চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) জাতীয় আইন অলিম্পিয়াডের পঞ্চম আসর শেষ হয়েছে। গতকাল শনিবার দুই দিনব্যাপী পুরস্কার বিতরণের মাধ্যমে ‘এসসিএলএস আইন অলিম্পিয়াড-২০২৫’ শেষ হয়। এবারের জমজমাট আসরের প্রতিপাদ্য ছিল– ‘পরিবেশ আইন ও জলবায়ু ন্যায়বিচার’। এ আসরে দেশের ৩০টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাছাই করা ৪০টি দল অংশ নেয়, যাদের নির্বাচন করা হয় ৭০টিরও বেশি নিবন্ধিত দলের মধ্য থেকে।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতিতে এ আসর বেশ জমে ওঠে। চবির আইন অনুষদের শিক্ষার্থীদের সংগঠন সোসাইটি ফর ক্রিটিক্যাল লিগ্যাল স্টাডিজের (এসসিএলএস) উদ্যোগে অনুষদের এ কে খান অডিটোরিয়ামে গত শুক্রবার প্রতিযোগিতা শুরু হয়। প্রতিযোগিতায় ছিল পাঁচটি ধাপ– ‘পিক্টোরিয়াল প্লী’, ‘রেবেলিয়াস স্পিরিট’, ‘ক্রিটিক্যাল আই’, ‘রিফর্ম অ্যাসেম্বলি’ ও ‘সিম্পোজিয়াম রাউন্ড’। প্রতিটি রাউন্ডে অংশগ্রহণকারীরা আটটি গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা নিয়ে যুক্তি, বিশ্লেষণ ও বিতর্কে অংশ নেন।

প্রথম দিনের অনুষ্ঠান

প্রথম দিন প্রতিযোগিতার প্রাথমিক তিনটি রাউন্ড অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ, জলবায়ু ন্যায্যতা ও আইনি প্রতিকার নিয়ে যুক্তিতর্কে অংশ নেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো.

আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘পরিবেশ অধিকার এখন কেবল প্রকৃতির বিষয় নয়, এটি মানুষের জীবনের মৌলিক অধিকারের সঙ্গে যুক্ত। তাই সংবিধানে একে মৌলিক অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার সময় এসেছে।’ অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘নদীর পার দখল, প্লাস্টিক বর্জনে স্রোতহীন হয়ে পড়ছে নদী। এক সময় জীবন্ত নদী আজ মৃত জলাশয়ে পরিণত হচ্ছে। এ বাস্তবতা আমাদের পরিবেশ নিয়ে আরও জোরালোভাবে ভাবতে বাধ্য করছে।’

বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেন, চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ মো. নুরুল ইসলাম, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট মো. আহসানুল করিম এবং আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জাফর উল্লাহ তালুকদার।

চূড়ান্ত পর্ব বা দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠান

গতকাল শনিবার অলিম্পিয়াডের দ্বিতীয় দিন শুরু হয় ‘রিফর্ম অ্যাসেম্বলি’ রাউন্ড দিয়ে। এরপর হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দুপুরে ঘোষণা করা হয় সেমিফাইনালের ফল। পরে অনুষ্ঠিত হয় ‘রিসার্চ পেপার সুয়াপ’। বিকেল ৪টায় শুরু হয় চূড়ান্ত পর্ব ‘সিম্পোজিয়াম রাউন্ড’। এর পর আয়োজন করা হয় সমাপনী অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণী।

সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি সাইয়্যেদ মো. তাজরুল হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন চবি উপ-উপাচার্য (একাডেমিক ও ফিন্যান্স) অধ্যাপক ড. মো. শামীম উদ্দিন খান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল ইসলাম, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. মো. এনায়েত উল্লাহ পাটওয়ারী ও আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জাফর উল্লাহ তালুকদার।

অতিথিরা প্রতিযোগীদের মেধা, বিশ্লেষণী দক্ষতা এবং বাস্তবচিন্তার প্রশংসা করেন। তারা বলেন, এ প্রজন্ম আইনি জ্ঞান দিয়ে সমাজকে এগিয়ে নিতে পারবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অল ম প য় ড অন ষ ঠ ন পর ব শ র উন ড

