১. প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ারিং: এআইয়ের সঙ্গে কথা বলুন

চ্যাটজিপিটিকে কিছু জিজ্ঞেস করে হতাশ হয়েছেন? চ্যাটবট আপনাকে এলোমেলো উত্তর দিয়েছে? এটা খুব সাধারণ ব্যাপার। হাল ছেড়ে দেবেন না। কারণ, আপনি এআইয়ের সঙ্গে সঠিকভাবে কথা বলতে পারেননি। তাই আপনাকে চ্যাটবট হতাশ করেছে। ওর থেকে সঠিক উত্তর পাওয়ার একটা গোপন রহস্য আছে। সেটা হলো প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ারিং। মানে এআইয়ের সঙ্গে এমনভাবে কথা বলুন, যাতে নিখুঁত ও নির্ভুল উত্তর দেয়। বোঝার সুবিধার্তে উদাহরণ দেওয়া যাক।

এআইকে শুরতেই আপনার পেশা জানিয়ে দিন। যেমন আপনি হতে পারেন একজন সেলস মার্কেটার বা আইনজীবী। পেশা জানালে এআই আপনাকে মার্কেটিং এক্সপার্ট বা দক্ষ আইনজীবীর মতো উত্তর দিতে পারবে। তারপর উদাহরণ দিন। পরিষ্কার করে বলুন আপনি কী চান। সবশেষে কোন ফরম্যাটে উত্তর চান, সেটাও উল্লেখ করুন। যেমন বলতে পারেন, ‘আমাকে একটা টেবিল বানিয়ে দাও। টেবিলের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ যথাক্রমে ৮ ও ৩ মিটার। টেবিলের ওপর একটা ফুলদানি থাকবে সবুজ রঙের। পাশে থাকবে একটা টিউব লাইট।’ এভাবে বিস্তারিত বলুন।

মানে ভাবুন, আপনি কোনো বন্ধুকে নিজের বাড়ির ঠিকানা দিচ্ছেন। যত ভালোভাবে ঠিকানা বুঝিয়ে দিতে পারবেন, বন্ধু তত সহজে আপনার বাড়ি পৌঁছে যাবে। শুধু যদি বন্ধুকে বলেন, ‘আমার বাড়ি ঢাকা বড় মার্কেটের পাশে’, তাহলে তা খুঁজে পেতে বন্ধুর অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে। কিন্তু যদি সড়ক ও বাসা নম্বরসহ বিস্তারিত ঠিকানা দেন, তাহলে সহজে আপনার বাসা খুঁজে পাবে। এটাও অনেকটা সে রকম। সবকিছু স্পষ্টভাবে বলে দিন, তাহলে নিজের পছন্দমতো সঠিক উত্তর পাবেন।

সহজে আরেকটি কাজ করতে পারেন। ধরুন, আপনি চ্যাটবটকে দিয়ে কোনো উত্তর লিখিয়ে নিতে চান। তাহলে জেমিনি বা গ্রকের মতো অন্য কোনো এআই দিয়ে প্রম্পট লিখে নিন। তাহলে আপনার আর বিস্তারিত না লিখলেও চলবে। অন্য একটা এআই আপনার হয়ে কাজটা করে দেবে। অবশ্য এ ধরনের প্রম্পট নিজের হাতে লেখাই ভালো। এতে দক্ষতাও বাড়বে।

২.

সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট: কোডিং না জেনেও বানান অ্যাপ

আপনার মাথায় দারুণ সব আইডিয়া আছে, কিন্তু কোডিং করতে পারেন না? কোডিংয়ের কথা শুনলেই মাথার মধ্যে কেমন প্যাচ লেগে যায়? এখন আর এটা কোনো সমস্যা নয়। পাইথন বা জাভাস্ক্রিপ্ট জানারও দরকার নেই। এই সমস্যার সমাধান করে দেবে এআই। এ জন্য আপনাকে কম্পিউটার সায়েন্স পড়ে আসতে হবে না। রেপলাইট (Replit) বা কার্সর (Cursor)-এর মতো টুল দিয়ে সহজেই কোড লিখিয়ে নেওয়া যায়।

