রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনের ওপর বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডের বিভীষিকা থেকে নিজের প্রাণ তুচ্ছ করে ২০ শিক্ষার্থীকে বাঁচিয়েছেন মাহরিন চৌধুরী। তিনি ওই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষিকা ছিলেন। শিশু শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে নিজের জীবন উৎসর্গ করেন তিনি। মাহরিন চৌধুরীর মৃত্যুর পর প্রকাশ পেল তার আরেক পরিচয়। তিনি ছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ভাতিজি। 

ঢাকার মাইলস্টোন স্কুলের শিশু শিক্ষার্থীদের আগুনের লেলিহান শিখা যখন গ্রাস করছিল, তখন নিজের জীবন ঢাল বানিয়ে ২০ জনের বাঁচান মাহরিন চৌধুরী। কিন্তু তাকে বাঁচানো গেল না। সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলে আছড়ে পড়ে।

প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আপন খালাত ভাই মহিদুর রহমানের মেয়ে মাহরিন চৌধুরী। গ্রামের বাড়ি নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার বগুলাগাড়ি চৌধুরী পাড়ায়। মাহরিনের এই অজানা পরিচয় প্রকাশ্যে আসে তার মৃত্যুর পর। তিনি কখনো নিজের রাজনৈতিক পরিচয় দেননি।

আরো পড়ুন:

পাইলট তৌকিরের মরদেহ রাজশাহী পৌঁছেছে

ইবি শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় নতুন মোড়, কমপ্লিট শাটডাউনের হুঁশিয়ারি

এ তথ্য নিশ্চিত করেন মাহরিনের স্বামী মনসুর হেলালও। তিনি জানান, ভোরে ঢাকা থেকে মরদেহ নিয়ে রওনা হয়ে দুপুর ৩টায় জলঢাকার বাড়িতে পৌঁছান। গ্রামের মানুষ কান্নায় ভেঙে পড়ে। বগুলাগাড়ি স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে জানাজা শেষে মাহরিনকে পারিবারিক কবরস্থানে শায়িত করা হয়েছে।

মাহরিন চৌধুরী নীরবে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার পাশে ছিলেন। দলের বড় বড় নেতারা যেখানে ভয় পেয়ে যান, সেখানেও তিনি খালেদা জিয়ার জন্য হাসপাতালে খাবার নিয়ে ছুটে যেতেন। কিন্তু কখনো প্রচারে আসতে চাননি। 

মাহরিন স্বামী, দুই ছেলে, দুই ভাই, এক বোন রেখে গেছেন। তিনি হাজারো শিক্ষার্থীর সামনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন।

মাহরিন চৌধুরী ঢাকায় থাকলেও বগুলাগাড়ির মানুষের প্রতি তার ভালোবাসা ছিল। গরিব-দুঃখী মানুষের তিনি সাহায্য করতেন। তার মৃত্যুতে জলঢাকার মানুষ শোকাহত। 
 

ঢাকা/সিথুন/বকুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর মরদ হ ব এনপ র রহম ন র

এছাড়াও পড়ুন:

বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য

দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।

আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।

লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।

আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।

সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা।

কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