এছাড়াও পড়ুন:

ভোজ্যতেলের দাম নিয়ে বিভ্রান্তি, আজ আবার বৈঠক হতে পারে

দেশে সয়াবিন তেল ও পাম তেলের দাম বাড়ানো নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বৈঠক হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে সয়াবিন ও পাম তেলের দাম বাড়বে কি না, বাড়লেও কত টাকা বাড়বে, সেটি ফয়সালা হতে পারে এ বৈঠকে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ভোজ্যতেল পরিশোধন ও উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল ওয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন গত সোমবার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সয়াবিন ও পাম তেলের দাম বাড়ানোর কথা জানায়। এতে বাজারে একধরনের বিভ্রান্তি তৈরি হয়। তবে সরকার এ বিজ্ঞপ্তিকে আমলে নেয়নি। গত মঙ্গলবার বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন সাংবাদিকদের জানিয়ে দেন, সরকার ভোজ্যতেলের দাম বাড়ায়নি।

পুরো পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে গতকাল বুধবার বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সয়াবিন ও পাম তেলের নতুন দাম কার্যকর করেনি বাংলাদেশ ভেজিটেবল ওয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য (এমআরপি) এত দিন যা ছিল, তা-ই আছে। নতুন এমআরপির কোনো সুযোগ নেই। তিনি বলেন, কারখানার মালিকেরা মঙ্গলবার তাঁকে জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত খুচরা পর্যায়ে ভোজ্যতেলের দাম বাড়েনি।

প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের বর্তমান দাম ১৮৯ টাকা। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নতুন দাম হবে ১৯৫ টাকা। আর প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের নতুন দাম ১৭৭ টাকা, যার বর্তমান দাম ১৬৯ টাকা। এ ছাড়া খোলা পাম তেলের দাম ১৫০ টাকা লিটার থেকে বেড়ে ১৬৩ টাকা করার কথা বলা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।

জানা গেছে, ভোজ্যতেলের দাম বাড়াতে কয়েক মাস ধরেই চেষ্টা করে আসছেন পরিশোধন কারখানার মালিকেরা। গত ২২ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সভাপতিত্বে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে একটি বৈঠক হয়। এ বৈঠক শেষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের জানানো হয়েছিল, ‘কারখানামালিকেরা দাম বাড়ানোর যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় অনেক বেশি।’

সাধারণত বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে পর্যালোচনামূলক প্রতিবেদন দেয়। গত মাসে বিটিটিসি ভোজ্যতেল নিয়ে একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবার এ নিয়ে আরও পর্যালোচনার দায়িত্ব দেয় দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) এবং দ্য ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউনট্যান্টস অব বাংলাদেশকে (আইসিএমএবি)।

আইসিএমএবির প্রেসিডেন্ট মাহতাবউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে আমরা কাজটা করছি।’

সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হয়েছিল গত এপ্রিল মাসে। তখন বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৪ টাকা বাড়িয়ে ১৮৯ টাকা করা হয়েছিল। এ ছাড়া প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের দাম ১২ টাকা বাড়িয়ে ১৬৯ টাকা এবং বোতলজাত পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের দাম ৭০ টাকা বাড়িয়ে ৯২০ টাকা করা হয় তখন।

অবশ্য আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে এসে খোলা পাম তেলের দাম লিটারে ১৯ টাকা কমিয়ে ১৫০ টাকা করা হয়। ব্যবসায়ীরা তখন প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন। জবাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছিল, বাড়তে পারে লিটারে বড়জোর ১ টাকা।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি এ এইচ এম সফিকুজ্জামান এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিটিটিসির মাধ্যমে ভোজ্যতেলসহ সব নিত্যপণ্য নিয়ে পর্যালোচনা করার নির্ধারিত নিয়মকানুন আছে। তা অনুসরণ না করার ফলেই বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। আর এ কারণে ভোক্তারা অহেতুক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। ক্যাবের পক্ষ থেকে আমরা এর প্রতিবাদ জানাই।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