সম্পদের হিসাব নিয়ে বিরোধ ছিল প্রবাসীর
Published: 1st, July 2025 GMT
সৌদি আরবপ্রবাসী মনির হোসেন দেশে আসার পর জমি এবং বাড়ি ভাড়ার টাকার হিসাব নিয়ে তাঁর কেয়ারটেকার রফিকুল ইসলামের বিরোধ দেখা দেয়। রাজধানীর মগবাজারে আবাসিক হোটেল থেকে স্ত্রী-সন্তানসহ মনিরের লাশ উদ্ধারের পরদিন সোমবার রাতে দায়ের হওয়া মামলায় এই অভিযোগ করা হয়েছে। তবে প্রবাসীর সঙ্গে জমি নিয়ে কোনো বিরোধ ছিল না বলে গতকাল মঙ্গলবার আদালতে দাবি করেন রফিকুল। তাঁকে দু’দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
তিনজনের মরদেহ উদ্ধারের মামলায় বাদী হয়েছেন মনিরের বড় ভাই ইতালি প্রবাসী নুরুল আমিন মানিক। এজাহারে বলা হয়, রফিকুল মনিরের চাচাতো চাচা। দু’জনের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার ভোলাকোট ইউনিয়নের দেহলায়। তবে রফিকুল থাকেন ঢাকার কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদে। সেখানে মনিরের দুটি বাড়ি দেখভাল করেন তিনি। তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক ছিল। সে সুবাদে মনির প্রবাসে থেকে রফিকুলের মাধ্যমে গ্রামে এবং কেরানীগঞ্জে জমি ও বাড়ি কেনেন। সবই দেখাশোনা করেন রফিকুল।
এজাহারে আরও বলা হয়, ঈদুল আজহার আগে মনির দেশে আসেন। তাঁর সম্পত্তি আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী হোটেলে খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে অথবা অন্য কোনো উপায়ে মনির, তাঁর স্ত্রী নাসরিন আক্তার স্বপ্না ও প্রতিবন্ধী বড় ছেলে নাঈম হোসেনকে হত্যা করেছে।
তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের হওয়া হত্যা মামলায় কেয়ারটেকার রফিকুলকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে গতকাল আদালতে নেওয়া হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা থানার এসআই জালাল উদ্দিন আদালতে তাঁর সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। তখন ঢাকার মহানগর হাকিম মাহবুব আলম বলেন, এটি একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা। পত্রপত্রিকায় ঘটনাটি এসেছে। একটি পুরো পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
আসামিপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন বলেন, এ ঘটনায় রফিকুলও দুঃখিত। মনির দেশে এলে তাঁর মাধ্যমেই হোটেলে উঠতেন। খাবার উনিও খেয়েছেন। তখন বিচারক বলেন, একজন অসুস্থ হতে পারে, পুরো পরিবার মারা গেল! রফিকুলের বক্তব্য শুনতে চান বিচারক।
তখন রফিকুল বলেন, পুলিশ যা বলছে, এর অতিরিক্ত আমি জানি না। ভর্তা-ভাত হোটেল থেকে এক বক্স ভাত, মুরগির রেজালা, আলু ভর্তা আর শুঁটকি ভর্তা কিনেছিলাম। মনিরের স্ত্রী শুঁটকি পছন্দ করতেন। এ জন্য শুঁটকি নিতে বলা হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, আমি আর মনির ওই হোটেলে নান, শিককাবাব আর ফালুদা খাই। শুনানি শেষে আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত শনিবার মনির ছেলের চিকিৎসার জন্য স্ত্রীসহ গ্রামের বাড়ি থেকে এসে রাজধানীর মগবাজার মোড়ে সুইট স্লিপ আবাসিক হোটেলে ওঠেন। পরদিন সকালে তাদের মরদেহ পাওয়া যায়।
রমনা থানার ওসি গোলাম ফারুক সমকালকে বলেন, মৃত্যুর খবর পেয়ে সোমবার সন্ধ্যায় মনিরের বড় ভাই নুরুল আমিন ইতালি থেকে দেশে আসেন। রাতে তিনি হত্যা মামলা করেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: হত য মরদ হ প রব স মন র র
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য
দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।
আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।
লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।
আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।
কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।