রোদেলার পরিচালনায় ন্যান্সি, গানেও কণ্ঠ দিলেন মেয়ের সঙ্গে
Published: 9th, July 2025 GMT
মা। একজন শিল্পীর জীবনের প্রথম দর্শক, প্রথম অনুপ্রেরণা। আর যখন সেই মা-ই হয়ে ওঠেন সহশিল্পী, তখন সুরে মিশে যায় ভালোবাসা, শ্রদ্ধা আর গর্বের এক অদ্ভুত মেলবন্ধন। এমনই এক অনুভূতির গল্প এবার তুলে ধরলেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি ও তার বড় কন্যা রোদেলা।
প্রথমবারের মতো মা ও মেয়ে একসঙ্গে কণ্ঠ দিয়েছেন একটি গানে। শিরোনাম ‘কেন’। গানটির কথা লিখেছেন ফয়সাল রাব্বিকীন, সুর ও সংগীতায়োজন করেছেন প্রত্যয় খান। স্যাড-রোমান্টিক ধাঁচের এই গানটির একটি মিউজিক ভিডিও তৈরি হয়েছে, যেখানে পর্দায়ও একসঙ্গে দেখা যাবে ন্যান্সি ও রোদেলাকে।
গানটি নিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত ন্যান্সি। জানালেন, ‘প্রথমে গানটি আমারই করার কথা ছিলো। পরে মনে হলো, রোদেলাকে যুক্ত করলে ব্যাপারটা আরও স্পেশাল হবে। গাইয়ে দেখলাম-ভালোই হলো। এটা আমাদের প্রথম গান, মা-মেয়ের একসঙ্গে কণ্ঠ দেওয়া-সত্যিই গর্বের ও আনন্দের বিষয়। আমার বিশ্বাস গানটি সবার ভালো লাগবে।’
রোদেলার কণ্ঠেও ঝরে পড়লো একই উচ্ছ্বাস। বললেন, ‘এটা আমার জন্য অনেক বড় ব্যাপার। মায়ের সঙ্গে গান গাওয়া একটা দুঃসাহসই বলা যায়। কারণ মা এমন একজন শিল্পী, যার গান বাংলা ভাষাভাষী সবার কাছেই প্রিয়। কিন্তু তার সাহস আর ভালোবাসায় ভর করেই গেয়ে ফেললাম। আশা করছি শ্রোতারাও আমাদের এই নতুন জুটি পছন্দ করবেন।’
গানটির গীতিকবি ফয়সাল রাব্বিকীন বলেন, ‘গানটি নিয়ে অনেক দিন ধরে কাজ করেছি। মা-মেয়ের কণ্ঠে গাওয়ার আইডিয়াটা খুব ইউনিক ছিলো। সুরে, কথায় এবং আবেগে এটা অন্যরকম একটা গান হয়েছে। আমার বিশ্বাস, গানটি শ্রোতাদের হৃদয়ে জায়গা করে নেবে।’
১০ জুলাই রোদেলার নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে ‘কেন’ গানটি উন্মুক্ত হবে। মা ও মেয়ের এই নতুন সংগীতযাত্রা কতটা মুগ্ধ করে, এখন অপেক্ষা শুধু শ্রোতাপ্রিয়তার মঞ্চে তাদের প্রথম যুগল পদচারণার প্রকাশ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
‘“এ সকল নষ্ট মাইয়াদের জন্য বাসের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যায়। যা যা বাস থেকে নেমে যা নষ্ট মাইয়াছেলে”—বাস কন্ডাক্টরের এই মন্তব্য শোনার পর নিজের ওপর আর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারিনি।’ কথাগুলো বলছিলেন বাসে হেনস্তার শিকার ওই তরুণী। আজ প্রথম আলোর সঙ্গে মুঠোফোনে দীর্ঘ আলাপে তিনি সেদিনের ঘটনার আদ্যোপান্ত জানান। বললেন, ঘটনার সময় বাসে একজন মানুষও প্রতিবাদ না করায় কষ্ট পেয়েছেন। যিনি এ ঘটনার ভিডিও করেছিলেন, তাঁর কাছ থেকেও কটু কথা শুনতে হয়েছিল। এমনকি তিনি বাস থেকে নামতে গিয়েও পারছিলেন না। যতবার নামার চেষ্টা করেন, চালক বাস টান দিচ্ছিলেন।
তবে দৃঢ়তার সঙ্গে এই তরুণী জানিয়েছেন, এই হেনস্তার ঘটনা তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারবে না। তিনি প্রতিবাদ করে যাবেন।
