স্মার্ট চট্টগ্রাম গড়তে নগরের ভূগর্ভস্থ অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক স্থাপনের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) ও ফাইবার অ্যাট হোমের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। বুধবার (১৮ জুন) নগরের টাইগারপাসস্থ চসিক কার্যালয়ে এ চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
বিটিআরসির ন্যাশনাল টেলিকম ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) লাইসেন্সপ্রাপ্ত ফাইবার অ্যাট হোম চট্টগ্রাম নগরে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগ ও অন্যান্য স্মার্ট প্রযুক্তির সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সৌন্দর্য বাড়াতে কাজ করবে।
চসিক মেয়র ডা.
আরো পড়ুন:
চট্টগ্রামে ১০ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত
মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড দিল চবিসাস
“চট্টগ্রাম নগরবাসীর জন্য একটি পরিচ্ছন্ন, নিরাপদ এবং প্রযুক্তিনির্ভর পরিবেশ নিশ্চিত করতে হলে ঝুলন্ত তারের অব্যবস্থাপনাকে দূর করতেই হবে। এই চুক্তির মাধ্যমে আমরা নগরের নির্দিষ্ট কয়েকটি ওয়ার্ডে পরিকল্পিতভাবে ভূগর্ভস্থ অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবলিং শুরু করতে যাচ্ছি। পর্যায়ক্রমে পুরো নগরে এটি বাস্তবায়ন করা হবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে নগরীর সৌন্দর্য যেমন বাড়বে, তেমনি নাগরিকরাও পাবেন নিরবচ্ছিন্ন ও দ্রুতগতির ইন্টারনেট সুবিধা”, যোগ করেন তিনি।
চসিক মেয়র বলেন, “চট্টগ্রামকে একটি আধুনিক, পরিবেশবান্ধব ও প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট নগর হিসেবে গড়ে তুলতে হলে এমন উদ্যোগ সময়োপযোগী এবং অপরিহার্য।”
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন- চসিকের আইন কর্মকর্তা মহিউদ্দিন মুরাদ, প্রধান প্রকৌশলী আনিসুর রহমান, ডা. এস এম সারোয়ার আলম, ফাইবার অ্যাট হোমের জেনারেল ম্যানেজার সরফুদ্দিন ভূইয়া, মোহাম্মদ শাহ ইসরাইল সবুজ।
ঢাকা/রেজাউল/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক য বল নগর র
এছাড়াও পড়ুন:
‘নোট অব ডিসেন্ট’সহ সনদ প্রকাশ উচিত নয়
প্রথমত যে বিষয়টিতে আমি গুরুত্ব দিতে চাই, সেটি হলো ঐকমত্য কমিশন কিছু সংস্কার প্রস্তাব ‘নোট অব ডিসেন্ট’সহ (ভিন্নমত) গ্রহণ করছে। আমি এটি সমর্থন করি না। এ প্রসঙ্গে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনামকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে (গত নভেম্বরে) বলেছিলেন, তাঁরা মূলত ফ্যাসিলিটেটরের (এগিয়ে নিতে সহায়তাকারী) ভূমিকা পালন করছেন। তাঁর ভাষায়, যতটুকু সংস্কারে সবাই একমত হবেন, ততটুকুই বাস্তবায়নের জন্য বিবেচনায় নেওয়া হবে। তিনি সংখ্যার উদাহরণ দিয়ে বলেছিলেন, যদি ১০০টি প্রস্তাব আসে, আর সব দলের সম্মতি মেলে মাত্র ১০টির ক্ষেত্রে, তাহলে কেবল সেই ১০টি বাস্তবায়নের জন্য বিবেচনায় নেওয়া হবে, বাকিগুলো নয়।
আমি মনে করি, ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দেওয়া সংস্কার প্রস্তাবগুলো অন্তর্ভুক্ত করে জুলাই সনদ চূড়ান্ত করা উচিত নয়; বরং যেসব বিষয়ে সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য রয়েছে, কেবল সেগুলো নিয়েই জুলাই সনদ চূড়ান্ত হওয়া উচিত।
উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, বিএনপি যেসব প্রস্তাবের ব্যাপারে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নের বিষয়ে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নয়। ফলে ভবিষ্যতে তারা যদি ক্ষমতায় যায়, তাহলে সেসব প্রস্তাব বাস্তবায়নের সম্ভাবনা নেই। কারণ, তারা আগেভাগেই আনুষ্ঠানিকভাবে আপত্তি জানিয়েছে। সুতরাং এই প্রক্রিয়ায় জুলাই সনদ হওয়ার মানে, আমার কাছে মনে হয় সরকার কোনো একটি পক্ষকে খুশি করার কৌশল হিসেবে এই পদক্ষেপ নিয়েছে।
গণতন্ত্রে সংখ্যার কথা বলা হয়। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাবও বিবেচনায় রাখা উচিত। শুধু বিএনপি নয়, জামায়াতে ইসলামী বা জাতীয় নাগরিক পার্টিও (এনসিপি) যদি কোনো প্রস্তাবের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অবস্থান নেয়, তবে সেগুলো জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত না করাই শ্রেয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, নোট অব ডিসেন্টসহ জুলাই সনদ প্রকাশ করা উচিত নয়।
যে উদ্দেশ্যে উচ্চকক্ষ গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, আমি সেটির সঙ্গে সহমত। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে (পিআর) উচ্চকক্ষ গঠনের যে ভাবনা, তাতে ভারসাম্য রক্ষার সুযোগ ছিল। আমি সেই প্রস্তাবের পক্ষে। তবে আমি নিম্নকক্ষে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির ঘোরতর বিরোধী।
অবশ্য সবকিছু ছাপিয়ে ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রমে কিছু বিষয় আমাকে যথেষ্ট সন্তুষ্ট করেছে। প্রথমত, কমিশনের সদস্যদের উপস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অকল্পনীয় মাত্রায় খোলামেলা বিতর্ক হয়েছে। তাঁরা একসঙ্গে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দেশ পরিচালনার কাঠামো নিয়ে আলোচনা করেছেন, এটা বড় অগ্রগতি। দ্বিতীয়ত, বিএনপির অবস্থানও এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। তারা যেসব প্রস্তাব মানেনি, তা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে। সমালোচনা হবে জেনেও তারা যেটা করবে না, সে বিষয়ে কথা দেয়নি। বিএনপি উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি, সংবিধান ও কমিশনসংক্রান্ত কিছু বিষয়ে একমত হয়নি এবং তা স্পষ্টভাবে জানিয়েছে। আমি এটিকে সৎ অবস্থান মনে করি। অতীতে কোনো প্রস্তাবে সম্মতি দিলেও পরবর্তী সময়ে ক্ষমতায় গিয়ে তা পালন না করার প্রবণতা দেখা গেছে।
এ ছাড়া বিচার বিভাগ সম্পূর্ণভাবে পৃথক্করণের বিষয়ে সব দল রাজি হয়েছে। এটা একটা অসাধারণ অর্জন। সরকারের সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত পৃথক সচিবালয় হবে, হাইকোর্টের বেঞ্চ বিভাগীয় পর্যায়ে যাবে, নিম্ন আদালত উপজেলায় যাবে—এগুলোতে সবাই একমত হয়েছে, এগুলো অবিশ্বাস্য অর্জন।
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়েও মোটামুটি সবাই একটি জায়গায় পৌঁছেছে। নির্বাচন কমিশন সরকারের হাত থেকে সম্পূর্ণভাবে সরিয়ে ফেলার বিষয়ে রাজি হওয়া, কেউ ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে না পারার সিদ্ধান্ত—এগুলো খুবই মৌলিক সংস্কার। সব মিলিয়ে যতটুকু একমত হওয়া গেছে তা যথেষ্ট।
জাহেদ উর রহমান: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
(মতামত লেখকের নিজস্ব)