ছোট বেলা থেকেই মাছ ও মাংস খেতে খুব পছন্দ করত তানবীর আহমেদ (১৪)। সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে তার জন্য মাছ ও মাংস রান্না করেছিলেন মা লিপি বেগম। স্কুল ছুটির পর বাসায় ফিরে পরিবারের সঙ্গে খাবার খাওয়ার কথা ছিল তার। তবে, তার আগেই ঢাকার উত্তারার মাইলস্টেন স্কুল এন্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হলে না ফেরার দেশে পড়ি জমায় তানবীর।

তানবীর টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ওয়ার্শী ইউনিয়নের নগরভাদ গ্রামের রুবেল মিয়া ও লিপি বেগম দম্পতির ছেলে। তারা ঢাকার উত্তরায় থাকতেন। তানবীর মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজে যুদ্ধ বিমান বিধ্বস্ত হলে তানবীর নিহত হন। সোমবার রাতে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে গ্রামের বাড়ি নেওয়ার পথে মৌচাক এলাকায় তার মরদেহ বহনকারী ফ্রিজার ভ্যানটি দুর্ঘটনার শিকার হয়। এ ঘটনায় গাড়িতে থাকা নতানবীরের চাচাতো ভাই সাইফুল আহত হন।

আরো পড়ুন:

‘আমরা ওকে কবরে রেখে এসেছি’

যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে নিহত রজনীর দৌলতপুরে দাফন

নিহত তানবীরের চাচা ও স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, “দুর্ঘটনার পর অন্য গাড়িতে করে তানবীরের মরদেহ বাড়িতে আনা হয়। ভোর ৪টায় তানবীরের মরদেহ বাড়িতে পৌঁছায়। সকাল ১০টায় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।”

তানবীরের ছোট ভাই তাশরীফও মাইলস্টোন স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। তাশরীফ বাবার সঙ্গে স্কুল ছুটি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বের হয়ে আসায় দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পায়।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তানবীরের মা লিপি বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে মাংস ও মাছ খেতে খুব ভালোবাসে। ওর জন্য মাছ-মাংস রান্না করেছিলাম। স্কুল থেকে বিকেল ৩টার দিকে এসে আমাদের সঙ্গে খাবার খাওয়ার কথা ছিল ওর। সেই খাবার ওইভাবেই রয়ে গেল।” 

তানবীরের বাবা রুবেল মিয়া বলেন, “ও অষ্টম শ্রেণিতে ও ছোট ছেলে ইংলিশ ভার্সনে একই স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়তো। দুইজন দুই ভবনে ক্লাস করতো। তানবীরের ছুটি হয় দুপুর ১টায়। ওর ছোট ভাইয়ের ছুটি হয় সাড়ে ১২ টায়।” 

তিনি বলেন, “তানবীর প্রথম শ্রেণিতে থেকে ক্লাসে প্রথম ছিল। যে কারণে সে ক্লাসের ক্যাপটেন ছিল। সবাইকে সারিবদ্ধভাবে নিচে নামাতে গিয়ে ওর মৃত্যু হয়েছে।”

তানবীরের ছোট ভাই তাশরীফ বলে, “বাবা আমাকে ও ভাইকে একসঙ্গে স্কুলে নিয়ে গিয়েছিল। স্কুল শেষে আমি বাবার সঙ্গে ব্যাংকে গিয়েছিলাম। ব্যাংকে থাকতে জানতে পারি, স্কুলে বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে। পরে আমরা স্কুলে আসি।”

স্থানীয় বাসিন্দা আশরাফ বলেন, “এলাকার সবাই তানবীরকে খুব ভালোবাসতো। বাড়িতে এলে সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকত। তার মতো  মেধাবী শিক্ষার্থী আমাদের গ্রামে খুবই কম আছে।”

আলমগীর হোসেন নামের আরেকজন বলেন, “আমি তানবীরকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। লেখাপড়ায় সবসময়ই ভালো করার চেষ্টা করত। তার স্বপ্ন ছিল বড় ডাক্তার হবে। তার অকাল মৃত্যু খুবই বেদনাদায়ক।”

মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবিএম আরিফুল ইসলাম বলেন, “এটি হৃদয়বিদারক ঘটনা। আমরা সবাই মর্মাহত। আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তানবীরের পরিবারের পাশে থাকব।”

ঢাকা/কাওছার/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম ইলস ট ন স ক ল ত নব র র দ র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

