আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের সংস্কৃতি তুলে ধরলে অনুপ্রাণিত করা হবে : ফারুকী
Published: 19th, June 2025 GMT
সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে যারা তুলে ধরবে বা স্বীকৃতি অর্জন করবে তাদের আমরা অনুপ্রাণিত করা হবে। যে কোনো মিউজিক, সিনেমা, ফটোগ্রাফি, থিয়েটার ও আর্কিটেকচারসহ সবক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য হবে।’
বুধবার ১৮ জুন সচিবালয়ে বাংলাদেশি নির্মাতা মেহেদী হাসানের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ৫৯তম কার্লোভি ভ্যারি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে স্থান পাওয়ায় সংস্কৃতি উপদেষ্টা অভিনেতা মোস্তফা মনোয়ার ও সাউন্ড ডিজাইনার অরন্যক পৃথিবীকে ফুল দিয়ে বরণ করে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় দেশের তরুণ নির্মাতার এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিকে একটি গর্বের মুহূর্ত হিসেবেও অভিহিত করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, বিশেষভাবে উল্লেখ্য ইতোপূর্বে কান চলচ্চিত্র উৎসবের পূর্বে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আলী-র নির্মাতা আদনান আল রাজিবসহ মোট দুজনকে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় হতে সম্মাননা জানিয়ে প্যারিস যাওয়ার দুটি বিমান টিকেট প্রদান করা হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, মেহেদী হাসান পরিচালিত এবং রচিত চলচ্চিত্র চেক প্রজাতন্ত্রের মর্যাদাপূর্ণ কার্লোভি ভ্যারি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের প্রোক্সিমা প্রতিযোগিতা বিভাগের ১৩টি নির্বাচিত চলচ্চিত্রের একটি হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। উৎসবে বিশ্বপ্রিমিয়ারের আগেই বিশ্বব্যাপী বিক্রয়ের (বাংলাদেশ ও সুইজারল্যান্ড ব্যতীত) জন্য অধিকার কিনে নিয়েছে ব্যাংককভিত্তিক আন্তর্জাতিক বিক্রয় সংস্থা ডাইভার্সন।
খনা টকিজ প্রযোজনা সংস্থার ব্যানারে রুবাইয়াত হোসেন ও আদনান ইমতিয়াজ আহমেদ-এর প্রযোজনায় নির্মিত এবং সিনেমা কোকন এর সহ-সহযোগিতায় এ চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয়েছে।
উৎসবে বাংলাদেশ থেকে সিনেমাটির একটি দল অংশ নিচ্ছে। তাদের এই সাফল্যকে শ্রদ্ধা জানাতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় দলের একজনের বিমানভ্রমণ ব্যয় বহন করবে বলে উপদেষ্টা ঘোষণা করেন ও সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: চলচ চ ত র
এছাড়াও পড়ুন:
প্রার্থনার সুরে শেষ হলো ‘ফাতেমা রানীর’ তীর্থোৎসব
পাহাড়ের আঁকাবাঁকা প্রায় দুই কিলোমিটারেরও বেশি উঁচুনিচু ঢালু পথ পাড়ি দিয়ে আলোক শোভাযাত্রা করে করলেন হাজারো খৃষ্ট ভক্ত। মা মারিয়ার আশীর্বাদপ্রাপ্ত শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত ‘বারোমারি সাধু লিওর খ্রিষ্টধর্মপল্লি’ তে ছিলো এ বছরের আয়োজন।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) সকাল থেকে শুরু হয় ক্যাথলিক খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ‘ফাতেমা রানীর’ তীর্থোৎসব। দুই দিনব্যাপী এই তীর্থোৎসব শেষ হয়েছে গতকাল শুক্রবার জীবন্ত ক্রুশের পথ ও পবিত্র মহাখ্রিষ্টযাগের মধ্যে দিয়ে।
এ উৎসবে শুধু ক্যাথলিক খ্রিষ্টানই নন, অন্য ধর্মাবলম্বীরাও প্রতিবছর অংশ নেন। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। উৎসবের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভ্যাটিকান সিটির রাষ্ট্রদূত কেভিন এস র্যান্ডেল।
