গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় ‘জ্ঞানের আলো পাঠাগার’ নামে একটি সামাজিক সংগঠনের কার্যালয় উচ্ছেদ করা হয়েছে।

বই পড়া ও বিতরণের পাশাপাশি দুর্যোগে ত্রাণ বিতরণসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল অরাজনৈতিক এই সংগঠনটি। এটির উচ্ছেদ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

গত রবিবার (১৫ জুন) বিকালে উপজেলা সদরের তারাশী গ্রামে অবস্থিত জ্ঞানের আলো পাঠাগারের কার্যালয়টি জেলা প্রশাসনের নির্দেশে এবং যৌথবাহিনীর উপস্থিতিতে উচ্ছেদ করা হয়।

পাঠাগারটি উচ্ছেদ করায় হতাশা প্রকাশ করেন এটির সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহামান পারভেজ। তিনি বলেন, “স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি এটি উচ্ছেদ করা হবে।”

পরের দিন সোমবার পাঠাগারটির ফেসবুক পেইজে এক পোস্টে অভিযোগ করে বলা হয়, “কোনো প্রকার অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ ছাড়াই গুড়িয়ে দেওয়া হলো জ্ঞানের আলো পাঠাগারটি। ভাঙার আগে কোনো প্রকার নোটিস দেওয়া হয়নি। কী কারণে ভাঙা হচ্ছে তাও জানানো হয়নি। গতকাল (রবিবার) দিনভর নাটকীয়তার শেষে বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে, সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে ভেঙে ফেলা হয়। এতে আমাদের কোনো দুঃখ নেই। ওখানে নিজেদের কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নাই।”

ওই ওপাস্টে আরো বলা হয়, “আমাদেরকে বলা হয়েছিল ৩০ মিনিট সময় দিচ্ছি মালামালগুলো সরিয়ে ফেলুন। তখন আমরা বলি ওখান থেকে আমাদের সরানোর কিছু নাই। যা কিছু আছে তার মালিক ব্যক্তি নয়। সবকিছু জনগণের। তাই আমরা কিছু সরাতে বা ওখান থেকে নিতে পারব না।”

ফেসবুক পোস্টে আেো বলা হয়, “জেলা পরিষদ থেকে কোনো জায়গার বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠানের নামে হয় না। প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তির নামে বন্দোবস্ত নিতে হয়। (তাই) জ্ঞানের আলো পাঠাগারের সভাপতি সুশান্ত মণ্ডলের নামে জায়গাটি বন্দোবস্ত নেওয়া হয়। প্রতিবছর যা নবায়ন করার কথা। নবায়ন ফি স্বল্পমূল্যে হওয়ায় আমরা প্রতি দুই বছর একসাথে করে নবায়ন করি। সর্বশেষ ২২-২৩ ও ২৩-২৪ সাল পর্যন্ত নবায়ন করা আছে।

‘গতকাল (রোববার) আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দরা জানায় সংগঠনটির কোনো অনিয়ম থাকলে তদন্ত করা হোক। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। এরকম সামাজিক সংগঠনটি যেন ভাঙা না হয়। তারপরও কেন ভাঙ্গা হলো বিষয়টি আমরা অবগত নই।”

এ বিষয়ে মঙ্গলবার (১৭ জুন) দুপুরে গোপালগঞ্জ জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত দেবনাথ বলেন, “আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। এছাড়া শারীরিকভাবে অসুস্থ। জ্ঞানের আলো পাঠাগার আমাদের জায়গায় নাকি অন্যকোনো দপ্তরের জায়গায় পড়েছে তা আমাকে খোঁজ নিয়ে জানতে হবে। আদৌ জ্ঞনের আলো পাঠাগারকে আমরা জায়গা বন্দোবস্ত দিয়েছি কিনা তাও আমার জানা নেই। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে পরে জানাতে পারব।”

তবে জেলা পরিষদে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী জানান, প্রতিষ্ঠানের নামে জেলা পরিষদের জমি বন্দোবস্ত দেওয়ার বিধান নেই। তাই জ্ঞানের আলো পাঠাগারের সভাপতি সুশান্ত মণ্ডলের নামে জমি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। বন্দোবস্তের বিধি ভঙ্গ করে জ্ঞানের আলো পাঠাগার করা হয়েছে। তাই প্রশাসন এটি ভেঙে দিয়েছে।

উচ্ছেদের সময় জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রবীর বিশ্বাস উপস্থিত ছিলেন। তার বক্তব্য জানার জন্য মঙ্গলবার রাতে মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ধরেননি।

পাঠাগারটি উচ্ছেদের পর থেকেই এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে সমালোচনা করেন।

উচ্ছেদের বিষয়টি পাঠাগারের ফেইসবুক পেইজে পোস্টের পর মো.