তবে এখানে একটা কথা জানিয়ে রাখা ভালো। কোডার না হয়েও আপনি কোডিং করতে পারবেন ঠিকই, কিন্তু ভালো করা মুশকিল হবে। কোডিংয়ের ব্যাপারে আপনাকে দক্ষ হতে হবে, তা-ও বলছি না। অন্তত প্রাথমিক ধারণাটা থাকা চাই। তা না হলে ভবিষ্যতে আপনার বানানো অ্যাপে কোনো সমস্যা হলে তা ধরতেই পারবেন না। তাই এসব ব্যাপারে একটু জ্ঞানার্জন করে নিলে আপনিই হয়ে উঠবেন দক্ষ সফটওয়্যার ডেভেলপার।

ভাবছেন, আপনি শুরু করবেন কোথা থেকে? খুঁজলে দেখবেন, মানুষের হাজারটা সমস্যা আছে। আপনাকে শুধু খুঁজে বের করতে হবে, এর মধ্যে কোন সমস্যায় মানুষ বেশি ভোগে। সমস্যা খুঁজে পেলে এআই দিয়ে সেই সমস্যার সমস্যার সমাধান বানিয়ে বিক্রি করে দিন। দেখবেন, সেসব মানুষ আগ্রহের সঙ্গে কিনছে। এমনকি ঠিকভাবে প্রম্পট দিতে পারলে আপনি নিজেই বানিয়ে নিতে পারবেন চ্যাটজিপিটির মতো একটি চ্যাটবট।

৩. ডিজাইন ও আর্ট: সৃজনশীলতা উন্মোচনের এই তো সময়

আগে এআইয়ের বানানো ছবি দেখতে খুব অদ্ভুত লাগত। তবে এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে। এআই এখন নামকরা শিল্পীদের মতো ছবি আঁকতে পারে। আসল ছবি ও এআইয়ের আঁকা ছবি পাশাপাশি রাখলে আসলটা চেনা মুশকিল হয়ে যায়। এআইয়ের সাহায্যে এখন রিয়েলিস্টিক ছবি, লোগো, এমনকি ওয়েবসাইটও ডিজাইন করা যায়। ফটোশপের পরিবর্তে এখন মিডজার্নি, লিওনার্দো বা দাল-ইর মতো টুল দিয়ে নিজেই বানাতে পারবেন পেশাদার ছবি বা লোগো। আপনার হাতে আঁকা স্কেচও এআইয়ের সাহায্যে আরও সুন্দর করে নিতে পারেন।

৪. ভিডিও এডিটিং: ঘণ্টার কাজ শেষ হবে মিনিটে

আগে ভিডিও এডিট করতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হতো। কেটে বাদ দিতে হতো অদরকারি কথা কিংবা অপ্রয়োজনীয় অংশগুলো। এখন এআই এসব বিরক্তিকর কাজ করে দিতে পারে খুব দ্রুত। রানওয়ে এমএল (Runway ML), পিক্টোরি (Pictory), ডিস্ক্রিপ্ট (Descript)-এর মতো টুল ভিডিও এডিটিংয়ের ভোল পাল্টে দিয়েছে। এসব দিয়ে আপনি অনায়াসে অপ্রয়োজনীয় কথা, বিরতি, ব্যাকগ্রাউন্ড নয়েজ মুছে ফেলতে পারবেন। যোগ করতে পারবেন সাবটাইটেল। এমনকি স্ক্রিপ্ট থেকে ভিডিও বানাতে পারবেন রেকর্ডিং ছাড়াই। আপনি কনটেন্ট ক্রিয়েটর হন বা ব্যবসায়ী, এআই এডিটিং টুলগুলো আপনার কাজের সময় ৭০ শতাংশ কমিয়ে দেবে। কাজের মানও থাকবে পেশাদার পর্যায়ে। তাহলে আর দেরি কেন, আজই কাজে লেগে যান!

