জঙ্গিবাদের বিষয়ে বাংলাদেশকে সতর্ক থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স মেগান বোল্ডিন। 

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর (অব.) সঙ্গে সৌজন্য স্বাক্ষাত করতে এসে এ কথা বলেন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স।

বাংলাদেশের নিরাপত্তা খাতে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়ে চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্স বলেন, প্রতিটি দেশই কমবেশি সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গি হামলার ঝুঁকিতে থাকে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। যদিও বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনেক রাজনৈতিক নির্যাতন ও নিপীড়নের ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার উদ্দেশ্যে জঙ্গিবাদ বলে অভিহিত করা হয়েছিলো। তারপরও বাংলাদেশকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে কোনো জঙ্গিবাদ নেই। তবে মাঝে মধ্যে নিষিদ্ধ ঘোষিত রাজনৈতিক দল মিটিং-মিছিলের চেষ্টা করে, যা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোরভাবে প্রতিহত করছে। শুধু সন্ত্রাসবাদ নয়, যে কোনো ধরনের অপরাধ মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সে ধরনের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, ঢাকার বারিধারা ডিপ্লোমেটিক এরিয়ার জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নিয়মিত নিরাপত্তা বাহিনীর পাশাপাশি সেখানে কোস্টগার্ড মোতায়েন করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ে চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্স বলেন, যেকোনো দেশের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে এ সংক্রান্ত এজেন্সিগুলোর মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ, সমন্বয় ও তথ্য শেয়ারকরণ অত্যন্ত জরুরি। বাংলাদেশের নিয়মিত পুলিশ ফোর্স, গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই, এসবি), সিটিটিসি (কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম), এটিইউ (অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট) প্রভৃতি এজেন্সিগুলোর মধ্যেও একইভাবে পারস্পরিক সংযুক্তি ও তথ্য আদান-প্রদান করা উচিত। তবেই বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী ও সুসংহত হবে।

বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা ইস্যু, সন্ত্রাসবাদ দমন, মামলার প্রসিকিউশন, তরুণীদের অনলাইনে যৌন হয়রানি প্রতিরোধসহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকের শুরুতে উপদেষ্টা রাষ্ট্রদূতকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ মিত্র। দেশটি শুরু থেকেই বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদ দমন ও নিরাপত্তা খাতে ঘনিষ্ঠ অংশীদার হয়ে কাজ করে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জাম সহযোগিতায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সিটিটিসি (কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম) ইউনিটকে আধুনিক ও সক্ষম করে গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে। 
সেজন্য উপদেষ্টা চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্সকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান এবং ভবিষ্যতেও এ খাতে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার অনুরোধ করেন।

বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক ও আইসিটি) খন্দকার মো.

মাহাবুবুর রহমান, যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পলিটিক্যাল ও ইকোনমিক কাউন্সিলর ইরিক গিলান, পলিটিক্যাল মিলিটারি অ্যাফেয়ার্স অফিসার জোস পপ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র য ক তর ষ ট র সতর ক

এছাড়াও পড়ুন:

প্রয়োজন সর্বাত্মক অভিযান

দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবির পাশাপাশি সেনাসদস্যরাও নিয়োজিত আছেন। উদ্বেগের বিষয় হলো এত সব বাহিনী মোতায়েন সত্ত্বেও সরকার কোনোভাবে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না। সাম্প্রতিক কালে খুন, ধর্ষণ, নারী নিগ্রহ ও সংঘবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে।

অনেক অপরাধের সঙ্গে পলাতক বন্দীদের জড়িত থাকার বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়া যায় না, যেখানে তাদের মধ্যে জঙ্গি ও পেশাদার সন্ত্রাসীদের সংখ্যা অনেক। প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত বছরের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে ও পরে দেশের কয়েকটি কারাগারে বিশৃঙ্খল অবস্থা সৃষ্টি হয়। এ সময় দেশের পাঁচ কারাগারে চরম বিশৃঙ্খলা ও বিদ্রোহ করে ২ হাজার ২৪০ বন্দী পালিয়ে যান। হামলাকারীরা কারাগার থেকে ৯৪টি শটগান ও চায়নিজ রাইফেল লুট করেন। এগুলো হলো কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগার, নরসিংদী জেলা কারাগার, সাতক্ষীরা জেলা কারাগার, কুষ্টিয়া জেলা কারাগার ও শেরপুর জেলা কারাগার। উল্লেখ্য, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় হাইসিকিউরিটি কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় ছয় বন্দী মারা যান।

