অবৈধভাবে খাল দখল: এক কিলোমিটারেই ১১ ভবন, ৭০ দোকান
Published: 19th, June 2025 GMT
লক্ষ্মীপুরে অবৈধভাবে খাল দখলের যেন মহোৎসব চলছে। জেলার পাঁচ উপজেলার প্রায় অর্ধশতাধিক খাল ইতিমধ্যে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। প্রতিদিনই খালের দুই পাড় ভরাট করে গড়ে উঠছে অবৈধ স্থাপনা। এতে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ব্যহত হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা।
জেলার কমলনগর উপজেলার হাজিরহাট বাজার এলাকায় জারিরদোনা খালের এক কিলোমিটার জায়গায় অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে ১১টি বহুতল ভবন ও ৭০টির মতো দোকানপাট। নির্মাণ করা হয়েছে ১১টি বক্স কালভার্ট। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নাকের ডগায় খাল দখল করলেও প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে। এতে দখলদাররা বেপরোয়া হয়ে উঠছে এবং দখল করেই যাচ্ছে।
এদিকে, লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসন কার্যালয় থেকে ৮০ জন দখলবাজের তালিকা তৈরি করে তাদের দখলে থেকে খালটি উদ্ধার করতে উচ্ছেদের আদেশ হলেও কার্যকর প্রদক্ষেপ নিচ্ছে না স্থানীয় প্রশাসন।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুল ওহাব, আক্তার হোসেন ও এলাকাবাসী আজাদ উদ্দিন ও আব্দুর রহমান জানান, উপজেলার চরফলকন, চরলরেন্স, হাজিরহাট ও সাহেবেরহাট ইউনিয়নসহ বিস্তীর্ণ অঞ্চলের কৃষিকাজে এই খালের পানি ব্যবহার করা হয়। পানির স্বাভাবিক চলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে যেমন পানির সংকটে কৃষিকাজ ব্যাহত হয়। আবার বর্ষা মৌসুমেও পানি নিষ্কাশনজনিত সমস্যায় সয়াবিন, ধান, মরিচ, বাদাম ও সবজিসহ বিভিন্ন ফসল ও বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, খালের দুই পাড়ে রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়ায় প্রতিদিনই অবৈধভাবে গড়ে উঠছে কোনো না কোনো স্থাপনা। পাউবোর কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে চলে এসব অবৈধ দখল। কয়েক দিন পরপর দখলদারদের হাত থেকে এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালায় প্রশাসন। কিন্তু উচ্ছেদের কিছুদিন পর আবারও দখল হয়ে যায়।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, হাজিরহাট বাজারের উত্তর অংশের ১০০ মিটারের মধ্যে ‘হাজী মোতাহের হোসেন সুপারমার্কেট, আল মোস্তফা মঞ্জিল নামে চারতলাসহ অন্তত ১১টি বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া ছোট-বড় প্রায় ৭০টি টিনশেড দোকানঘর নির্মাণ করা হয়েছে।
উপজেলা ভূমি অফিসের তথ্য মতে, পিএস জরিপে হাজিরহাট বাজার অংশে খালের প্রশস্ততা ছিল গড়ে প্রায় ৩২ ফুট। বর্তমান আরএস জরিপে তা দাঁড়িয়েছে মাত্র ২০ ফুটে।
কমলনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরাফাত হুসাইন বলেন, “এরই মধ্যে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকারীদেরকে নোটিশ করা হয়েছে। কিন্তু তারা কোন সাড়া দেয়নি। জেলা প্রশাসনের নির্দেশে তালিকাভূক্ত ৮০ স্থাপনার বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযানসহ শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অন্যদিকে রহমতখালী খালের লক্ষ্মীপুর পৌরসভা এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ময়লা পানি, আবর্জনা আর সংকীর্ণতায় অস্তিত্ব হারাতে বসেছে খালটি। দুই পাড় দখল করে গড়ে উঠেছে দোকান ও বাড়িঘরসহ অবৈধ স্থাপনা। বছরের পর বছর ধরে গড়ে ওঠা এসব স্থাপনা চলছে বহাল তবিয়তে। এতে ময়লা-আর্বজনার স্তূপ জমে সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে খালটি। এর ফলে পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে আর দুর্ভোগ বাড়ছে মানুষের। একই অবস্থা ডাকাতিয়া নদীতেও।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, লক্ষ্মীপুর সদর, রায়পুর, রামগতি, কমলনগর ও রামগঞ্জ উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া রহমতখালী খাল ও ডাকাতিয়া নদীসহ প্রায় অর্ধশতাধিক খালই এখন মৃতপ্রায়। প্রায় ১৫০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এসব খাল ও নদীর অস্তিত্ব ছিল।
