকার জানান, তিনি ফতুল্লা স্টেডিয়ামের নৈশপ্রহরীর কাজ করেন। জনি সোমবার রাত ৯টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে আর ফেরেনি। সকালে খবর পেয়ে লাশ শনাক্ত করেন। সে এলাকার মাদকাসক্ত ছেলেদের সঙ্গে চলাফেরা করত।
ফতুল্লা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন বলেন, মরদেহের নাক-মুখে আঘাতের চিহ্ন এবং গলায় কাপড় পেঁচানো ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে।
বরিশালের বাকেরগঞ্জে আসমা বেগম (৫৫) নামে এক গৃহবধূকে ঘরে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় উপজেলার কলসকাঠী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। উপজেলার কলসকাঠী ইউনিয়নের কলসকাঠী গ্রামের আবুল হোসেন বলেন, তাঁর স্ত্রী মাগরিবের নামাজের পর মোবাইল ফোনে কল করে তাঁকে শেষবারের মতো দেখতে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। তখন তিনি বাসায় গিয়ে রক্তাক্ত মরদেহ পান।
(ব্যুরো, নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিনিধি ও সংবাদদাতার পাঠানো খবর)
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: হত য উপজ ল র স মব র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য
দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।
আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।
লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।
আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।
কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।