৮০ বলের সেঞ্চুরিতে জেমির রেকর্ড, শতকের দেখা পেলেন ব্রুকও
Published: 4th, July 2025 GMT
প্রথম ইনিংসে ভারতের করা ৫৮৭ রানের জবাবে ইংল্যান্ড ৩ উইকেট হারিয়ে ৭৭ রান তুলে দ্বিতীয় দিন শেষ করেছিল। আজ শুক্রবার (০৪ জুলাই) বিকেলে তৃতীয় দিনে ব্যাট করতে নেমে ৮৪ রানের মাথায় মোহাম্মদ সিরাজের দুই বলে জোড়া উইকেট হারায় ইংলিশরা। প্রথমে জো রুট (২২) ও পরের বলে বেন স্টোকস ফিরেন গোল্ডেন ডাক মেরে।
৮৪ রানে ইংল্যান্ডের নেই ৫ উইকেট। চোখ রাঙাচ্ছিল ফলোঅনের শঙ্ক। কিন্তু সেই শঙ্কার মেঘ ব্যাট হাতে উড়িয়ে দেন জেমি স্মিথ ও হ্যারি ব্রুক। তারা দুজন জোড়া সেঞ্চুরি তুলে লড়াইয়ে ফেরান ইংল্যান্ডকে।
জেমি মাত্র ৮০ বলে ১৪টি চার ও ৩ ছক্কায় সেঞ্চুরি করে রেকর্ড গড়েন। সবচেয়ে কম বলে সেঞ্চুরি করা ইংল্যান্ডের তৃতীয় ব্যাটসম্যান তিনি। ১৯০২ সালে গিলবার্ট জেসপ মাত্র ৭৬ বলে সেঞ্চুরি করে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন। এখনো সেটি তার দখলে রয়েছে।
আরো পড়ুন:
গিলের ডাবল সেঞ্চুরিতে ভারতের রান পাহাড়, শুরুতেই চাপে ইংল্যান্ড
ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিতে ভাস্বর গিল
জেমির এটা ছিল ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। প্রথমটা পেয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। জেমির পাশাপাশি সেঞ্চুরির দেখা পান ব্রুকও। তিনি ১৩৭ বলে ১২টি চার ও ১ ছক্কায় স্পর্শ করেন তিন অঙ্কের ম্যাজিক্যাল ফিগার। এরপর জেমি অবশ্য দেড়শও পূর্ণ করেন। ১৪৪ বলে ১৯টি চার ও ৩ ছক্কায় পেরিয়ে যান ব্যক্তিগত ১৫০ রানের মাইলফলক।
ষষ্ঠ উইকেটে তারা দুজন ইতোমধ্যে দলীয় সংগ্রহে ২৪৫ রান যোগ করেছে। তাদের দুজনের জোড়া সেঞ্চুরিতে ভর করে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ইংল্যান্ডের রান ৬৭ ওভারে ৫ উইকেটে ৩২৯ রান। স্মিথ ১৫১ ও ব্রুক ১২০ রানে ব্যাট করছেন।
ঢাকা/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
পরাবাস্তবতার আবেদন কি ফুরিয়েছে
অবচেতনের মানচিত্র ধরে এক অন্তহীন অভিযাত্রা কবি–সাহিত্যিকেরা যুগ যুগ ধরে করে আসছেন। সাহিত্যের দীর্ঘ যাত্রাপথে এমন কিছু বাঁক আসে, যা তার গতিপথকে চিরতরে বদলে দেয়। পরাবাস্তবতা বা সুররিয়ালিজম ছিল এমনই এক যুগান্তকারী আন্দোলন, যা কেবল শিল্পের আঙ্গিক নয়; বরং শিল্পীর বিশ্ববীক্ষা এবং আত্মবীক্ষণকে সম্পূর্ণ নতুন এক দর্শন দান করেছিল। এটি ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ। এর মূল লক্ষ্য ছিল মানব মনের সেই গভীরে প্রবেশ করা, যেখানে যুক্তির আলো পৌঁছায় না; সেই অবচেতনের অন্ধকার মহাসাগর থেকে তুলে আনা বিস্মৃত স্বপ্ন, অবদমিত ইচ্ছা আর আদিম প্রবৃত্তির মণি–মুক্তা। পরাবাস্তবতা তাই কেবল একটি শিল্পরীতি নয়, এটি চেতনার শৃঙ্খলমুক্তির এক দুঃসাহসী ইশতেহার।
১৯২৪ সালে ফরাসি কবি ও লেখক আঁদ্রে ব্রেটন তাঁর ‘পরাবাস্তবতার প্রথম ইশতেহার’ (ম্যানিফেস্টো অব সুররিয়ালিজম) প্রকাশের মাধ্যমে এই আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। ব্রেটনের সংজ্ঞায়, পরাবাস্তবতা হলো, ‘বিশুদ্ধ মানসিক স্বয়ংক্রিয়তা, যার মাধ্যমে মুখ বা লেখনী দিয়ে অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে চিন্তার আসল কার্যকারিতাকে প্রকাশ করার ইচ্ছা পোষণ করা হয়। এটি যুক্তির সমস্ত নিয়ন্ত্রণ থেকে এবং সকল প্রকার নান্দনিক ও নৈতিক উদ্দেশ্য থেকে বিযুক্ত চিন্তার এক শ্রুতলিখন।’
এই দর্শনের প্রধান পাথেয় ছিল ভিয়েনার মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের যুগান্তকারী মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব। ফ্রয়েড দেখিয়েছিলেন যে মানুষের সচেতন মনের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক বিশাল অবচেতন জগৎ, যা তার আচরণ, স্বপ্ন ও ব্যক্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। পরাবাস্তববাদীরা ফ্রয়েডের এই তত্ত্বকে লুফে নিয়েছিলেন। তাঁদের কাছে শিল্পসৃষ্টির উদ্দেশ্যই ছিল যুক্তির সেন্সরশিপকে ফাঁকি দিয়ে অবচেতন মনের এই লুকানো জগৎকে উন্মোচিত করা। তাঁরা চেয়েছিলেন, স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে একীভূত করে এক ‘পরম বাস্তবতা’ বা ‘সুররিয়ালিটি’ তৈরি করতে।
পরাবাস্তবতা ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ।পরাবাস্তবতার পদযাত্রা প্যারিসের শৈল্পিক পরিমণ্ডল থেকে শুরু হলেও এর ঢেউ খুব দ্রুতই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আঁদ্রে ব্রেটন ছিলেন এই আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা, কিন্তু তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় সমবেত হয়েছিলেন বহু প্রতিভাবান স্রষ্টা, যাঁরা নিজ নিজ ভাষায় ও সংস্কৃতিতে পরাবাস্তবতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।
আঁদ্রে ব্রেটন (জন্ম: ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৬—মৃত্যু: ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬)