Prothomalo:
2025-11-03@03:34:55 GMT

জলাবদ্ধতা

Published: 10th, July 2025 GMT

পুরান ও নতুন—রাজধানী ঢাকার দুই অংশেই বর্ষা এলে নেমে আসে নানা দুর্ভোগ। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রকট সমস্যা হলো জলাবদ্ধতা। মাত্র আধা ঘণ্টার বৃষ্টিতেই ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে যায়। মিরপুর, মোহাম্মদপুর, মালিবাগ, শ্যামলী, বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী, রামপুরা, ধানমন্ডি—এসব এলাকায় এমন দৃশ্য এখন নিয়মিত।

ঢাকার নাজুক ড্রেনেজ ব্যবস্থা, অপরিকল্পিত সড়ক নির্মাণ এবং পানিপ্রবাহের স্বাভাবিক পথ দখল হয়ে যাওয়াই এই সমস্যাকে দিন দিন দীর্ঘস্থায়ী করে তুলছে। স্কুলগামী শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে অফিসগামী কর্মজীবীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হন।

জলজটে আটকে থাকা যানবাহনের কারণে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট, অপচয় হয় মূল্যবান কর্মঘণ্টার। আবার অনেক সময় পানিতে ডুবে থাকা গর্ত কিংবা উঁচু-নিচু সড়কের কারণে ঘটে দুর্ঘটনাও। বয়স্ক মানুষ ও শিশুরা এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকেন।

জলাবদ্ধতা শুধু সাময়িক অসুবিধা নয়, এটি স্বাস্থ্যঝুঁকিও বাড়িয়ে তুলছে। ড্রেনের দূষিত পানি রাস্তায় মিশে গিয়ে সৃষ্টি করছে জীবাণুবাহী পরিবেশ। ফলে সর্দি-কাশি, জ্বর, চর্মরোগসহ নানাবিধ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেক মানুষ। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য পর্যাপ্ত ড্রেন নির্মাণের পাশাপাশি শহরের প্রাকৃতিক জলাধার পুনরুদ্ধার, খাল দখলমুক্ত করা এবং বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে। সেই সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি ও পরিকল্পিত পানি নিষ্কাশনব্যবস্থা ছাড়া এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।

মালিহা মেহনাজ

শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

পরাবাস্তবতার আবেদন কি ফুরিয়েছে

অবচেতনের মানচিত্র ধরে এক অন্তহীন অভিযাত্রা কবি–সাহিত্যিকেরা যুগ যুগ ধরে করে আসছেন। সাহিত্যের দীর্ঘ যাত্রাপথে এমন কিছু বাঁক আসে, যা তার গতিপথকে চিরতরে বদলে দেয়। পরাবাস্তবতা বা সুররিয়ালিজম ছিল এমনই এক যুগান্তকারী আন্দোলন, যা কেবল শিল্পের আঙ্গিক নয়; বরং শিল্পীর বিশ্ববীক্ষা এবং আত্মবীক্ষণকে সম্পূর্ণ নতুন এক দর্শন দান করেছিল। এটি ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ। এর মূল লক্ষ্য ছিল মানব মনের সেই গভীরে প্রবেশ করা, যেখানে যুক্তির আলো পৌঁছায় না; সেই অবচেতনের অন্ধকার মহাসাগর থেকে তুলে আনা বিস্মৃত স্বপ্ন, অবদমিত ইচ্ছা আর আদিম প্রবৃত্তির মণি–মুক্তা। পরাবাস্তবতা তাই কেবল একটি শিল্পরীতি নয়, এটি চেতনার শৃঙ্খলমুক্তির এক দুঃসাহসী ইশতেহার।

১৯২৪ সালে ফরাসি কবি ও লেখক আঁদ্রে ব্রেটন তাঁর ‘পরাবাস্তবতার প্রথম ইশতেহার’ (ম্যানিফেস্টো অব সুররিয়ালিজম) প্রকাশের মাধ্যমে এই আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। ব্রেটনের সংজ্ঞায়, পরাবাস্তবতা হলো, ‘বিশুদ্ধ মানসিক স্বয়ংক্রিয়তা, যার মাধ্যমে মুখ বা লেখনী দিয়ে অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে চিন্তার আসল কার্যকারিতাকে প্রকাশ করার ইচ্ছা পোষণ করা হয়। এটি যুক্তির সমস্ত নিয়ন্ত্রণ থেকে এবং সকল প্রকার নান্দনিক ও নৈতিক উদ্দেশ্য থেকে বিযুক্ত চিন্তার এক শ্রুতলিখন।’

এই দর্শনের প্রধান পাথেয় ছিল ভিয়েনার মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের যুগান্তকারী মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব। ফ্রয়েড দেখিয়েছিলেন যে মানুষের সচেতন মনের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক বিশাল অবচেতন জগৎ, যা তার আচরণ, স্বপ্ন ও ব্যক্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। পরাবাস্তববাদীরা ফ্রয়েডের এই তত্ত্বকে লুফে নিয়েছিলেন। তাঁদের কাছে শিল্পসৃষ্টির উদ্দেশ্যই ছিল যুক্তির সেন্সরশিপকে ফাঁকি দিয়ে অবচেতন মনের এই লুকানো জগৎকে উন্মোচিত করা। তাঁরা চেয়েছিলেন, স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে একীভূত করে এক ‘পরম বাস্তবতা’ বা ‘সুররিয়ালিটি’ তৈরি করতে।

পরাবাস্তবতা ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ।

পরাবাস্তবতার পদযাত্রা প্যারিসের শৈল্পিক পরিমণ্ডল থেকে শুরু হলেও এর ঢেউ খুব দ্রুতই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আঁদ্রে ব্রেটন ছিলেন এই আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা, কিন্তু তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় সমবেত হয়েছিলেন বহু প্রতিভাবান স্রষ্টা, যাঁরা নিজ নিজ ভাষায় ও সংস্কৃতিতে পরাবাস্তবতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।

আঁদ্রে ব্রেটন (জন্ম: ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৬—মৃত্যু: ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬)

সম্পর্কিত নিবন্ধ