জীবন দিয়ে ২০ শিক্ষার্থীকে বাঁচানো মাহরিন জিয়াউর রহমানের ভাতিজি
Published: 22nd, July 2025 GMT
রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনের ওপর বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডের বিভীষিকা থেকে নিজের প্রাণ তুচ্ছ করে ২০ শিক্ষার্থীকে বাঁচিয়েছেন মাহরিন চৌধুরী। তিনি ওই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষিকা ছিলেন। শিশু শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে নিজের জীবন উৎসর্গ করেন তিনি। মাহরিন চৌধুরীর মৃত্যুর পর প্রকাশ পেল তার আরেক পরিচয়। তিনি ছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ভাতিজি।
ঢাকার মাইলস্টোন স্কুলের শিশু শিক্ষার্থীদের আগুনের লেলিহান শিখা যখন গ্রাস করছিল, তখন নিজের জীবন ঢাল বানিয়ে ২০ জনের বাঁচান মাহরিন চৌধুরী। কিন্তু তাকে বাঁচানো গেল না। সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলে আছড়ে পড়ে।
প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আপন খালাত ভাই মহিদুর রহমানের মেয়ে মাহরিন চৌধুরী। গ্রামের বাড়ি নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার বগুলাগাড়ি চৌধুরী পাড়ায়। মাহরিনের এই অজানা পরিচয় প্রকাশ্যে আসে তার মৃত্যুর পর। তিনি কখনো নিজের রাজনৈতিক পরিচয় দেননি।
আরো পড়ুন:
পাইলট তৌকিরের মরদেহ রাজশাহী পৌঁছেছে
ইবি শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় নতুন মোড়, কমপ্লিট শাটডাউনের হুঁশিয়ারি
এ তথ্য নিশ্চিত করেন মাহরিনের স্বামী মনসুর হেলালও। তিনি জানান, ভোরে ঢাকা থেকে মরদেহ নিয়ে রওনা হয়ে দুপুর ৩টায় জলঢাকার বাড়িতে পৌঁছান। গ্রামের মানুষ কান্নায় ভেঙে পড়ে। বগুলাগাড়ি স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে জানাজা শেষে মাহরিনকে পারিবারিক কবরস্থানে শায়িত করা হয়েছে।
মাহরিন চৌধুরী নীরবে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার পাশে ছিলেন। দলের বড় বড় নেতারা যেখানে ভয় পেয়ে যান, সেখানেও তিনি খালেদা জিয়ার জন্য হাসপাতালে খাবার নিয়ে ছুটে যেতেন। কিন্তু কখনো প্রচারে আসতে চাননি।
মাহরিন স্বামী, দুই ছেলে, দুই ভাই, এক বোন রেখে গেছেন। তিনি হাজারো শিক্ষার্থীর সামনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন।
মাহরিন চৌধুরী ঢাকায় থাকলেও বগুলাগাড়ির মানুষের প্রতি তার ভালোবাসা ছিল। গরিব-দুঃখী মানুষের তিনি সাহায্য করতেন। তার মৃত্যুতে জলঢাকার মানুষ শোকাহত।
ঢাকা/সিথুন/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর মরদ হ ব এনপ র রহম ন র
এছাড়াও পড়ুন:
মাঝরাতে সরকারি কর্মকাণ্ড কতটা স্বাভাবিক
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের রাতের কর্মকাণ্ড নিয়ে বোধকরি একটা মহাকাব্য লিখে ফেলা সম্ভব। তাঁরা যেভাবে গভীর কিংবা শেষ রাতে নানা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, ফেসবুকে বার্তা দিচ্ছেন; তাতে তো মনে হচ্ছে সরকারের কর্তা-ব্যক্তিরা দিনে কাজ না করে রাতেই মনে হয় বেশি কাজ করেন! কয়েকটা উদাহরণ বরং দেওয়া যাক।
মাস কয়েক আগে যখন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্বাভাবিক ভাবে খারাপ হয়ে গেল, আমাদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী রাত তিনটার সময় সংবাদ সম্মেলন ডাকলেন! বাংলাদেশের ইতিহাসে রাত তিনটার সময় আর কোনো মন্ত্রী এ ধরনের সম্মেলনের আয়োজন করেছেন কি না, আমার অন্তত জানা নেই। আমরা সবাই ভাবলাম, তিনি হয়তো বড় কোনো ঘোষণা দেবেন। এরপর কী দেখলাম?
