শহীদ আবরার ফাহাদের দেখানো পথে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) রাজনীতি করছে বলে জানিয়েছেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা শহীদ আবরার ফাহাদের উত্তরসূরি। তাঁর দেখানো ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমরা বাংলাদেশপন্থি রাজনীতি করছি।

‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’র অষ্টম দিন গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে কুষ্টিয়া শহরের পাঁচরাস্তার মোড়ে পথসভায় এসব কথা বলেন নাহিদ ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘আমরা শহীদ আবরার ফাহাদের মাটিতে দাঁড়িয়ে রয়েছি, আমরা শহীদ ইয়ামিনের মাটিতে দাঁড়িয়ে রয়েছি। আমরা স্পষ্ট বলেছি, শহীদ আবরার থেকে শহীদ আবু সাঈদ, শহীদ ইয়ামিন পর্যন্ত বাংলাদেশের মানুষের যে আশা-আকাঙ্ক্ষা, আধিপত্য-আগ্রাসনবিরোধী আশা-আকাঙ্ক্ষা, সেটি ধারণ করেই আমরা এগিয়ে যাব।’
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘বিচার ও সংস্কার ছাড়া আমরা নির্বাচন মেনে নেব না। আগামীর বাংলাদেশে আধিপত্যবাদী শক্তি ঠেকাতে লড়াই-সংগ্রাম চলবে। আমরা দিল্লির দাসত্ব থেকে মুক্তি পেয়েছি। শহীদ আবরার আমাদের এই সাহস জুগিয়েছেন।’

কুষ্টিয়ার একটি রিসোর্টে সকালে অভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন এনসিপির নেতারা। পরে তাদের গাড়িবহর কুষ্টিয়া শহর থেকে শহীদ আবরার ফাহাদের গ্রামের বাড়ি কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের রায়ডাঙ্গা গ্রামে পৌঁছে। সেখানে আবরারের কবর জিয়ারত শেষে তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন নেতারা।
কুমারখালী প্রতিনিধি জানান, আবরার ফাহাদের কবর জিয়ারত শেষে নাহিদ ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের পর ২০১৯ সালে ছাত্রলীগের হাতে আবরার ফাহাদ হত্যা বাংলাদেশের রাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। ভারতীয় আধিপত্যবাদবিরোধী লড়াই নতুন করে শুরু হয়। সে পথ ধরেই জুলাই গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল।
এ সময় এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, যুগ্ম আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা.

তাসনিম জারা, খুলনা বিভাগের সংগঠক নয়ন আহম্মেদ, শহীদ আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর পর পদযাত্রা কুষ্টিয়া শহরে এসে বৈ‌রী আবহাওয়ার কার‌ণে এন এস রো‌ডে সং‌ক্ষিপ্ত পথসভা করে। সেখান থেকে পদযাত্রা মে‌হেরপু‌রের 
উদ্দেশে রওনা হয়।

মেহেরপুর প্রতিনিধি জানান, জেলার গাংনীতে সন্ধ্যায় এক পথসভায় এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, হাইব্রিড নেতারা অন্যের ছেলের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে বিদেশে নিজের সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়েন। অন্যের সন্তানকে চামচা; নিজের ছেলেকে নেতা বানান।
উপস্থিত জনতার উদ্দেশে হাসনাত বলেন, ‘আপনারা কোনো মার্কা ও ব্যক্তির কাছে বিবেক বন্ধক দিয়েন না। যারা বাংলাদেশকে ধারণ করে, তাদের নেতা নির্বাচিত করবেন। নির্বাচনের সময় আমাদের দেশে এক শ্রেণির নেতা উৎপাদন হয়। ঢাকা থেকে বস্তায় বস্তায় টাকা নিয়ে এলাকায় ঢুকে আগের রাতে ওসি, এসপি ও পোলিং এজেন্টদের কিনে নেন। তারা আপনাদের এক দিন টাকা দেন আর গোলামি করান পাঁচ বছর।’

তিনি বলেন, ‘জনগণের প্রতি আমাদের অনুরোধ– বাংলাদেশকে আর অযোগ্য নেতা ও গম চোরের হাতে তুলে দিয়েন না। রাস্তার টাকা মেরে যারা হজ করতে চান, তাদের হাতে তুলে দিয়েন না।’
হাসনাত আবদুল্লাহ আরও বলেন, ‘জনগণ পাশে থাকলে দিল্লি পালাতে হয় না; লন্ডন থাকতে হয় না। জনগণ সঙ্গে থাকলে বাংলাদেশেই স্থান হয়। আমরা কোনো পিন্ডি, দিল্লি, লন্ডন কিংবা আমেরিকার ওপর নির্ভর করতে চাই না। আমাদের রাজনীতি কোনো ব্যবসায়ীর কাছে বর্গা দিইনি। জনগণের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে তাদের জন্যই আমরা রাজনীতি করব।’ পরে মেহেরপুর শহীদ সামসুজ্জোহা পার্ক ও মুজিবনগরে পথসভা হয়।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন হ দ ইসল ম ন হ দ ইসল ম আম দ র র জন ত এনস প সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