আরও পড়ুন৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সে যেভাবে ত্বকের যত্ন নেবেন১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫৫. লেখালেখি: নিজের ভাবনাকে রূপ দিন

সবচেয়ে ভালো লেখকদের যে কেবল ভাষায় ভালো দখল থাকে, তা নয়; তাঁরা ভালো আইডিয়াও দেন। এআই আপনাকে সেই আইডিয়া বের করতে সাহায্য করবে। ভাইরাল কনটেন্টের বিষয়ও খুঁজে দেবে। এমনকি আপনার বা আপনার ক্লায়েন্টের লেখার স্টাইলও নকল করতে পারবে।

এআই দিয়ে বেশির ভাগ কাজ করিয়ে নিয়ে নিজে সম্পাদনা করতে পারেন। চ্যাটজিপিটি, জ্যাসপার বা কপি ডটএআই দিয়ে ব্লগ পোস্ট, সেলস কপি বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ক্যাপশন লিখতে পারবেন। লেখার শিরোনাম বানিয়ে নিতে পারেন এআইয়ের সাহায্যে। লেখার মধ্যে কোনো ভুল আছে কি না, তা-ও এখন এআই বলে দিতে পারে। ২ হাজার শব্দের একটা লেখাকে চাইলে ৫০০ শব্দে সাজিয়ে দিতে পারে এআই।

৬. কনটেন্ট মার্কেটিং: সব জায়গায় থাকুন অনায়াসে

বিখ্যাত মার্কিন অভিনেতা আর্নল্ড শোয়ার্জনেগারের ‘আর্নল্ডস পাম্প ক্লাব’ শুনেছেন? এটা একটা জনপ্রিয় পডকাস্ট। অবাক করা বিষয় হলো, আর্নল্ড নিজে কখনো একটা পর্বও রেকর্ড করেননি। পুরো কাজটা করে দিয়েছে এআই। নিউজলেটার থেকে শুরু করে ভয়েস ক্লোন পর্যন্ত!

আপনিও এটা করতে পারবেন। এআই দিয়ে কনটেন্ট বানান, পুনরায় ব্যবহার করুন, সব প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে দিন। এমনকি এতে আপনার টিমও লাগবে না। সব কাজ এখন করে দেবে এআই। হঠাৎই আপনি নিজেকে দেখতে পাবেন সব জায়গায়।

অনলাইনে এখন ব্র্যান্ডিং হয়ে গেছে সহজ। ব্র্যান্ডিং বিভিন্ন উপাদান তৈরি করতে বড় টিমেরও দরকার নেই। ট্যাপলিও (Taplio), রিপারপাস ডটআইও (Repurpose.io) আর হাইপফিউরির (Hypefury) মতো টুল দিয়ে ব্লগ পোস্টকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের উপযোগী কনটেন্টে রূপ দিতে পারবেন। কনটেন্ট শিডিউল করতে পারবেন সব প্ল্যাটফর্মে। এমনকি সাপ্তাহিক নিউজলেটারও অটো জেনারেট করতে পারবেন।

৭. নো-কোড এআই অটোমেশন: ওয়ার্কফ্লোর জাদুকর হয়ে যান

দিনের বেশির ভাগ সময় আপনি কি একই কাজ বারবার করেন? মানে আপনার ম্যানুয়াল কাজ কি বেশি? যেমন ডেটা কপি করা, একই ই-মেইল পাঠানো, এক অ্যাপ থেকে অন্য অ্যাপে যাওয়া। এ ধরনের কাজে প্রচুর সময় নষ্ট হয়। তবে আপনি যদি এআই দিয়ে এসব সমস্যার সমাধান করতে পারেন, তাহলে ‘হিরো’ হয়ে যাবেন। সঙ্গে টাকা তো পাবেনই।