জুতা হাতে বাস কন্ডাক্টরের আচরণের প্রতিবাদ জানানোর ওই ঘটনা ঘটে গত ২৭ অক্টোবর। বাসের এক ব্যক্তি ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করলে তা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। গত বৃহস্পতিবার রমজান পরিবহন নামের বাসের হেনস্তাকারী কন্ডাক্টর নিজাম উদ্দিনকে (৪৫) গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় তরুণীর এজাহারের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্র বাদী হয়ে গতকাল শুক্রবার মামলা করে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারায় (যৌন নিপীড়নের অভিযোগ) মামলাটি করা হয়েছে।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছিল, বাসের সামনের আসনে বসা এক ব্যক্তির কোনো একটি মন্তব্য নিয়ে এক তরুণী তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়লেন। তিনি তেড়ে যান লোকটির দিকে। ওই সময় লোকটি আসন ছেড়ে উঠে তরুণীকে চড় মারেন। একপর্যায়ে দুজন জুতা খুলে দুজনের দিকে তুলে ধরেন। সে সময় ওই ব্যক্তি তরুণীকে আঘাত করেন এবং ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। ওই ব্যক্তি এরপর বারবার তরুণীর গায়ে ধাক্কা মারেন ও আঘাত করার চেষ্টা করেন। তরুণী চিৎকার করে বলছিলেন, ‘তুই আমার পোশাক তুলে কেন কথা বলবি?’ এ সময় সামনের দিকে থাকা দুই নারী ও একজন পুরুষ যাত্রী ছাড়া আর কেউ আঘাত করা ব্যক্তিটিকে থামানোর চেষ্টা করেননি, প্রতিবাদ করেননি।
ওই তরুণী প্রথম আলোকে জানান, তাঁর মা–বাবা ও ভাই–বোনরা চাঁদপুরে থাকেন। বাবার দোকান রয়েছে। ভাই–বোনদের মধ্যে তিনি সবার বড়। চাঁদপুর থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর এখন ঢাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে পড়ছেন। পড়াশোনার খরচ চালানোর পাশাপাশি বাবাকে সহায়তা করতে নিজেও টুকটাক কাজ করেন। হাতের কাজ, ছবি আঁকার কাজ করেন, টেলিভিশন চ্যানেলে মাঝেমধ্যে কিছু অনুষ্ঠান উপস্থাপনাও করেন। রাজধানীর বছিলা এলাকায় কয়েকজন মিলে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকেন।
‘শুরুতে আমি উত্তেজিত হইনি’
সেদিনের ঘটনা বলতে গিয়ে তরুণী বলেন, তিনি মুঠোফোন ঠিক করতে হাতিরপুলে মোতালিব প্লাজায় গিয়েছিলেন। বাসায় ফেরার জন্য সেখান থেকে ধানমন্ডি–১৫ নম্বর বাসস্ট্যান্ডে আসেন এবং রমজান পরিবহনের ওই বাসটিতে ওঠেন। তখন বেলা দুইটা কি আড়াইটা। তিনি বাসে উঠে মাঝামাঝি জায়গায় একটি আসনে বসেন। বাস কন্ডাক্টর তাঁর কাছে এসে ভাড়া চাইলে ‘স্টুডেন্ট’ (শিক্ষার্থী) জানিয়ে তিনি অর্ধেক ভাড়া দেন। তরুণী দাবি করেন, বাস কন্ডাক্টর তখন বলে ওঠেন, ‘চেহারা আর পোশাক দেখলে তো মনে হয় না স্টুডেন্ট!’ তখন তিনি রাগ হলেও কন্ডাক্টরকে ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করে বলেন, ‘স্টুডেন্টের সঙ্গে পোশাকের কী সম্পর্ক? আপনি এসব কী ধরনের কথা বলছেন? ওই সময় কিছুটা কথা-কাটাকাটি হয়। শুরুতে আমি উত্তেজিত হইনি।’
রাজধানীর বছিলায় বাসের মধ্যে পোশাক নিয়ে কটূক্তির সাহসী প্রতিবাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীর প্রশংসা করে এমন চিত্র ফেসবুকে পোস্ট করা হয়েছে