তাসকিনের কফি শেষ হওয়ার আগেই পাঁচ উইকেট নেই
Published: 3rd, July 2025 GMT
একটি সুন্দর দিনের গল্প লেখার কথা ছিল। কারণ, বোলিং ভালো হওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই উজ্জীবিত থাকার কথা ব্যাটারদের। সেটাই দেখা গেছে টপঅর্ডারে। ওপেনিং জুটি দ্রুত আউট হলেও নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে দারুণ খেলছিলেন তানজিদ হাসান তামিম। তারা সেট হওয়ায় নির্ভার ছিল ড্রেসিংরুম। দিনের সেরা বোলার তাসকিন আহমেদ এক কাপ গরম কফি উপভোগ করছিলেন চোখে-মুখে জয়ের স্বপ্ন এঁকে। ৩০ বছর বয়সী ফাস্ট বোলার বুঝতেই পারেননি কফি শেষ হওয়ার আগেই ব্যাটিং লাইনআপে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। তিনি চেয়ে চেয়ে দেখলেন সব কেমন ধ্বংসের পথে। কফি ফেলে প্যাড পরে দৌড়ে গেলেন ২২ গজে। যে পথে গেলেন, শূন্য হাতে ফিরেও এলেন সেই পথে। লিটন কুমার দাস, মেহেদী হাসান মিরাজের মতো নামের পাশে শূন্য লিখে ফেরেন ড্রেসিংরুমে। ১০০ থেকে ১০৫ রানে ৭ উইকেটের পতনে পরাজয়ে শুরু সিরিজ।
অথচ শ্রীলঙ্কাকে ২৪৪ রানে বেঁধে ফেলার পর ব্যাটিংয়ের ভালো শুরু ছিল। সেটা দেখে ৬-৭ ওভার হাতে রেখে ম্যাচ জয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলেন তাসকিন। অনিশ্চয়তার ক্রিকেট মুহূর্তে বোকা বানিয়ে দেয় তাঁকে। সংবাদ সম্মেলনে নিজের সেই হতাশার কথা বলতে বলতে আক্ষেপেও পুড়ছিলেন ব্যাটিং ব্যর্থতায় আরাধ্য জয় হাতছাড়া করে।
বাংলাদেশ শেষ আন্তর্জাতিক ওয়ানডে খেলেছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। মাঝে টেস্টের ব্যস্ততা দেশে-বিদেশে। সেদিক থেকে খেলার মধ্যেই ছিলেন তারা। তাই ৬ রানে ৭ উইকেট হারানোর অজুহাত দেওয়ার সুযোগ নেই। সেটা করার সাহস দেখাননি কেউ। বরং দলের সেরা পারফরমার তাসকিনকে সংবাদ সম্মেলনে পাঠিয়ে নিজেকে আড়াল করেন অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ।
কেন দলের এই হাল জানালেন তাসকিন, ‘আমরা বোলিং খুব ভালো করেছিলাম। ব্যাটিংয়ের শুরুটাও ভালো ছিল। ১ উইকেটে ১০০ রান হয়ে গিয়েছিল। সেখান থেকে বাজেভাবে কলাপস করি। মিডলঅর্ডারে ধস নামে। অথচ আমাদের মনে হয়েছিল, দ্রুত ম্যাচটি জিতে যাব।’ শান্তর রানআউটে বিপর্যয়ের শুরু। ১২৫ রানে নবম উইকেট হারালে পরাজয় নিশ্চিত হয়। ব্যবধানটা কত হবে, সেটাই ছিল দেখার। জাকের আলী ও মুস্তাফিজুর রহমানের কল্যাণে ধ্বংসস্তূপ থেকে লড়াই করায় ৭৭ রানে হারতে হয় ম্যাচ। যেখানে জাকের ৬৪ বলে ৫১ রান করে দেখান সেট হলে বড় ইনিংস খেলা সম্ভব। তাসকিনের মতে, “টপঅর্ডার ভালো খেলায় আমি কফি ‘চিল’ করছিলাম ড্রেসিংরুমে। হঠাৎ দেখি ৫ উইকেট নেই। কফি ফেলেই ছুটতে হয়। জেতা গেম হেরে গেছি। ক্রিকেটে এমনটা হয়। আমি নিশ্চিত, এই হারের পর কেউ স্বস্তিতে ঘুমাতে পারবে না।”
ইনজুরি কাটিয়ে দলে ফেরা তাসকিন গোড়ালির জড়তা নিয়েই সেরা বোলিং করলেন। নিজের বোলিং নিয়ে বলেন, ‘অনেক দিন পর ফেরায় একটু জড়তা ছিল। এর পরও চেষ্টা কম করিনি। পুরোপুরি ফিট থাকলে আরেকটু ভালো বোলিং করা যেত। আশা করি, দ্রুতই আগের মতো ছন্দে ফিরতে পারব।’ তাসকিন জানান, দেশের সেরা ক্রিকেটারদের নিয়েই শ্রীলঙ্কা এসেছে বাংলাদেশ। ভালো ক্রিকেট খেলতে কঠোর পরিশ্রমও করছেন তারা, ‘আমরা চেষ্টা করছি, কিন্তু হচ্ছে না। বেশ কিছুদিন ধরে ফল পাচ্ছি না। তাই বলে এভাবে চলতে পারে না। অবশ্যই ঘুরে দাঁড়াতে হবে। সে পথ বের করতে হবে আমাদের। আশা করি, সামনের ম্যাচে ভালো করব।’ প্রেমাদাসার কন্ডিশন বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্লো এবং লো হয়ে থাকে। সেই তুলনায় গতকালের উইকেট কিছুটা ভালো ছিল বলে জানান ডানহাতি এ বোলার। তাঁর মতে, ‘এখানে বড় স্কোর কমই হয়। পরে যারা ব্যাটিং করে তাদের ভালো করার রেকর্ডও কম। যদিও এই ম্যাচের উইকেট অতটা খারাপ ছিল না। জাকের আলী হাফ সেঞ্চুরি করে প্রমাণ করেছেন, সেট হলে বড় স্কোর করা সম্ভব।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: উইক ট