মাঝরাতে সরকারি কর্মকাণ্ড কতটা স্বাভাবিক

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের রাতের কর্মকাণ্ড নিয়ে বোধকরি একটা মহাকাব্য লিখে ফেলা সম্ভব। তাঁরা যেভাবে গভীর কিংবা শেষ রাতে নানা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, ফেসবুকে বার্তা দিচ্ছেন; তাতে তো মনে হচ্ছে সরকারের কর্তা-ব্যক্তিরা দিনে কাজ না করে রাতেই মনে হয় বেশি কাজ করেন! কয়েকটা উদাহরণ বরং দেওয়া যাক।

মাস কয়েক আগে যখন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্বাভাবিক ভাবে খারাপ হয়ে গেল, আমাদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা  মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী রাত তিনটার সময় সংবাদ সম্মেলন ডাকলেন! বাংলাদেশের ইতিহাসে রাত তিনটার সময় আর কোনো মন্ত্রী এ ধরনের সম্মেলনের আয়োজন করেছেন কি না, আমার অন্তত জানা নেই। আমরা সবাই ভাবলাম, তিনি হয়তো বড় কোনো ঘোষণা দেবেন। এরপর কী দেখলাম?

তিনি খুব সাধারণভাবে বললেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকার নিজেদের উদ্যোগকে কঠিন ও শক্তিশালী করার চেষ্টা করবে।

সপ্তাহখানেক আগে হঠাৎ আকাশ থেকে একটি  যুদ্ধবিমান ঢাকা শহরের উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল বিল্ডিংয়ে ভেঙে পড়ল। আগুনে দগ্ধ শিশুরা ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে নিজেরা উঠে এসে হাঁটছে; এমন দৃশ্যও আমাদের দেখতে হয়েছে। যে দৃশ্য দেখলে যে কেউ হয়তো ট্রমায় চলে যাবে। ওই স্কুলের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা হয়তো সরাসরি সেই দৃশ্য দেখেছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই চলতে থাকে—এইচএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া সময়ের দাবি ছিল। এ সিদ্ধান্ত সরকার দিনের বেলাতেই নিতে পারত। অথচ আমরা কী দেখলাম?

সরকারের পক্ষ থেকে  রাত তিনটার দিকে ফেসবুকে এসে ঘোষণা করা হলো, পরের দিনের এইচএসসি পরীক্ষা পেছানো হয়েছে।

যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।

দিন দু-এক আগে এ সরকারকেই যাঁরা চাকরি দিয়েছেন, এ কথা বলছি কারণ, সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিজেই বলেছিলেন, ‘ছাত্ররা আমার নিয়োগকর্তা’—সেই ছাত্রদের সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা গভীর রাতে ফেসবুক এসে লাইভ করেন প্রায় আড়াই ঘণ্টা।

এই আড়াই ঘণ্টার লাইভে মূল যে বক্তব্য তিনি তুলে ধরেছেন,  সারমর্ম করলে দাঁড়ায়: বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্ম মানি মেকিং মেশিনে পরিণত হয়েছে এবং অনেকেই এর সঙ্গে জড়িত। তিনি এটাও বলেছেন, এই সংগঠনের সব সিদ্ধান্ত হেয়ার রোড থেকে আসে। অর্থাৎ উপদেষ্টারা যেখানে থাকেন।

এদিকে সোমবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম একটা ফেসবুক পোস্ট করেছেন। যদিও ফেসবুক স্ট্যাটাসটি তিনি বেশ কয়েকবার এডিট করেছেন। তবে প্রথমে যা লিখেছেন, সেটা হচ্ছে, নতুন একটি দলের মহারথীদের কয়েকজন দুর্নীতিতে জড়িত। এ ছাড়া তিনি এটাও বলেছেন, একটা সার্কেলের সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত!

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে তাঁদের কেন প্রশ্রয় দেওয়া হলো? আপনারা যদি জানেনই কিছু মানুষ দুর্নীতিগ্রস্ত। তাহলে সরকারের অংশ হিসেবে আপনাদের তো দায়িত্ব তাঁদের আইনের আওতায় আনা। সেটা না করে ফেসবুকে পোস্ট করতে হচ্ছে কেন? তা–ও আবার রাত তিনটায়!

এই সরকার কি মাঝরাতের ফেসবুকীয় সরকারে পরিণত হয়েছে? পরীক্ষা পেছানোর মতো সিদ্ধান্ত যখন মাঝরাতে নিতে হয়, সংবাদ সম্মেলন যখন রাত তিনটায় করতে হয়, তখন তো প্রশ্ন জাগতেই পারে। কারণ এটা তো স্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়।

যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।
রাষ্ট্র যদি ভালো না থাকে তবে তার মাত্রা কতটুকু, সেটা নির্ণয় এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।

আমিনুল ইসলাম প্রভাষক, এস্তোনিয়ান এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ইউনিভার্সিটি
[email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