চার রোহিঙ্গা খুনের মামলায় আরসাপ্রধান আতাউল্লাহ তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর
Published: 9th, July 2025 GMT
মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) প্রধান আতাউল্লাহ ওরফে আবু আম্মার জুনুনীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে কক্সবাজারের একটি আদালত।
আজ বুধবার দুপুরে কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আসাফ উদ্দিন আসিফ উখিয়ার আশ্রয়শিবিরে সংগঠিত চার রোহিঙ্গা খুনের মামলার শুনানি শেষে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ আদালতে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছিল।
আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো.
এর আগে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কঠোর নিরাপত্তায় প্রিজন ভ্যানে আরাসাপ্রধানকে আদালত প্রাঙ্গণে আনা হয়। বেলা দুইটার দিকে আদালত থেকে আবার কক্সবাজার জেলা কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. জসিম উদ্দিন বলেন, আজ বিকেল থেকে আতাউল্লাহকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করবে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হলে অবশিষ্ট মামলায় পুনরায় রিমান্ড চাওয়া হবে। আতাউল্লাহর বিরুদ্ধে উখিয়া থানাতে তিনটি এবং নাইক্ষ্যংছড়ি থানাতে একটি হত্যা মামলা রয়েছে।
পুলিশ ও আদালত থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০২০ সালের ৬ অক্টোবর উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মিয়ানমারের দুটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষে চারজন রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছিল। মামলাটি বর্তমানে সিআইডির তদন্তে রয়েছে।
পুলিশ জানায়, চলতি বছরের ১৮ মার্চ রাতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এবং ময়মনসিংহ শহরের নতুন বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে আরসাপ্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনিসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছিল র্যাব। নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড করতে তারা গোপন বৈঠক করছিলেন।
গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের মধ্যে আতাউল্লাহসহ ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রথম দফায় পাঁচ দিন করে ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। এরপর বান্দরবানসহ বিভিন্ন আদালতে একাধিক মামলায় আতাউল্লাহকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কক্সবাজারের মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা থেকে তাকে কক্সবাজার আনা হয়।
পুলিশ ও রোহিঙ্গা নেতাদের দেওয়া তথ্য মতে, ২০১৮ সালের দিকে উখিয়া-টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরের নিয়ন্ত্রণে নেয় আরসা। তখন আরসাকে ঠেকাতে মাঠে নামে আরেক সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারেটি অর্গানাইজেশন ( আরআরএসও)। তখন রোহিঙ্গাদের নেতা ও আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) চেয়ারম্যান মুহিবুল্লাহর সঙ্গে বিরোধে জড়ায় আরসা। ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে উখিয়ার কুতুপালং লম্বাশিয়া আশ্রয়শিবিরে মুহিবুল্লাহকে গুলি করে হত্যা করে আরসা সন্ত্রাসীরা। এই মামলায় আতাউল্লাহকে আসামি করা হয়। এক মাস পর উখিয়ার আরেকটি আশ্রয়শিবিরে ছয়জন রোহিঙ্গাকে গুলি করে হত্যা করে আরসা। সে মামলার আসামি আরসাপ্রধান আতাউল্লাহ।
২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের কাছে মাদকবিরোধী যৌথ অভিযানের সময়ে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন ডিজিএফআইয়ের কর্মকর্তা স্কোয়াড্রন লিডার রিজওয়ান রুশদী। এই মামলাতেও আসামি আরসার প্রধান।
সীমান্তের একাধিক সূত্র ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দেওয়া তথ্যমতে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপের সিকদারপাড়ায় আতাউল্লাহর বাড়ি। ১৯৬০ সালের দিকে তাঁর বাবা পাকিস্তানের করাচিতে চলে যান। সেখানেই জন্ম আতাউল্লাহর। তিনি পড়াশোনা করেন সৌদি আরবের মক্কায়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ জ ঞ স ব দ র জন য ল ল হক
এছাড়াও পড়ুন:
চাকুসর ভিপি-জিএস শিবিরের, এজিএস ছাত্রদলের
পঁয়ত্রিশ বছরের ফাঁড়া কাটিয়ে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (চাকসু) নির্বাচনে অনানুষ্ঠানিক ফলাফলে শীর্ষ দুই পদ ভিপি ও জিএসে জয় পেয়েছেন ছাত্রশিবিরের প্রার্থীরা; অবশ্য চমক সৃষ্টি করে এজিএস পদে বিজয়মালা উঠেছে ছাত্রদলের প্রার্থীর গলায়।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণের পর সন্ধ্যার পর ভোটগণনা শুরুর কয়েক ঘণ্টা বাদে মধ্যরাত থেকে ফলাফলের ঘোষণা আসতে থাকে; যেখানে বেশিরভাগ পদে লড়াই হয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ও ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীদের মধ্যে। ফল এসেছে শিবিরের পক্ষেই বেশি।
আরো পড়ুন:
প্রাণ ফিরে পেতে যাচ্ছে রাকসু, রাত পোহালেই ভোট
কাল ভোট, চলছে রাকসু ভবন প্রস্তুতের কাজ
এর মধ্য দিয়ে ১৯৮১ সালের পর আবার চাকসুর নেতৃত্বে বসতে যাচ্ছে বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর অনুসারী আদর্শের এই ছাত্রসংগঠন। অবশ্য ১৯৯০ সালের চাকুস নির্বাচনে অংশ নিলেও তারা জেতেনি। সেবার ঐক্য প্যানেল শিবিরকে পরাজিত করেছিল।
ডাকসু ও জাকসুর পর ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম ছাত্রসংসদ নির্বাচন হলো, যেখানে ছাত্রদল তুলনামূলক ভালো ফল অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। উদারপন্থি প্রগতিশীলতার চর্চার আতুড়ঘর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের নেতা বা প্রতিনিধি হিসেবে ইসলামী ছাত্রশিবিরকে বেছে নিয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন হবে, সেখানে শিবির-ছাত্রদল হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পূর্বাভাস রয়েছে। অবশ্য ছাত্ররাজনীতির দিক থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ‘শিবিরের ঘাঁটি’ হিসেবে পরিচিত।
বুধবার রাত থেকে গণনা শুরু হলেও চাকসুর মোট ১৫টি কেন্দ্রের অনানুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণা করতে ভোর হয়ে যায়। কেন্দ্রে কেন্দ্রে ঘোষণা করা ফলাফল অনুযায়ী, চাকসুর ভিপি পদে নির্বাচিত হয়েছেন শিবিরের ইব্রাহিম রনি। তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে ছাত্রদলের সাজ্জাদ হৃদয়ের। অবশ্য দুজনের ভোটের ব্যবধান উল্লেখযোগ্য। যদিও ডাকসু ও জাকসুর মতো হয়নি।
চাকসুর জিএস পদে প্রায় সব কেন্দ্রে নিরঙ্কুশ জয় নিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন শিবিরের সাঈদ বিন হাবিব। ছাত্রদলের শাফায়াত তাকে চ্যালেঞ্জ জানালে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারেননি তিনি। অবশ্য শায়ায়াতও ডাকসু-জাকসুর ছাত্রদল প্রার্থীদের মতো ভেসে যাননি; বেশ ভোট তার ঝুলিতে আনতে পেরেছেন।
চাকসু ভোটে সবচেয়ে বড় চমক সৃষ্টি করেছেন ছাত্রদলের আইয়ুবুর রহমান তৌফিক। এজিএস পদে একচেটিয়া দাপট দেখিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। এই পদে শিবিরের সাজ্জাদ মুন্না তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারেননি সেভাবে।
চাকসু নির্বাচনে এবার মোট ১৫টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হয়। ভোর নাগাদ সব কেন্দ্রের অনানুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে।
ঢাকা/রাসেল/মেহেদী