জ্যাপায়ার (Zapier) বা মেক (Make) দিয়ে গুগল শিট বা জিমেইলের মতো পছন্দের অ্যাপগুলো যুক্ত করতে পারেন। চ্যাটজিপিটি প্লাগইনস বা অটোজিপিটি দিয়ে সেসব চেইন তৈরি করে নিজের কাজ সহজ করে নিতে পারেন।

আরও পড়ুনকিনোয়ায় আছে চাল ও গমের চেয়ে বেশি প্রোটিন ০২ জুলাই ২০২৫৮. ডেটা অ্যানালাইসিস: এলোমেলো তথ্যকে সাজিয়ে নিন

সব প্রতিষ্ঠানেই প্রচুর ডেটা থাকে। কিন্তু বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান জানে না সেসব দিয়ে কী করতে হয়। এখানেই আপনার সুযোগ। এআই দিয়ে এলোমেলো স্প্রেডশিট পরিষ্কার করুন, সমৃদ্ধ করুন এবং সেখান থেকে খুঁজে বের করুন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। চ্যাটজিপিটি অ্যাডভান্সড ডেটা অ্যানালাইসিস বা পাওয়ার বি কোপাইলট দিয়ে ফাইল আপলোড করুন। সাধারণ ভাষায় প্রশ্ন করুন। দেখবেন, এআই আপনাকে চার্টসহ তাৎক্ষণিক ফলাফল তৈরি করে দেবে। এভাবে আপনি আপনার প্রতিষ্ঠানকে স্মার্ট সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করতে পারেন। এতে প্রতিষ্ঠানেরও লাভ, আপনারও।

৯. এজেন্ট ডেভেলপমেন্ট: ডিজিটাল কর্মী বানান

এআই এজেন্টের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এরা ২৪/৭ কাজ করে। কখনো অভিযোগ করে না। সব সময় ভালো কাজ করে দেয়। ছুটিও চায় না। আপনি যদি কোনো কাজ এআইকে বোঝাতে পারেন, ট্রেইন করতে পারেন এবং এর পারফরম্যান্স দেখতে পারেন, তাহলে আপনি সফল হবেন। এককথায় রোবট বানিয়ে ভালো অর্থ উপার্জন করতে পারেন। অটোজিপিটি, এজেন্টজিপিটি বা ফ্লোওয়াইস দিয়ে এমন বট বানানো সম্ভব। এসব বট গবেষণা করবে, আপনার ব্যক্তিগত ই-মেইল পাঠাবে, অ্যাপয়েন্টমেন্ট সামলাবে, কাস্টমার সাপোর্টও দেখভাল করবে। উন্নত টুলগুলোতে মেমোরি, এপিআই এবং নির্দেশনা যোগ করতে পারবেন। ফলে এসব ক্রমাগত উন্নতি করতে থাকবে। আপনি শুধু অটোমেট করবেন না, ওকে দায়িত্বও দেবেন।

সহজ কথায়, এআই আপনার বিকল্প হওয়ার আগে আপনিই একটা এআই বানান। আপনার কোনো বিশেষ ডিগ্রি বা কাজের অভিজ্ঞতার দরকার নেই। শুধু কৌতূহল আর চেষ্টা থাকলেই হবে। এআই-বিপ্লব চলছে। তাই আর অপেক্ষা না করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করুন। কিছু বানান। যা শিখছেন, তা ভাগাভাগি করুন।

শুরুতে আপনাকে এই ৯টি দক্ষতা শিখতে হবে না, শুধু একটা শিখুন। এই ৯টির মধ্যে যেটায় আপনি আগ্রহী, সেটা নিয়েই কাজ শুরু করুন। আরও সহযোগিতা পেতে অনলাইনে সার্চ করুন বা এআইকেই জিজ্ঞেস করুন। ইউটিউবে এমন ভিডিও থাকলে, তা-ও একটু দেখে নিতে পারেন। দেখে নিতে পারেন ১০ মিনিটের একটা টিউটরিয়াল। দেখবেন, আপনি প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুত শিখছেন। এসব শিখলে আপনি অন্তত ৯৫ শতাংশ মানুষের চেয়ে এগিয়ে থাকবেন।

