ব্যাট হাতে রান করেছেন। বল হাতেও তো উইকেট নিতে হবে। ভারতীয় দলের রবীন্দ্র জাদেজার কাজই তো ব্যাটে–বলে সমানতালে পারফর্ম করা। আর এটা ভালোভাবে করতে গিয়েই কি কাল পিচ নষ্ট করতে চেয়েছেন জাদেজা? ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকসের সন্দেহ কিন্তু এমনটাই। যদিও মাঠে ও মাঠের বাইরে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জাদেজা।

আসল ঘটনা কী?
এজবাস্টন টেস্টের দ্বিতীয় দিনে ক্রিস ওকস অনফিল্ড আম্পায়ারদের কাছে জাদেজার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ তোলেন।

ওকসের দাবি, জাদেজা বারবার পিচের বিপজ্জনক (ডেঞ্জার) এলাকায় পা রাখছেন এবং এতে করে সেখানে দাগ তৈরি হচ্ছে। ইংল্যান্ডের আশঙ্কা, জাদেজা ইচ্ছাকৃতভাবেই এমন করছেন (যাতে পরে বোলিং করতে গিয়ে সুবিধা নিতে পারেন)। ওকস আম্পায়ারকে বললেও ইংল্যান্ড অধিনায়ক স্টোকস সরাসরি জাদেজাকেই পিচ দেখিয়ে বলতে থাকেন, ‘দেখো তো তুমি কী করেছ, বন্ধু!’

সম্প্রচার ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, স্টোকসের কথার জবাব দিয়েছেন জাদেজা। তিনি বলেন, ‘আমি তো এ প্রান্ত থেকেই আসছিলাম। আমি তো ওদিকে বলই করব না। তাহলে ইচ্ছা করে (পিচ নষ্ট) করব কেন? আমার মনোযোগ এখন ব্যাটিংয়ে।’

আরও পড়ুনজোতার ২০ নম্বর জার্সিকে ‘অমর’ করে রাখবে লিভারপুল২ ঘণ্টা আগে

দিনের খেলা শেষেও সংবাদ সম্মেলনে প্রসঙ্গটি উঠে আসে। সেখানে বিষয়টি সম্পর্কে জাদেজা বলেন, ‘স্টোকস মনে করছিল আমি নিজেই উইকেট খারাপ করছি। কিন্তু আসলে ওরাই তো পেসার দিয়ে সেটা আরও খারাপ করছিল। আমার সেটা করার দরকারই ছিল না। ও বারবার আম্পায়ারকে বলছিল যে আমি উইকেটের ওপর দৌড়াচ্ছি। কিন্তু সেটা আমার উদ্দেশ্য ছিল না। হ্যাঁ, আমি দু-একবার এদিক-ওদিক দৌড়েছি, আর এটাই ওর মাথায় গেঁথে গেছে।’

কাল জাদেজা করেছেন ৮৯ রান। শুবমান গিলের সঙ্গে তাঁর ২০৩ রানের জুটি ভারতকে ৫৮৭ রানের বড় সংগ্রহে ভূমিকা রেখেছে। আর ইংল্যান্ড ৩ উইকেটে ৭৭ রান তুলে দিন শেষ করেছে।

আরও পড়ুনসিরিজের মাঝপথে যুক্তরাজ্যে যাচ্ছেন বাংলাদেশ কোচ৫৮ মিনিট আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উইক ট

এছাড়াও পড়ুন:

পরাবাস্তবতার আবেদন কি ফুরিয়েছে

অবচেতনের মানচিত্র ধরে এক অন্তহীন অভিযাত্রা কবি–সাহিত্যিকেরা যুগ যুগ ধরে করে আসছেন। সাহিত্যের দীর্ঘ যাত্রাপথে এমন কিছু বাঁক আসে, যা তার গতিপথকে চিরতরে বদলে দেয়। পরাবাস্তবতা বা সুররিয়ালিজম ছিল এমনই এক যুগান্তকারী আন্দোলন, যা কেবল শিল্পের আঙ্গিক নয়; বরং শিল্পীর বিশ্ববীক্ষা এবং আত্মবীক্ষণকে সম্পূর্ণ নতুন এক দর্শন দান করেছিল। এটি ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ। এর মূল লক্ষ্য ছিল মানব মনের সেই গভীরে প্রবেশ করা, যেখানে যুক্তির আলো পৌঁছায় না; সেই অবচেতনের অন্ধকার মহাসাগর থেকে তুলে আনা বিস্মৃত স্বপ্ন, অবদমিত ইচ্ছা আর আদিম প্রবৃত্তির মণি–মুক্তা। পরাবাস্তবতা তাই কেবল একটি শিল্পরীতি নয়, এটি চেতনার শৃঙ্খলমুক্তির এক দুঃসাহসী ইশতেহার।

১৯২৪ সালে ফরাসি কবি ও লেখক আঁদ্রে ব্রেটন তাঁর ‘পরাবাস্তবতার প্রথম ইশতেহার’ (ম্যানিফেস্টো অব সুররিয়ালিজম) প্রকাশের মাধ্যমে এই আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। ব্রেটনের সংজ্ঞায়, পরাবাস্তবতা হলো, ‘বিশুদ্ধ মানসিক স্বয়ংক্রিয়তা, যার মাধ্যমে মুখ বা লেখনী দিয়ে অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে চিন্তার আসল কার্যকারিতাকে প্রকাশ করার ইচ্ছা পোষণ করা হয়। এটি যুক্তির সমস্ত নিয়ন্ত্রণ থেকে এবং সকল প্রকার নান্দনিক ও নৈতিক উদ্দেশ্য থেকে বিযুক্ত চিন্তার এক শ্রুতলিখন।’

এই দর্শনের প্রধান পাথেয় ছিল ভিয়েনার মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের যুগান্তকারী মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব। ফ্রয়েড দেখিয়েছিলেন যে মানুষের সচেতন মনের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক বিশাল অবচেতন জগৎ, যা তার আচরণ, স্বপ্ন ও ব্যক্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। পরাবাস্তববাদীরা ফ্রয়েডের এই তত্ত্বকে লুফে নিয়েছিলেন। তাঁদের কাছে শিল্পসৃষ্টির উদ্দেশ্যই ছিল যুক্তির সেন্সরশিপকে ফাঁকি দিয়ে অবচেতন মনের এই লুকানো জগৎকে উন্মোচিত করা। তাঁরা চেয়েছিলেন, স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে একীভূত করে এক ‘পরম বাস্তবতা’ বা ‘সুররিয়ালিটি’ তৈরি করতে।

পরাবাস্তবতা ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ।

পরাবাস্তবতার পদযাত্রা প্যারিসের শৈল্পিক পরিমণ্ডল থেকে শুরু হলেও এর ঢেউ খুব দ্রুতই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আঁদ্রে ব্রেটন ছিলেন এই আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা, কিন্তু তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় সমবেত হয়েছিলেন বহু প্রতিভাবান স্রষ্টা, যাঁরা নিজ নিজ ভাষায় ও সংস্কৃতিতে পরাবাস্তবতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।

আঁদ্রে ব্রেটন (জন্ম: ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৬—মৃত্যু: ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬)

সম্পর্কিত নিবন্ধ