লক্ষ্মীপুরে অবৈধভাবে খাল দখলের যেন মহোৎসব চলছে। জেলার পাঁচ উপজেলার প্রায় অর্ধশতাধিক খাল ইতিমধ্যে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। প্রতিদিনই খালের দুই পাড় ভরাট করে গড়ে উঠছে অবৈধ স্থাপনা। এতে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ব্যহত হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। 

জেলার কমলনগর উপজেলার হাজিরহাট বাজার এলাকায় জারিরদোনা খালের এক কিলোমিটার জায়গায় অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে ১১টি বহুতল ভবন ও ৭০টির মতো দোকানপাট। নির্মাণ করা হয়েছে ১১টি বক্স কালভার্ট। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নাকের ডগায় খাল দখল করলেও প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে। এতে দখলদাররা বেপরোয়া হয়ে উঠছে এবং দখল করেই যাচ্ছে। 

এদিকে, লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসন কার্যালয় থেকে ৮০ জন দখলবাজের তালিকা তৈরি করে তাদের দখলে থেকে খালটি উদ্ধার করতে উচ্ছেদের আদেশ হলেও কার্যকর প্রদক্ষেপ নিচ্ছে না স্থানীয় প্রশাসন।

স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুল ওহাব, আক্তার হোসেন ও এলাকাবাসী আজাদ উদ্দিন ও আব্দুর রহমান জানান, উপজেলার চরফলকন, চরলরেন্স, হাজিরহাট ও সাহেবেরহাট ইউনিয়নসহ বিস্তীর্ণ অঞ্চলের কৃষিকাজে এই খালের পানি ব্যবহার করা হয়। পানির স্বাভাবিক চলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে যেমন পানির সংকটে কৃষিকাজ ব্যাহত হয়। আবার বর্ষা মৌসুমেও পানি নিষ্কাশনজনিত সমস্যায় সয়াবিন, ধান, মরিচ, বাদাম ও সবজিসহ বিভিন্ন ফসল ও বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, খালের দুই পাড়ে রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়ায় প্রতিদিনই অবৈধভাবে গড়ে উঠছে কোনো না কোনো স্থাপনা। পাউবোর কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে চলে এসব অবৈধ দখল। কয়েক দিন পরপর দখলদারদের হাত থেকে এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালায় প্রশাসন। কিন্তু উচ্ছেদের কিছুদিন পর আবারও দখল হয়ে যায়।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, হাজিরহাট বাজারের উত্তর অংশের ১০০ মিটারের মধ্যে ‘হাজী মোতাহের হোসেন সুপারমার্কেট, আল মোস্তফা মঞ্জিল নামে চারতলাসহ অন্তত ১১টি বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া ছোট-বড় প্রায় ৭০টি টিনশেড দোকানঘর নির্মাণ করা হয়েছে।

উপজেলা ভূমি অফিসের তথ্য মতে, পিএস জরিপে হাজিরহাট বাজার অংশে খালের প্রশস্ততা ছিল গড়ে প্রায় ৩২ ফুট। বর্তমান আরএস জরিপে তা দাঁড়িয়েছে মাত্র ২০ ফুটে।

কমলনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরাফাত হুসাইন বলেন, “এরই মধ্যে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকারীদেরকে নোটিশ করা হয়েছে। কিন্তু তারা কোন সাড়া দেয়নি। জেলা প্রশাসনের নির্দেশে তালিকাভূক্ত ৮০ স্থাপনার বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযানসহ শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

অন্যদিকে রহমতখালী খালের লক্ষ্মীপুর পৌরসভা এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ময়লা পানি, আবর্জনা আর সংকীর্ণতায় অস্তিত্ব হারাতে বসেছে খালটি। দুই পাড় দখল করে গড়ে উঠেছে দোকান ও বাড়িঘরসহ অবৈধ স্থাপনা। বছরের পর বছর ধরে গড়ে ওঠা এসব স্থাপনা চলছে বহাল তবিয়তে। এতে ময়লা-আর্বজনার স্তূপ জমে সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে খালটি। এর ফলে পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে আর দুর্ভোগ বাড়ছে মানুষের। একই অবস্থা ডাকাতিয়া নদীতেও।

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, লক্ষ্মীপুর সদর, রায়পুর, রামগতি, কমলনগর ও রামগঞ্জ উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া রহমতখালী খাল ও ডাকাতিয়া নদীসহ প্রায় অর্ধশতাধিক খালই এখন মৃতপ্রায়। প্রায় ১৫০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এসব খাল ও নদীর অস্তিত্ব ছিল।

লক্ষ্মীপুর জেলা জজ কোর্টের আইনজীবী মাহীর আসহাব বলেন, “রহমতখালী খাল প্রায় ২০০ ফুট চওড়া ছিল। দখলের কারণে তা এখন মাত্র ৩০-৪০ ফুটে দাঁড়িয়েছে। পৌরসভার বেশির ভাগ বর্জ্যই এখন এই খালে যাচ্ছে। ফলে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ।”

জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদুল জামাল বলেন, “খাল দখলে কোনো কর্মকর্তা জড়িত থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরই মধ্যে অবৈধ দখলদারদের তালিকা করা হয়েছে। এরপর উদ্ধার অভিযান চালানো হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। ইতোমধ্যে কিছু কিছু জায়গায় অভিযান চালানো হয়েছে।”

ঢাকা/লিটন/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর লক ষ ম প র হ জ রহ ট উপজ ল র খ ল দখল ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

নিরস্ত্রীকরণে সম্মতির খবর নাকচ: হামাস বলল, দখলদারির মোকাবিলা জাতীয় ও আইনি অধিকার

গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনা চলাকালে অস্ত্রত্যাগের বিষয়ে সম্মতি জানানোর খবরের বিরোধিতা করেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। তারা বলেছে, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলি দখলদারি মোকাবিলার জাতীয় ও আইনি অধিকার তাদের রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজায় আটক থাকা ইসরায়েলি জিম্মিদের স্বজনদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে উইটকফ তাঁদের বলেন, হামাস জানিয়েছে, তারা ‘নিরস্ত্রীকরণে প্রস্তুত’। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজ এটা ফলাও করে প্রচার করেছে।

মার্কিন দূতের এমন মন্তব্য সংবাদমাধ্যমে প্রচারের পর গতকাল শনিবার এর তীব্র বিরোধিতা করে হামাস। এক বিবৃতিতে সংগঠনটি বলেছে, যতক্ষণ (ইসরায়েলি) দখলদারি বহাল থাকবে, ততক্ষণ তা প্রতিরোধ করা এবং সেটার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরা তাদের জাতীয় ও আইনি অধিকার।

‘(ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড) পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত (দখলদারির বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরা) আমাদের পূর্ণ জাতীয় অধিকার। এর মধ্যে প্রধান হলো, জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি সম্পূর্ণ সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। এ অধিকার ত্যাগ করা যাবে না’, বলেছে হামাস।

স্টিভ উইটকফ গতকাল ইসরায়েলের তেল আবিবে জিম্মিদের স্বজনদের সঙ্গে দেখা করেন। এর এক দিন আগে তিনি গাজায় গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল–সমর্থিত ‘বিতর্কিত’ সংস্থা জিএইচএফ পরিচালিত ত্রাণ সরবরাহ কেন্দ্র ঘুরে দেখেন।

আরও পড়ুনস্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস০১ আগস্ট ২০২৫

গাজার এখনকার অপুষ্টিজনিত সংকটময় পরিস্থিতিতে স্টিভ উইটকফের এ সফরকে ‘সাজানো অনুষ্ঠান’ বলে সমালোচনা করেছে হামাস।

গত সপ্তাহে জাতিসংঘ জানিয়েছে, গত মে মাসে জিএইচএফ ত্রাণকেন্দ্র পরিচালনা শুরু করার পর থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ৩০০–এর বেশি ফিলিস্তিনি ত্রাণ নিতে গিয়ে হামলায় নিহত হয়েছেন।

আরও পড়ুনভাইরাল হওয়া ছবিটি নিয়ে বিশ্বজুড়ে ক্ষোভ-বিতর্ক, পেছনের সত্যটা কী১৮ ঘণ্টা আগে

গাজায় হত্যাকাণ্ড আর জিএইচএফের কার্যক্রমের ক্রমবর্ধমান সমালোচনা সত্ত্বেও ট্রাম্প প্রশাসন দৃঢ়ভাবে এ সংস্থার পাশে দাঁড়িয়েছে। গত জুনে ওয়াশিংটন জিএইচএফের জন্য ৩০ মিলিয়ন (৩ কোটি) ডলার তহবিল অনুমোদনের কথা জানিয়েছে।

একদিকে গাজায় দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি, অন্যদিকে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে হামাসের নিরস্ত্রীকরণের বিষয়ে ওই মন্তব্য করেছেন স্টিভ উইটকফ।

আরও পড়ুনগাজার নাসের হাসপাতালে পাঁচ দিনে কী কী দেখলেন রয়টার্সের সাংবাদিকেরা৩১ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনগাজায় নৃশংসতা চালিয়ে ইসরায়েল কি পশ্চিমা বিশ্বেও একঘরে হয়ে যাচ্ছে০১ আগস্ট ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিরস্ত্রীকরণে সম্মতির খবর নাকচ: হামাস বলল, দখলদারির মোকাবিলা জাতীয় ও আইনি অধিকার
  • রাউজানে দখলদারি ও নির্বাচন ঘিরে বিএনপির সংঘাত থামছে না