১১০ বছর বয়সে দ্বিতীয় জীবন পেল লবস্টার
Published: 18th, June 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের একটি সি ফুড রেস্তোরাঁ। নাম পিটার’স ক্ল্যাম বার। রেস্তোরাঁটির অ্যাকুয়ারিয়ামে একটি লবস্টার রাখা ছিল। এর বয়স আনুমানিক ১১০ বছর। ওজন সাড়ে ৯ কেজি। সম্প্রতি রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ লবস্টারটিকে আটলান্টিক মহাসাগরে অবমুক্ত করেছে।
লং আইল্যান্ডের হ্যাম্পস্টেডে অবস্থিত রেস্তোরাঁটির মালিক বুচ ইয়ামালি। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে লবস্টারটি অ্যাকুয়ারিয়ামে ছিল। আদর করে লরেঞ্জ নামে ডাকা হতো একে। ন্যাশনাল লবস্টার দিবস ও বাবা দিবস উপলক্ষে লবস্টারটিকে সাগরে ছেড়ে দেওয়া হয়। এতে এটি ফিরে পায় স্বাধীন জীবন।
রেস্তোরাঁয় খেতে আসা মানুষের কাছেও বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল লবস্টারটি। এটি সম্পর্কে ইয়ামালি আরও বলেন, ‘এই প্রজাতির লবস্টারগুলো সাধারণত এত দিন বাঁচে না, কিন্তু এটি বেঁচে ছিল। তাই আমরা ভাবলাম, বাবা দিবস উদ্যাপন করতে লবস্টারটি ছেড়ে দেওয়ার মতো ভালো উপায় আর কী হতে পারে। সে আমাদের একধরনের পোষা প্রাণীর মতো হয়ে উঠেছিল। মানুষ তাকে দেখতে আসত, তার সঙ্গে ছবি তুলত। সে যেন দোকানের একটা প্রতীক হয়ে উঠেছিল।’
বাবা দিবসের দিন হ্যাম্পস্টেড টাউনের সুপারভাইজার ডন ক্লেভিন ও নাসাউ কাউন্টির আইনপ্রণেতা জন ফেরেটি ওই রেস্তোরাঁয় উপস্থিত হন। মুক্তি দেওয়ার আগে লরেঞ্জকে ‘ক্ষমা’ করার ঘোষণা দেন তাঁরা। এরপর তাকে আটলান্টিক বিচ রিফে অবমুক্ত করা হয়।
ইয়ামালি বলেন, লরেঞ্জোকে মুক্ত পরিবেশে দ্বিতীয়বারের মতো জীবনযাপনের সুযোগ দিতে পেরে তিনি আনন্দিত। তিনি বলেন, ‘আমরা তাকে মিস করব। কিন্তু আমি মনে করি, তাকে ছেড়ে দেওয়াটাই সঠিক সিদ্ধান্ত। যদি সে এখানে মারা যেত, সেটা ভালো কিছু হতো না। তা ছাড়া আমি কখনোই মন থেকে তাকে বিক্রি করে দিতে পারতাম না।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য
দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।
আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।
লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।
আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।
কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।