অন্যদিকে কারাগারে আটক চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের কেউ কেউ রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সুযোগে জামিনে বেরিয়ে গেছেন বলেও জানা গেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির পেছনে জেলপলাতক বন্দীদের ভূমিকা আছে, এটা হলফ করে বলা যায়। কিন্তু সরকার বিষয়টি খুব গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে বলে মনে হয় না। যখন কোনো দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তা দেশে জঙ্গি নেই বলে আওয়াজ দেন, তখন চরমপন্থীরা আরও উৎসাহিত হয়। জামিন পাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসীদের জামিন বাতিলের বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়া শুরুর কথাও বলেছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। কিন্তু শীর্ষ সন্ত্রাসী কারও জামিন বাতিল হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জেলপলাতক আসামিদের খুঁজে বের করার বিষয়ে সর্বাত্মক অভিযানের কথা বললেও তেমন সফলতা দেখাতে পারেননি। দায়িত্ব নেওয়ার ১১ মাস পরও ৭ শতাধিক পলাতক বন্দীকে পাকড়াও করতে না পারা সরকারের বড় ব্যর্থতা বলেই মনে করি।

অপরাধবিষয়ক বিশেষজ্ঞদের মতে, পলাতক বন্দীদের স্থায়ী বা বর্তমান ঠিকানা ধরে তল্লাশি চালালে সফলতা পাওয়ার সম্ভাবনা কম। এসব বন্দী দূরবর্তী এলাকায় আত্মগোপন করে থাকার সম্ভাবনা বেশি। সে ক্ষেত্রে দেশের প্রতিটি এলাকায় অভিযান চালাতে হবে, সেখানে নতুন আসা ব্যক্তিদের গতিবিধির ওপর নজর রাখতে হবে। তবে কাজটি শুধু থানা–পুলিশ দিয়ে হবে না। তঁারা কজনকে চেনেন? নজরদারিতে জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় নাগরিকদের সম্পৃক্ত করতে পারলে সুফল পাওয়া যাবে আশা করা যায়।

গত বছর ডিসেম্বরের শুরুতেও পলাতক আসামি নিয়ে প্রথম আলোয় প্রতিবেদন ও সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়েছিল। সে সময়ে যাঁরা পলাতক বন্দী ছিলেন, তাঁদের খুব কমই ধরা পড়েছেন। তাহলে এই ছয় মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কী করল? জেলপলাতক বন্দীদের মধ্যে যাঁরা ইতিমধ্যে বিদেশে চলে গেছেন, তাঁদের ফেরত আনা সহজ হবে না। কিন্তু দেশের ভেতরে আত্মগোপনে থাকা বন্দীদের খুঁজে বের করা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়।

আমরা আশা করব, বিলম্বে হলেও সরকারের চৈতন্যোদয় হবে এবং জেলপলাতক বন্দীদের আটক ও লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে সর্বাত্মক অভিযান চালাবে। জেলপলাতক সাত শতাধিক বন্দীকে ‘মুক্ত’ রেখে দেশে অপরাধ দমন ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নের আশা দুরাশাই বটে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শাহজালালে বিমানে বোমা আতঙ্ক, ঢাকা-কাঠমান্ডু ফ্লাইট সাময়িক স্থগিত
  • ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনী প্রস্তুতি সম্পন্ন হোক
  • লটারির মাধ্যমে নির্বাচনী দায়িত্ব পাবেন ডিসি-এসপিরা
  • লটারির মাধ্যমে নির্বাচনী দায়িত্ব পাবেন ডিসি-এসপিরা: শফিকুল আলম
  • তিন নির্বাচনে দায়িত্বপালন করা কর্মকর্তাদের এবার সরিয়ে রাখার চিন্তা
  • ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা
  • ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের সব প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার
  • ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের সব প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ
  • প্রয়োজন সর্বাত্মক অভিযান