এসময় জেলা প্রশাসক (ডিসি) তরফদার মাহমুদুর রহমান ও পুলিশ সুপার (এসপি) আমিনুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আয়োজক কমিটি জানায়, প্রতিবছর অক্টোবর মাসের শেষ বৃহস্পতি ও শুক্রবারে এই তীর্থযাত্রার আয়োজন করা হয়। প্রধান পৌরহিত্যকারী ন্যুনসিওকে বরণ, তীর্থের জুবিলী উদজাপন, পুর্নমিলন সংস্কার, পবিত্র খিষ্টযাগ, জপমালার প্রার্থন, আলোক শোভাযাত্রা, সাক্রান্তের আরাধনা, নিরাময় অনুষ্ঠান, ব্যক্তিগত প্রার্থনা ও নিশি জাগরণের মধ্য দিয়ে প্রথম দিনের অনুষ্ঠান শেষ হয়। শুক্রবার সকাল আটটায় জীবন্ত ক্রুশের পথ অতিক্রম এবং সকাল ১০টায় মহাখ্রিষ্টযোগের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এবারের তীর্থোৎসব।
১৯৪২ সালে ৪২ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় বারোমারি সাধু লিওর ধর্মপল্লি। ১৯৯৮ সালে প্রয়াত বিশপ ফ্রান্সিস এ গোমেজ স্থানটিকে ‘ফাতেমা রানীর তীর্থস্থান’ হিসেবে ঘোষণা করেন। তখন থেকেই প্রতিবছর আয়োজিত হয়ে আসছে এই ধর্মীয় উৎসব। এ বছর প্রায় ৩০-৪০ হাজার দেশি-বিদেশি রোমান ক্যাথলিক তীর্থযাত্রী অংশ নিয়েছেন উৎসবে। সার্বিকভাবে উৎসব এলাকা ছিল আলো, প্রার্থনা ও শান্তির আবহে মোড়ানো।
রংপুর থেকে আসা তীর্থযাত্রী রিপন আরেং বলেন, “সবাই যখন মোমবাতি প্রজ্বলন করে প্রার্থনা করতে করতে পাহাড়ি আকাঁবাঁকা পথ অতিক্রম করছিলেন, তখন পাহাড় আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছিল। তীর্থে আমরা মা মারিয়ার কাছে প্রার্থনা করতে এসেছি।”
চট্টগ্রাম থেকে আসা রীতা নকরেক বলেন, “পুত্রবধূর সন্তান হচ্ছিল না। গতবার মানত করার পর এবার নাতী পেয়েছি। তাই এবার নাতীকে নিয়ে আবার এসেছি।”
গাজীপুর থেকে পরিবারের সঙ্গে আসা শিক্ষার্থী ঝর্ণা আরেং বলেন, “মারিয়ার কাছে এলে মনে একধরনের শান্তি পাই। আমরা প্রার্থনা করি যেন জীবনের দুঃখ-কষ্ট দূর হয়। প্রতিবছর এই সময়টার অপেক্ষায় থাকি।”
শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, “আমরা এই তীর্থযাত্রাকে নিরাপদ ও ঝুঁকি মুক্ত রাখতে তিন স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থায় রেখেছি। পাঁচ শতাধিক পুলিশ পোশাকে এবং সাদা পোশাকে দ্বায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও র্যাব, বিজিবি, এপিবিএন ও সেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। যে কোন ঝুঁকি মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত আছি।”
শেরপুর জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, “উৎসবটি দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ব্যবস্থাপনায়। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন দীর্ঘ ১৫ দিন ধরে সহযোগীতা করে আসছে। এবারের তীর্থযাত্রায় সারাদেশের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে তাদের উৎসব পালন করেছে।”
ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশের বিশপ পনেন পল কুবি সিএসসি বলেন, “এ উৎসবের মাধ্যমে বিশ্ব মানবতার কল্যাণে প্রার্থনা করা হয়েছে। ধর্মীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এ তীর্থে দেশ-বিদেশের হাজারো মানুষ সমবেত হয়েছেন। তাঁরা দুই দিনব্যাপী তীর্থে নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন। মা ফাতেমা রানীর কাছে দেশ ও মানবজাতির কল্যাণে প্রার্থনা শেষে যার যার বাড়ি ফিরে যাবেন।”
ঢাকা/তারিকুল/এস