রাজধানীর উত্তরায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ফাতেমা আক্তারের (৯) দাফন সম্পন্ন হয়েছে নিজ গ্রাম বাগেরহাটের চিতলমারীতে।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকালে উপজেলার কলাতলা ইউনিয়নের কুনিয়া গ্রামে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
ফাতেমার মরদেহ সোমবার (২১ জুলাই) মধ্যরাতে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়। এসময় স্বজনদের আহাজারিতে সেখানে এক হৃদয়বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। দাদা-দাদি, চাচা, খালা, মামা ও প্রতিবেশীরা ফাতেমাকে শেষ বিদায় জানান।
আরো পড়ুন:
কক্সবাজারে পুকুরে ডুবে ২ শিশুর মৃত্যু
নিয়মিত নামাজ পড়ে পুরস্কার পেল ৩ কিশোর
নিহত ফাতেমা আক্তার কুয়েত প্রবাসী বনি আমিন ও গৃহবধূ রুপা দম্পতির সন্তান। তিন ভাই-বোনের মধ্যে সে ছিল সবার বড়। মায়ের সঙ্গে সে ঢাকায় থাকতো।
ফাতেমার চাচা সৈয়দ নোমান হোসেন বলেন, “দুর্ঘটনার সময় আমি মাইলস্টোন স্কুলের কাছেই ছিলাম। খবর শুনে আমিসহ অনেকেই উদ্ধার কাজে অংশ নেই। আমি তখনো জানতাম না আমার ভাতিজি ওখানে মারা গেছে। হাসপাতালে তার মরদেহ শনাক্ত করি। ফাতেমাকে আজ গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।”
ফাতেমার চাচি মুক্তি বেগম বলেন, “পুরো গ্রাম আজ স্তব্ধ। ছোট একটি প্রাণ এভাবে ঝরে যাবে কেউ ভাবেনি। ওর বাবা-মা কথা বলতে পারছেন না। ফাতেমার চলে যাওয়ার শোক কখনোই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়।”
ফাতেমার মামা লিওন বলেন, “মেয়েটাকে নিজ হাতে বড় করেছি। সব শেষ হয়ে গেল। আমি কিছুই বলতে পারছি না। আমাদের বাচ্চাটার চেহারা আর চেনা যাচ্ছে না। আমরা ওকে কবরে রেখে এসেছি।”
সোমবার (২১ জুলাই) দুপুর ১টা ১৮ মিনিটে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজের ভবনে বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীসহ ৩১ জন নিহত হন। দুর্ঘটনার কারণ জানতে ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ঢাকা/শহিদুল/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য
দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।
আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।
লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।
আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।
কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।