সীমান্তে দাদাদের বাহাদুরির দিন শেষ: নাহিদ ইসলাম

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে গ্রেনেড মারে, বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এসব আগ্রাসন আর মেনে নেওয়া হবে না।

আজ রোববার চাঁপাইনবাবগঞ্জে এনসিপির পথসভায় নাহিদ ইসলাম এ কথাগুলো বলেন। এর আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের শান্তির মোড় থেকে বেলা দুইটায় শুরু হয় এনসিপির জুলাই পদযাত্রা। পদযাত্রাটি শহরের বাতেন খাঁর মোড়, নিমতলা মোড়, বড়ইন্দারা মোড়, গাবতলা মোড় হয়ে নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের সামনে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে পথসভা হয়।

পথসভায় নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘সীমান্তে অনেক বাহাদুরি হয়েছে দাদাদের। সেই বাহাদুরির দিন শেষ হয়েছে। যদি আর কোনো সীমান্তে পাঁয়তারা করা হয়, যদি সীমান্তে আগ্রাসন চালানো হয়, সীমান্তে আমার ভাইদের ওপর হত্যার চেষ্টা চালানো হয়, আমরা সীমান্তে লংমার্চ ঘোষণা করব। আমাদের সীমান্ত আমরাই রক্ষা করব।’

এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘গণ–অভ্যুত্থানের পর আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ চেয়েছি। আমরা রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার চেয়েছি। গণহত্যাকারীদের বিচার চেয়েছি। আমরা জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ চেয়েছি। আমরা জানি, এ দাবি আপনাদের সকলের দাবি। আমরা এসেছি জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের বার্তা নিয়ে। যে বার্তা একটি ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র কায়েমের জন্য আমাদের স্বপ্ন দেখায়, যে বার্তা একটা বৈষম্যহীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখায়, আমরা সেই বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসীর উদ্দেশে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ আমাদের সীমান্ত প্রতিরোধের প্রতীক। চাঁপাইনবাবগঞ্জ মানে সীমান্তে কাস্তে হাতে বসে থাকা সেই কৃষক। আমরা সেই কৃষকের সন্তান। যারা বুক চিতিয়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। বুলেট-গুলি বুকে নিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ আমের রাজধানী। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এত ঐতিহ্যবাহী জেলা হওয়া সত্ত্বেও এই আমকে, এটাকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যেতে, এটাকে বিশ্বের বুকে তুলে ধরতে, এটাকে রপ্তানি করতে কোনো ধরনের উদ্যোগ আমাদের কোনো সরকারই নেয়নি এখন পর্যন্ত।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জানি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেশমশিল্পের জন্য বিখ্যাত। কিন্তু এটা দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে। কোনো ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি এ–জাতীয় শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য। আমরা চাই বাংলাদেশের যেসব জাতীয় শিল্প রয়েছে, কুটির শিল্প রয়েছে, সেগুলোকে যথাযথভাবে রক্ষা করতে হবে।’

জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে সভা শুরু হয়। সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন দলের সদস্যসচিব আখতার হোসেন, সদস্য আসিফ মোস্তফা জামাল। সূচনা বক্তব্য দেন এনসিপির চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রধান সমন্বয়কারী আলাউল হক। সঞ্চালনা করেন দলের মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, কেন্দ্রীয় সদস্য তাজনুভা জাভিন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দলের মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনীম জারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আবরার ফাহাদের পথ ধরে ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছি: নাহিদ
  • আবরার ফাহাদের পথ ধরে লড়াই করেছি: নাহিদ
  • বিবৃতি দিয়ে আমাদের আটকাতে পারবেন না, ভয় পাই না: হাসনাত আব্দুল্লাহ
  • পরিবর্তন আমরা এখনো দেখতে পাচ্ছি না: নাহিদ ইসলাম
  • কর্মসূচিতে বাধা দিয়ে যারা ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করেছে, বাংলাদেশে তাদের ঠাঁই হয় নাই : নাহিদ ইসলাম
  • ৫ আগস্ট লক্ষ্য ছিল গণভবন, এবার সংসদ ভবন: নাহিদ ইসলাম 
  • ৫ আগস্ট লক্ষ্য ছিল গণভবন, এবার লক্ষ্য সংসদ ভবন: নাহিদ ইসলাম 
  • শেখ হাসিনা ঢুকলে আমগাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হবে: আখতার
  • সীমান্তে দাদাদের বাহাদুরির দিন শেষ: নাহিদ ইসলাম