হাসপাতালে নিতে বলায় অসুস্থ স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা
Published: 11th, July 2025 GMT
বেশ কিছু দিন ধরে অসুস্থ ছিলেন গৃহবধূ সালমা বেগম (৪০)। বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছিলেন। কিন্তু স্বামী মোস্তফা কামাল তাঁর চিকিৎসায় কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছিলেন না। এক পর্যায়ে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁকে অনুরোধ করেন সালমা। মোস্তফা তাঁর অনুরোধে সাড়া না দিয়ে উল্টো ক্ষুব্ধ হয়ে দা দিয়ে কুপিয়ে সালমাকে হত্যা করেন। গত বুধবার রাতে গাজীপুর মহানগরের পশ্চিম ধীরাশ্রম ফুলবাড়িয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
মোস্তফা কামালের বাড়ি ঢাকার কেরানীগঞ্জ এলাকায়। জানা গেছে, স্ত্রীকে হত্যার পর তিনি বসতঘরের মেঝেতে মরদেহ রেখে পাশেই বসে ছিলেন। পরে স্থানীয়রা ঘরে ঢুকে তাঁকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন।
পুলিশ, এলাকাবাসী ও স্বজন জানান, ধীরাশ্রম ফুলবাড়িয়া গ্রামের করম আলীর মেয়ে সালমার সঙ্গে বছর দশেক আগে মোস্তফা কামালের বিয়ে হয়। সালমা তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী। গত বুধবার রাতে অসুস্থ সালমা চিকিৎসকের কাছে নেওয়ার কথা বলায় মোস্তফা ক্ষুব্ধ হন। এক পর্যায়ে স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যার পর ঘরের দরজা ভেতর থেকে আটকে মরদেহের পাশে বসে থাকেন। পাশের কক্ষে থাকা মেয়ের ডাকে আশপাশের মানুষ এসে মোস্তফাকে দরজা খুলতে বলেন। কিন্তু তিনি দরজা খুলছিলেন না। ডাকাডাকির এক পর্যায়ে মোস্তফা বলেন, ‘আমি আমার স্ত্রীকে মাইরা ফেলছি। দরজা খুললে আপনারা আমারে মাইরা ফেলবেন।’ কিছু সময় পর তিনি দরজা খুলে দেন। রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে পড়ে থাকা সালমাকে উদ্ধার করে দ্রুত শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। এরই মধ্যে মোস্তফাকে আটক করে পুলিশে খবর দেন স্থানীয়রা।
নিহত সালমা বেগমের মেয়ে মর্জিনা আক্তার বলেন, ‘রাতে হঠাৎ মা চিৎকার করে বলতে থাকেন– মর্জিনা বাঁচা, আমারে মাইরা ফেলল। আমি পাশের রুম থেকে চিৎকার শুনে দ্রুত বের হয়ে দরজা খোলার জন্য ডাকাডাকি করি। কিন্তু বাবা দরজা খোলেনি। এর পর এলাকার লোকজনকে ডেকে আনি। তারা এসে আমার মাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান। আমার মাকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।’
গাজীপুর মহানগরের সদর থানার ওসি মেহেদী হাসান জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সালমা বেগমের মেয়ে মর্জিনা আক্তার বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেছেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে মোস্তফা কামালকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক
অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।
বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক।
আরো পড়ুন:
রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী
‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত
সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।
প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।
জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।
আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।
লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড
ঢাকা/লিপি