সূত্র: মিডিয়াম

আরও পড়ুনজয়া আহসানের জন্মদিনে দেখে নিন ১৫ বছরের ১৫টি ছবি ০১ জুলাই ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এআইয় র স এআই আপন ই আপন র সমস য র ই আপন ক কনট ন ট আপন র ব এআই দ য ব র কর ক জ কর র কর ন প রব ন র একট ন এআই

এছাড়াও পড়ুন:

ইনসাফভিত্তিক মানবিক দেশ প্রতিষ্ঠার এখনই সময়: তারেক রহমান

বিএনপি জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে চায় জানিয়ে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, একটি সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণের সুযোগ তৈরি হয়েছে। জনগণের সরাসরি ভোটে জবাবদিহিমূলক ইনসাফভিত্তিক, গণতান্ত্রিক ও মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার এখনই সময়। 

আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী (বিসিএফসিসি) সম্মেলন কেন্দ্রে জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির সভায় দলীয় কর্মসূচির উদ্বোধক হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন।

তারেক রহমান বলেন, ‘২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট পলায়নের পরই আমার প্রথম বক্তব্যে বলেছিলাম- তার মধ্যে ছিল- গণঅভ্যুত্থানে যারা তাদের সন্তান হারিয়েছেন সেই মায়েদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। অনেকেই প্রিয়তম স্বামী ও প্রিয়তম ভাইকে হারিয়েছেন। অনেক ত্যাগের বিনিময়ে ৫ আগস্ট আরেকটি বিজয় দেখেছে বাংলাদেশ। একজন শহীদ শুধু আপনাদের স্বজন নয়, তারা দেশের ও মুক্তিকামী জনতার গৌরব। তাদেরকে জানাই শ্রদ্ধা।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের মুক্তিযোদ্ধাদের যেমন মানুষ ভোলেনি তেমনই চব্বিশের যোদ্ধাদেরও জাতি ভুলবে না। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বিভিন্ন স্থাপনা শহীদদের নামে নামকরণের চিন্তা আমাদের আছে। দেশ ও জনগণের স্বার্থে যারা আত্মত্যাগ করেছেন তাদের জন্য কিছু ভাবনা তুলে ধরছি। আমরা দেশকে একটি চিরস্থায়ী ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে চাই, যেখানে জনগণের হাতে থাকবে সকল ক্ষমতা। তবেই রাজনৈতিক দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়ন কমে আসবে বলে বিশ্বাস করি।’

চব্বিশের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তিতে ৩৬ দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন শুরু করেছে বিএনপি। মঙ্গলবার সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে ‘গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪: জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’ শীর্ষক আলোচনাসভা এবং শহীদ পরিবারের সম্মানে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিএনপি। অনুষ্ঠানে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। এছাড়াও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি বক্তব্যের মাধ্যমে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।

অনুষ্ঠানে শহীদ পরিবার, আহত নেতাকর্মী ও সমর্থকদের পাশাপাশি ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত ৬৩টি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা, বুদ্ধিজীবী, সিনিয়র সাংবাদিকসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষও উপস্থিত ছিলেন। শহীদ পরিবারকে ক্রেস্ট ও সম্মাননা দেওয়া হয়। অভ্যুত্থানের একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।

তারেক রহমান বলেন, ‘দেড় দশকের আন্দোলনে গুম-খুনের শিকার হয়েছেন বহু মানুষ। অপহরণের তালিকা অনেক দীর্ঘ। শুধু জুলাই আন্দোলনে বিএনপির ৪২২ জনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অন্তত দেড় মানুষ শহীদ হয়েছেন। ৩০ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। এক হাজারের বেশি পঙ্গু হয়েছেন। শিশুরও শহীদ হওয়া থেকে বাদ যায়নি। বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রতিটি অধ্যায় এভাবে শহীদ আবু সাঈদ, ওয়াসিম ও মুগ্ধর মতো অনেকেই জীবন দিয়েছেন। মানুষের প্রশ্ন যে এভাবেই কি মানুষ জীবন দিতে থাকবে। তারা তো কানাডায় বেগমপাড়া করার দাবিতে আন্দোলন করেনি, জীবন দেয়নি।’

