পছন্দের মাছ-মাংস খাওয়া হলো না তানবীরের
Published: 22nd, July 2025 GMT
ছোট বেলা থেকেই মাছ ও মাংস খেতে খুব পছন্দ করত তানবীর আহমেদ (১৪)। সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে তার জন্য মাছ ও মাংস রান্না করেছিলেন মা লিপি বেগম। স্কুল ছুটির পর বাসায় ফিরে পরিবারের সঙ্গে খাবার খাওয়ার কথা ছিল তার। তবে, তার আগেই ঢাকার উত্তারার মাইলস্টেন স্কুল এন্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হলে না ফেরার দেশে পড়ি জমায় তানবীর।
তানবীর টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ওয়ার্শী ইউনিয়নের নগরভাদ গ্রামের রুবেল মিয়া ও লিপি বেগম দম্পতির ছেলে। তারা ঢাকার উত্তরায় থাকতেন। তানবীর মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজে যুদ্ধ বিমান বিধ্বস্ত হলে তানবীর নিহত হন। সোমবার রাতে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে গ্রামের বাড়ি নেওয়ার পথে মৌচাক এলাকায় তার মরদেহ বহনকারী ফ্রিজার ভ্যানটি দুর্ঘটনার শিকার হয়। এ ঘটনায় গাড়িতে থাকা নতানবীরের চাচাতো ভাই সাইফুল আহত হন।
আরো পড়ুন:
‘আমরা ওকে কবরে রেখে এসেছি’
যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে নিহত রজনীর দৌলতপুরে দাফন
নিহত তানবীরের চাচা ও স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, “দুর্ঘটনার পর অন্য গাড়িতে করে তানবীরের মরদেহ বাড়িতে আনা হয়। ভোর ৪টায় তানবীরের মরদেহ বাড়িতে পৌঁছায়। সকাল ১০টায় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।”
তানবীরের ছোট ভাই তাশরীফও মাইলস্টোন স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। তাশরীফ বাবার সঙ্গে স্কুল ছুটি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বের হয়ে আসায় দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পায়।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তানবীরের মা লিপি বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে মাংস ও মাছ খেতে খুব ভালোবাসে। ওর জন্য মাছ-মাংস রান্না করেছিলাম। স্কুল থেকে বিকেল ৩টার দিকে এসে আমাদের সঙ্গে খাবার খাওয়ার কথা ছিল ওর। সেই খাবার ওইভাবেই রয়ে গেল।”
তানবীরের বাবা রুবেল মিয়া বলেন, “ও অষ্টম শ্রেণিতে ও ছোট ছেলে ইংলিশ ভার্সনে একই স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়তো। দুইজন দুই ভবনে ক্লাস করতো। তানবীরের ছুটি হয় দুপুর ১টায়। ওর ছোট ভাইয়ের ছুটি হয় সাড়ে ১২ টায়।”
তিনি বলেন, “তানবীর প্রথম শ্রেণিতে থেকে ক্লাসে প্রথম ছিল। যে কারণে সে ক্লাসের ক্যাপটেন ছিল। সবাইকে সারিবদ্ধভাবে নিচে নামাতে গিয়ে ওর মৃত্যু হয়েছে।”
তানবীরের ছোট ভাই তাশরীফ বলে, “বাবা আমাকে ও ভাইকে একসঙ্গে স্কুলে নিয়ে গিয়েছিল। স্কুল শেষে আমি বাবার সঙ্গে ব্যাংকে গিয়েছিলাম। ব্যাংকে থাকতে জানতে পারি, স্কুলে বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে। পরে আমরা স্কুলে আসি।”
স্থানীয় বাসিন্দা আশরাফ বলেন, “এলাকার সবাই তানবীরকে খুব ভালোবাসতো। বাড়িতে এলে সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকত। তার মতো মেধাবী শিক্ষার্থী আমাদের গ্রামে খুবই কম আছে।”
আলমগীর হোসেন নামের আরেকজন বলেন, “আমি তানবীরকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। লেখাপড়ায় সবসময়ই ভালো করার চেষ্টা করত। তার স্বপ্ন ছিল বড় ডাক্তার হবে। তার অকাল মৃত্যু খুবই বেদনাদায়ক।”
মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবিএম আরিফুল ইসলাম বলেন, “এটি হৃদয়বিদারক ঘটনা। আমরা সবাই মর্মাহত। আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তানবীরের পরিবারের পাশে থাকব।”
ঢাকা/কাওছার/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম ইলস ট ন স ক ল ত নব র র দ র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য
দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।
আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।
লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।
আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।
কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।