মেহেদী হাসান মুন নামে একজন মন্তব্য করেছেন, “এটা খুব খারাপ হয়েছে। এটা একটি মানবিক প্রতিষ্ঠান। আমি মনে করি, ভাবা উচিত ছিল অনেক।”

সুশান্ত বণিক মন্তব্য করেছেন, “খুব কষ্ট লাগছে পাঠাগারটির জন্য।”

মহানাজ পারভীন, কামাল শেখ, মাধুরী শিকদারসহ অনেকে দুঃখপ্রকাশ করে ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

এ বিষয়ে জ্ঞানের আলো পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহামান পারভেজ বলেন, “২০১৪ সালের ৮ মার্চ জ্ঞানের আলো পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করা হয়। তারপর থেকে বিভিন্ন বয়সের মানুষ এখানে বসে বই পড়তেন। পাঠকরা এখান থেকে বই নিয়ে বাড়িতে পড়তেন। পাশাপাশি পাঠাগারের সদস্যদের উদ্যোগে বিভিন্ন স্চ্ছোসেবামূলক, মানবিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হতো। শিক্ষা উপকরণ, বৃত্তি, কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা প্রদান করা হয়েছে। ফেসবুকের মাধ্যমে ফান্ড গঠন করে জটিলরোগে আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসা শেষে বেঁচে যাওয়া টাকা রোগীর পরিবারকে দেওয়া হয়েছে।”

তিনি আরো বলেন, “এছাড়া, ২০২২ সালের বন্যার সময় সুনামগঞ্জের তাহেরপুরে লাইব্রেরির পক্ষ থেকে মানবিক সহায়তা করা হয়েছে। গত বছরের বন্যায় কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে লাইব্রেরির পক্ষ থেকে সহায়তাসহ বন্যাদুর্গতদের পাশে আমরা ছিলাম। কোভিড মহামারীর সময় আমরা কোটালীপাড়া উপজেলার প্রায় ৩০০ রোগীকে বিনামূল্যে অক্সিজেন সিলিল্ডার দিয়েছি। এক লাখ মাস্ক বিতরণ করেছি। উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে সচেতনামূলক প্রচার চালিয়েছি।”

পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “জ্ঞানের আলো পাঠাগার শুধু পাঠকের সঙ্গে বইয়ের মেলবন্ধ ঘটিয়ে সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে আমরা কাজ করে গেছি। এভাবে পাঠাগার উচ্ছেদ করা হবে, তা আমরা স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি।”

ঢাকা/বাদল/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ ঞ ন র আল আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

এনসিপির জাতীয় ছাত্রশক্তির কমিটি ঘোষণা, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে জাহিদ–বাকের

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সহযোগী সংগঠন জাতীয় ছাত্রশক্তির কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। কেন্দ্রে সভাপতি হয়েছেন জাহিদ আহসান, সাধারণ সম্পাদক আবু বাকের মজুমদার। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটিতে তাহমিদ আল মুদ্দাসসির চৌধুরীকে সভাপতি ও আল আমিন সরকারকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে।

আজ শুক্রবার রাত ১০টায় এই দুই কমিটি ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ (বাগছাস) থেকে নাম বদলে জাতীয় ছাত্রশক্তি হওয়ার এক সপ্তাহের মাথায় সংগঠনটির চার সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হলো। আর সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নতুন কমিটি তিন সদস্যের।

জাতীয় ছাত্রশক্তির নতুন কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদ আহসান ও সাধারণ সম্পাদক আবু বাকের মজুমদার—দুজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। জাহিদ এর আগে বাগছাসের কেন্দ্রীয় সদস্যসচিব আর বাকের সংগঠনটির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। চার সদস্যের আংশিক কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছেন দুজন। সাংগঠনিক সম্পাদক (উত্তরাঞ্চল) পদে দায়িত্ব পেয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু তৌহিদ মো. সিয়াম আর সাংগঠনিক সম্পাদক (দক্ষিণাঞ্চল) করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহির আলমকে। সাত কার্যদিবসের মধ্যে তাঁদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশিত হবে।

ছাত্রশক্তির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি তাহমিদ আল মুদ্দাসসির চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আল আমিন সরকারও বাগছাসের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। এই কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে মো. সাইফুল্লাহকে। তাঁদেরও সাত কার্যদিবসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে বলা হয়েছে।

তাহমিদ আল মুদ্দাসসির

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এনসিপির জাতীয় ছাত্রশক্তির কমিটি ঘোষণা, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে জাহিদ–বাকের