তিনি খুব সাধারণভাবে বললেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকার নিজেদের উদ্যোগকে কঠিন ও শক্তিশালী করার চেষ্টা করবে।
সপ্তাহখানেক আগে হঠাৎ আকাশ থেকে একটি যুদ্ধবিমান ঢাকা শহরের উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল বিল্ডিংয়ে ভেঙে পড়ল। আগুনে দগ্ধ শিশুরা ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে নিজেরা উঠে এসে হাঁটছে; এমন দৃশ্যও আমাদের দেখতে হয়েছে। যে দৃশ্য দেখলে যে কেউ হয়তো ট্রমায় চলে যাবে। ওই স্কুলের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা হয়তো সরাসরি সেই দৃশ্য দেখেছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই চলতে থাকে—এইচএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া সময়ের দাবি ছিল। এ সিদ্ধান্ত সরকার দিনের বেলাতেই নিতে পারত। অথচ আমরা কী দেখলাম?
সরকারের পক্ষ থেকে রাত তিনটার দিকে ফেসবুকে এসে ঘোষণা করা হলো, পরের দিনের এইচএসসি পরীক্ষা পেছানো হয়েছে।
যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।দিন দু-এক আগে এ সরকারকেই যাঁরা চাকরি দিয়েছেন, এ কথা বলছি কারণ, সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিজেই বলেছিলেন, ‘ছাত্ররা আমার নিয়োগকর্তা’—সেই ছাত্রদের সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা গভীর রাতে ফেসবুক এসে লাইভ করেন প্রায় আড়াই ঘণ্টা।
এই আড়াই ঘণ্টার লাইভে মূল যে বক্তব্য তিনি তুলে ধরেছেন, সারমর্ম করলে দাঁড়ায়: বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্ম মানি মেকিং মেশিনে পরিণত হয়েছে এবং অনেকেই এর সঙ্গে জড়িত। তিনি এটাও বলেছেন, এই সংগঠনের সব সিদ্ধান্ত হেয়ার রোড থেকে আসে। অর্থাৎ উপদেষ্টারা যেখানে থাকেন।
এদিকে সোমবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম একটা ফেসবুক পোস্ট করেছেন। যদিও ফেসবুক স্ট্যাটাসটি তিনি বেশ কয়েকবার এডিট করেছেন। তবে প্রথমে যা লিখেছেন, সেটা হচ্ছে, নতুন একটি দলের মহারথীদের কয়েকজন দুর্নীতিতে জড়িত। এ ছাড়া তিনি এটাও বলেছেন, একটা সার্কেলের সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত!
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে তাঁদের কেন প্রশ্রয় দেওয়া হলো? আপনারা যদি জানেনই কিছু মানুষ দুর্নীতিগ্রস্ত। তাহলে সরকারের অংশ হিসেবে আপনাদের তো দায়িত্ব তাঁদের আইনের আওতায় আনা। সেটা না করে ফেসবুকে পোস্ট করতে হচ্ছে কেন? তা–ও আবার রাত তিনটায়!
এই সরকার কি মাঝরাতের ফেসবুকীয় সরকারে পরিণত হয়েছে? পরীক্ষা পেছানোর মতো সিদ্ধান্ত যখন মাঝরাতে নিতে হয়, সংবাদ সম্মেলন যখন রাত তিনটায় করতে হয়, তখন তো প্রশ্ন জাগতেই পারে। কারণ এটা তো স্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়।
যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।
রাষ্ট্র যদি ভালো না থাকে তবে তার মাত্রা কতটুকু, সেটা নির্ণয় এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।
আমিনুল ইসলাম প্রভাষক, এস্তোনিয়ান এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ইউনিভার্সিটি
[email protected]