তিনি বলেন, ‘একটি দেশের জন্য ৫৪ বছর কম সময় নয়। এই সময়ে মানুষের ত্যাগ আমরা ভুলে যেতে চাই না। বরং যারা দেশ ও জনগণের কল্যাণে রাজনীতি করি তাদের অঙ্গীকার হলো- নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও সুশৃঙ্খলর রাজনীতি, ওয়াদা পূরণের রাজনীতি।’ 

এ সময় ভবিষ্যতে আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে সমন্বয় রেখে দেশ গঠনের কিছু পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন তারেক রহমান। রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা স্মরণ করিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশ পরিচালনার সুযোগ পেলে আমরা জাতীয় সরকার গঠন করে কাজ করব। জাতীয় স্বার্থে আমরা সবাই এক। জাতীয় ঐক্যে সব দলের এক হওয়া জরুরি নয়। তাঁবেদার অপশক্তি যাতে মাথাচড়া দিতে না পারে সেদিকে জাতীয় ঐক্য অটুট রয়েছে এবং থাকবে ইনশাআল্লাহ।’

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ‍ও ‘জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি পালন কমিটির আহ্বায়ক রুহুল কবির রিজভীর সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন এই কমিটির সদস্যসচিব ও বিএনপির গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান। আরও বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সালাহউদ্দিন আহমদ, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার, বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকী, এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, জাতীয় গণফ্রন্টের সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব আরিফুল ইসলাম আদিব, এনডিএম’র চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরীর সভাপতি মাওলানা জোনায়েদ আল হাবিব, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির আহমদ আলী কাসেমি, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, কেন্দ্রীয় নেতা নিতাই রায় চৌধুরী, আমানউল্লাহ আমান, আব্দুস সালাম, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, ইসমাইল জবিহউল্লাহ, এম এ মালিক, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, খায়রুল কবির খোকন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, আব্দুস সালাম আজাদ, ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মীর সরফত আলী সপু, নজরুল ইসলাম আজাদ, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, ব্যারিস্টার মীর হেলাল, মিফতাহ সিদ্দিকী, নিলুফার চৌধুরী মনি, ড. মাহদী আমিনসহ সারাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আহত ব্যক্তি, শহিদ পরিবার ও এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। ১২ দলীয় জোটের সৈয়দ এহসানুল হুদা, শাহাদাত হোসেন সেলিম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহিউদ্দিন ইকরাম, পেশাজীবী ও বিশিষ্টজনদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, যুগান্তর সম্পাদক কবি আবদুল হাই শিকদার, সংগ্রাম সম্পাদক আযম মীর শাহীদুল আহসান, বাসস’র চেয়ারম্যান সাংবাদিক আনোয়ার আলদীন, অধ্যাপক ড. শামসুল আলম, আমিরুল ইসলাম কাগজী, সৈয়দ আবদাল আহমদ, ড. আব্দুল হাই সিদ্দিকী, অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক লুৎফর রহমান, প্রকৌশলী মো. মোস্তফা-ই জামান সেলিম (সিআইপি), প্রকৌশলী একেএম আমিরুল মোমিন বাবলুসহ কয়েক হাজার নেতাকর্মী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফেডারেল রিজার্ভের প্রধানকে এখনই পদত্যাগ করতে বলেছেন ট্রাম্প
  • ইনসাফভিত্তিক মানবিক দেশ প্রতিষ্ঠার এখনই সময়: তারেক রহমান
  • রাজনৈতিক প্রচারে এআইয়ের ভিডিও, রটানো হয় কুৎসাও