এছাড়াও পড়ুন:
পরাবাস্তবতার আবেদন কি ফুরিয়েছে
অবচেতনের মানচিত্র ধরে এক অন্তহীন অভিযাত্রা কবি–সাহিত্যিকেরা যুগ যুগ ধরে করে আসছেন। সাহিত্যের দীর্ঘ যাত্রাপথে এমন কিছু বাঁক আসে, যা তার গতিপথকে চিরতরে বদলে দেয়। পরাবাস্তবতা বা সুররিয়ালিজম ছিল এমনই এক যুগান্তকারী আন্দোলন, যা কেবল শিল্পের আঙ্গিক নয়; বরং শিল্পীর বিশ্ববীক্ষা এবং আত্মবীক্ষণকে সম্পূর্ণ নতুন এক দর্শন দান করেছিল। এটি ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ। এর মূল লক্ষ্য ছিল মানব মনের সেই গভীরে প্রবেশ করা, যেখানে যুক্তির আলো পৌঁছায় না; সেই অবচেতনের অন্ধকার মহাসাগর থেকে তুলে আনা বিস্মৃত স্বপ্ন, অবদমিত ইচ্ছা আর আদিম প্রবৃত্তির মণি–মুক্তা। পরাবাস্তবতা তাই কেবল একটি শিল্পরীতি নয়, এটি চেতনার শৃঙ্খলমুক্তির এক দুঃসাহসী ইশতেহার।
১৯২৪ সালে ফরাসি কবি ও লেখক আঁদ্রে ব্রেটন তাঁর ‘পরাবাস্তবতার প্রথম ইশতেহার’ (ম্যানিফেস্টো অব সুররিয়ালিজম) প্রকাশের মাধ্যমে এই আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। ব্রেটনের সংজ্ঞায়, পরাবাস্তবতা হলো, ‘বিশুদ্ধ মানসিক স্বয়ংক্রিয়তা, যার মাধ্যমে মুখ বা লেখনী দিয়ে অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে চিন্তার আসল কার্যকারিতাকে প্রকাশ করার ইচ্ছা পোষণ করা হয়। এটি যুক্তির সমস্ত নিয়ন্ত্রণ থেকে এবং সকল প্রকার নান্দনিক ও নৈতিক উদ্দেশ্য থেকে বিযুক্ত চিন্তার এক শ্রুতলিখন।’
এই দর্শনের প্রধান পাথেয় ছিল ভিয়েনার মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের যুগান্তকারী মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব। ফ্রয়েড দেখিয়েছিলেন যে মানুষের সচেতন মনের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক বিশাল অবচেতন জগৎ, যা তার আচরণ, স্বপ্ন ও ব্যক্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। পরাবাস্তববাদীরা ফ্রয়েডের এই তত্ত্বকে লুফে নিয়েছিলেন। তাঁদের কাছে শিল্পসৃষ্টির উদ্দেশ্যই ছিল যুক্তির সেন্সরশিপকে ফাঁকি দিয়ে অবচেতন মনের এই লুকানো জগৎকে উন্মোচিত করা। তাঁরা চেয়েছিলেন, স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে একীভূত করে এক ‘পরম বাস্তবতা’ বা ‘সুররিয়ালিটি’ তৈরি করতে।
পরাবাস্তবতা ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ।পরাবাস্তবতার পদযাত্রা প্যারিসের শৈল্পিক পরিমণ্ডল থেকে শুরু হলেও এর ঢেউ খুব দ্রুতই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আঁদ্রে ব্রেটন ছিলেন এই আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা, কিন্তু তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় সমবেত হয়েছিলেন বহু প্রতিভাবান স্রষ্টা, যাঁরা নিজ নিজ ভাষায় ও সংস্কৃতিতে পরাবাস্তবতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।
আঁদ্রে ব্রেটন (জন্ম: ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৬—মৃত্যু: ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬)