ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় তিন গ্রামের প্রায় ১ হাজার বিঘা আবাদি জমি পানির নিচে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন হাজারো চাষী। বৃষ্টির পানি নিষ্কাষণ ব্যবস্থা না থাকায় কোনো চাষাবাদ করতে পারছেন না তারা।

চাষীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার নরদহি, মোল্যাডাঙ্গা ও বগেরগাছি এই তিন গ্রামের প্রায় ১ হাজার বিঘা আবাদি জমি পানির নিচে। কোনো আবাদই করতে পারছেন না তারা। এতে কষ্টে দিন কাটাতে হচ্ছে এই এলাকার চাষীদের। দীর্ঘদিন ধরে তারা এই আবাদি জমিতে জলাবদ্ধতার সমস্যায় ভুগছেন। কিন্তু সমস্যা নিরসনে বারবার উদ্যোগ নিলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। এই জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগের দাবি জানান তারা।

কওসার শেখ নামে এক চাষী বলেন, “এই মাঠের জলাবদ্ধতা নিষ্কাষণের জন্য অনেকবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। বৃষ্টির পানিতে এই মাঠ একদম তলিয়ে যায়। কোনো চাষাবাদ করা যায় না।”

আরো পড়ুন:

পাকিস্তানে বৃষ্টি-বন্যায় নিহত অন্তত ২১১

হবিগঞ্জে পাহাড়ি ঢলে সেতু ভেঙে দুর্ভোগ

সন্তোষ গাইন নামে আরেক চাষী বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে এই মাঠের পানি জলাবদ্ধতার সমস্যায় ভুগছেন। এই মাঠের হাজার হাজার বিঘা জমি নষ্ট হয়ে পড়ে থাকে। শুধু পানির কারণে কোনো আবাদ করা যায় না। যদি এই পানি নিষ্কাষণ করা হয় তাহলে এই এলাকার মানুষ স্বস্তি পাবে। তারা চাষাবাদ করে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে পারবে।”

শুকুর আলী বলেন, “এই মাঠে আমার ১০ বিঘা জমি আছে। এই মাঠের জমি ছাড়া আমার অন্য কোথাও জমি নেই। এই জমির উপরেই সংসার চালাতে হয়। কিন্তু পানির কারণে আবাদ হয় না। খুব কষ্টে দিন কাটে আমাদের। এই মাঠের পরেই একটি বাওড় আছে। সেখানে পানি নিষ্কাষনের ব্যবস্থা করা হলে এই মাঠের প্রায় ১ হাজার বিঘা জমিতে চাষাবাদ করা যাবে। সরকারের কাছে আবেদন যেন এই পানি নিষ্কাষণের ব্যবস্থা করা হয়।”

এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.

দেদারুল ইসলাম বলেন, “ওই মাঠের চাষীরা লিখিত আবেদন দিলে অবশ্যই জনস্বার্থে মাঠের পানি নিষ্কাষণের ব্যবস্থা করা হবে।”

ঢাকা/শাহরিয়ার/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প ন বন দ চ ষ ব দ কর এই ম ঠ র ব যবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

পরাবাস্তবতার আবেদন কি ফুরিয়েছে

অবচেতনের মানচিত্র ধরে এক অন্তহীন অভিযাত্রা কবি–সাহিত্যিকেরা যুগ যুগ ধরে করে আসছেন। সাহিত্যের দীর্ঘ যাত্রাপথে এমন কিছু বাঁক আসে, যা তার গতিপথকে চিরতরে বদলে দেয়। পরাবাস্তবতা বা সুররিয়ালিজম ছিল এমনই এক যুগান্তকারী আন্দোলন, যা কেবল শিল্পের আঙ্গিক নয়; বরং শিল্পীর বিশ্ববীক্ষা এবং আত্মবীক্ষণকে সম্পূর্ণ নতুন এক দর্শন দান করেছিল। এটি ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ। এর মূল লক্ষ্য ছিল মানব মনের সেই গভীরে প্রবেশ করা, যেখানে যুক্তির আলো পৌঁছায় না; সেই অবচেতনের অন্ধকার মহাসাগর থেকে তুলে আনা বিস্মৃত স্বপ্ন, অবদমিত ইচ্ছা আর আদিম প্রবৃত্তির মণি–মুক্তা। পরাবাস্তবতা তাই কেবল একটি শিল্পরীতি নয়, এটি চেতনার শৃঙ্খলমুক্তির এক দুঃসাহসী ইশতেহার।

১৯২৪ সালে ফরাসি কবি ও লেখক আঁদ্রে ব্রেটন তাঁর ‘পরাবাস্তবতার প্রথম ইশতেহার’ (ম্যানিফেস্টো অব সুররিয়ালিজম) প্রকাশের মাধ্যমে এই আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। ব্রেটনের সংজ্ঞায়, পরাবাস্তবতা হলো, ‘বিশুদ্ধ মানসিক স্বয়ংক্রিয়তা, যার মাধ্যমে মুখ বা লেখনী দিয়ে অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে চিন্তার আসল কার্যকারিতাকে প্রকাশ করার ইচ্ছা পোষণ করা হয়। এটি যুক্তির সমস্ত নিয়ন্ত্রণ থেকে এবং সকল প্রকার নান্দনিক ও নৈতিক উদ্দেশ্য থেকে বিযুক্ত চিন্তার এক শ্রুতলিখন।’

এই দর্শনের প্রধান পাথেয় ছিল ভিয়েনার মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের যুগান্তকারী মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব। ফ্রয়েড দেখিয়েছিলেন যে মানুষের সচেতন মনের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক বিশাল অবচেতন জগৎ, যা তার আচরণ, স্বপ্ন ও ব্যক্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। পরাবাস্তববাদীরা ফ্রয়েডের এই তত্ত্বকে লুফে নিয়েছিলেন। তাঁদের কাছে শিল্পসৃষ্টির উদ্দেশ্যই ছিল যুক্তির সেন্সরশিপকে ফাঁকি দিয়ে অবচেতন মনের এই লুকানো জগৎকে উন্মোচিত করা। তাঁরা চেয়েছিলেন, স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে একীভূত করে এক ‘পরম বাস্তবতা’ বা ‘সুররিয়ালিটি’ তৈরি করতে।

পরাবাস্তবতা ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ।

পরাবাস্তবতার পদযাত্রা প্যারিসের শৈল্পিক পরিমণ্ডল থেকে শুরু হলেও এর ঢেউ খুব দ্রুতই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আঁদ্রে ব্রেটন ছিলেন এই আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা, কিন্তু তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় সমবেত হয়েছিলেন বহু প্রতিভাবান স্রষ্টা, যাঁরা নিজ নিজ ভাষায় ও সংস্কৃতিতে পরাবাস্তবতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।

আঁদ্রে ব্রেটন (জন্ম: ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৬—মৃত্যু: ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬)

সম্পর্কিত নিবন্ধ