ইরাকে অগ্নিদগ্ধ বাংলাদেশি তরুণের মৃত্যু, মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের কারণে লাশ পেতে অনিশ্চয়তা
Published: 20th, June 2025 GMT
ইরাকের রাজধানী বাগদাদে জেনারেটর বিস্ফোরণে অগ্নিদগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মোহাম্মদ আলী (২৫) নামের এক বাংলাদেশি তরুণের মৃত্যু হয়েছে। গত বুধবার সেখানকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। পরিবারের লোকজন গতকাল বৃহস্পতিবার এ খবর জানতে পারেন।
ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের কারণে আলীর মরদেহ দেশে আনা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাহায্য চেয়েছেন তাঁরা।
আলী ভোলা সদর উপজেলার বাপ্তা ইউনিয়নের পূর্ববাপ্তা চেউয়াখালী গ্রামের সালেহ আহমেদের ছেলে। ২০২০ সালে আলী ইরাকে যান। সেখানে বাগদাদের একটি কোম্পানিতে কাজ নেন তিনি। তাঁর আয়ে ৫ বোন, এক ভাই ও মা-বাবাসহ ৯ সদস্যের পরিবারটি চলত। ১৫ জুন বাগদাদে কর্মক্ষেত্রের জেনারেটর কক্ষে আগুন লেগে অগ্নিদগ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন আলী।
আলীর মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর তাঁর গ্রামের বাড়িতে ভিড় করেন স্বজন ও প্রতিবেশীরা। গতকাল বিকেলে চেউয়াখালীতে গিয়ে দেখা যায়, আলীর পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন তাঁরা। আলীর বাবা সালেহ আহমেদ বাড়ির এক পাশে বসে বিড়বিড় করে কথা বলছিলেন আর কাঁদছিলেন। তিনি বলেন, ‘বাড়ি অইলো, ঘর অইলো, তুমি (আলী) বুকের ধন আর ফিরা আইলা না। তোমারে বিয়ে করান অইলো না, তোমার নতুন বউ আইলো না। নতুন দালানে তোলা অইলো না।’
স্বজন ও প্রতিবেশীরা জানান, মোহাম্মদ আলী সর্বশেষ গত বছরের নভেম্বর মাসে দেশে এসেছিলেন। তখন তাঁর বিয়ে করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু ভাঙাচোরা ঘরের কারণে বিয়ে পেছানো হয়। ওই অবস্থায় ইরাক ফিরে যান আলী। কোম্পানির মালিকের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করেন। বাড়ির কাজও প্রায় শেষ। আলীর বাবার কত আশা ছিল, ছেলে দেশে ফিরলে বিয়ে দেবেন। এ জন্য বাড়িতে পাকা দালান নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন। পাত্রীও দেখা শুরু করেছেন। কিন্তু তাঁদের সেই স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।
আলীর পরিবারের সদস্যরা জানান, আলীর মরদেহ দেশে আনার ব্যাপারে মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। লাশ দেশে পাঠানোর ব্যাপারে তাঁদের কোনো আপত্তি নেই। আর ইরাকে দাফন করতে চাইলেও করতে পারেন। কিন্তু ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে মরদেহ আনা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। ইরাক থেকে আপাতত ফ্লাইট বন্ধ। এ ছাড়া আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতেও সময় লাগবে। আলীর কর্মক্ষেত্রের এসব তথ্য পেয়ে পরিবারটি আরও বেশি দুশ্চিন্তায় পড়েছে। যে করেই হোক মরদেহ দেশে আনতে চান তাঁরা। শেষবারের মতো আলীকে দেখতে চান তাঁরা।
ভোলার জেলা প্রশাসক আজাদ জাহান বলেন, ‘এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের কাছে কোনো চিঠি আসেনি। হয়তো অফিস খুললে আসতে পারে। তখন পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য
দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।
আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।
লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।
আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।
কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।