লক্ষ্মীপুর জেলা জজ কোর্টের আইনজীবী মাহীর আসহাব বলেন, “রহমতখালী খাল প্রায় ২০০ ফুট চওড়া ছিল। দখলের কারণে তা এখন মাত্র ৩০-৪০ ফুটে দাঁড়িয়েছে। পৌরসভার বেশির ভাগ বর্জ্যই এখন এই খালে যাচ্ছে। ফলে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ।”
জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদুল জামাল বলেন, “খাল দখলে কোনো কর্মকর্তা জড়িত থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরই মধ্যে অবৈধ দখলদারদের তালিকা করা হয়েছে। এরপর উদ্ধার অভিযান চালানো হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। ইতোমধ্যে কিছু কিছু জায়গায় অভিযান চালানো হয়েছে।”
ঢাকা/লিটন/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর লক ষ ম প র হ জ রহ ট উপজ ল র খ ল দখল ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
মহাসড়কের পাশে হাট-বাজার, বাড়ছে দুর্ঘটনা ঝুঁকি
মৌলভীবাজার জেলা সদরে ঢাকা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে সরকারি জমি দখল করে গড়ে উঠেছে হাট-বাজার। এতে পথচারীকে ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়ক দিয়ে হাঁটাচলা করতে হচ্ছে। এসব অবৈধ হাট-বাজার উচ্ছেদে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় ক্ষোভ জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
মৌলভীবাজার জেলা সদর থেকে শেরপুর বাজারের মুক্তিযোদ্ধা চত্বর পর্যন্ত সিলেট-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে অন্তত ৯টির অধিক ছোট-বড় বাজার গড়ে ওঠেছে। এগুলোর মধ্যে নয়াব্রিজ (ত্রৈলক্ষবিজয় বাজার), সরকার বাজারের নতুন অংশ, আফরোজগঞ্জ বাজার (শেরপুর বাজার), কাজির বাজার প্রসিদ্ধ। এসব হাট-বাজারের দোকানিরা ফুটপাত দখল করে মহাসড়ক ঘেঁষে পসরা সাজিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে হাট-বাজারে আসা মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এছাড়া প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন পথচারীরা।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বেকামুড়া গ্রামের ব্যবসায়ী মিজানুল হক পান্না জানান, মৌলভীবাজার শহরের বেরীরপাড়, কুসুমবাগ পয়েন্ট থেকে শুরু করে শেরপুর বাজার পর্যন্ত মহাসড়কের ফুটপাত ভাসমান ব্যবসায়ীদের দখলে চলে গেছে। বিশেষ করে শেরপুর বাজার, সরকার বাজার ও নয়াব্রিজ বাজারে এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। সাধারণ মানুষকে নিরুপায় হয়ে মহাসড়ক দিয়ে হাঁটাচলা করতে হচ্ছে।
সিলেট মিনিবাস মালিক সমিতির শেরপুর বাজার স্ট্যান্ডের ম্যানেজার জাহাঙ্গীর খান বলেন, শেরপুর বাজারের মুক্তিযোদ্ধা চত্বরের দুই পাশে মহাসড়কের অর্ধেক অংশজুড়ে থ্রি হুইলার ও ভাসমান দোকানিদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। এতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়ক ধরে চলতে হচ্ছে পথচারী ও আশপাশের বিভিন্ন মাদ্রাসা ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের। তিনি জানান, গত কয়েক বছরে শেরপুর মুক্তিযোদ্ধা চত্বরে সড়ক দুর্ঘটনায় অনেকে হতাহত হয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, শেরপুর ও নয়াব্রিজ বাজার বিভিন্ন এলাকার মানুষের ট্রানজিট পয়েন্ট হওয়ায় সব সময় লোকসমাগম বেশি থাকে। এ কারণে সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচলকারী যানবাহন মহাসড়কে যত্রতত্র দাঁড় করিয়ে যাত্রী তোলা হয়। এতে পথচারী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
শেরপুর বাজার ইজারাদার মাজহারুল ইসলাম রকি জানান, মহাসড়কের পাশে বারবার দখলদার উচ্ছেদ হয়েছে। ফের দখলদারিত্ব কায়েম রোধ হয়নি। এ ব্যাপারে প্রশাসনকে সতর্ক থেকে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
মৌলভীবাজার সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কায়সার হামিদ সমকালকে বলেন– শেরপুর, সরকার বাজারসহ বিভিন্ন হাটবাজারে এর আগে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। সম্প্রতি ওই সব বাজারে সওজের জায়গা দখলমুক্ত করতে সার্ভে করা হয়েছে। শিগগিরই অবৈধ দোকানপাট ও স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করা হবে।