চোখের কোন সমস্যায় কোন বিশেষজ্ঞের কাছে যাবেন
Published: 22nd, July 2025 GMT
১. অফথ্যালমোলজিস্ট বা চক্ষুবিশেষজ্ঞ: চোখের সব ধরনের রোগ, যেমন চোখে ব্যথা, ঝাপসা দেখা, চোখ লাল হওয়া, ছানি, গ্লুকোমা ইত্যাদির চিকিৎসা করেন। প্রয়োজনে সার্জারিও করতে পারেন। তবে তাঁদের কাজের ক্ষেত্র আলাদা হতে পারে। অফথ্যালমোলজিতে অনেক সাব-স্পেশালিটি আছে; কারণ, চোখ একটি জটিল অঙ্গ।
২. অপটোমেট্রিস্ট: সাধারণত দৃষ্টিশক্তি যাচাই করেন। তবে চোখে গুরুতর সমস্যা থাকলে অফথ্যালমোলজিস্টের কাছে পাঠিয়ে দেন।
৩.
অপটিশিয়ান: চশমা বা কন্ট্যাক্ট লেন্স বানানো ও সেসবের ফিটিংয়ের কাজ করেন। তাঁরা চিকিৎসা দেন না।
১. কর্নিয়া ও রিফ্রাকটিভ সার্জারি বিশেষজ্ঞ
কর্নিয়াসংক্রান্ত (চোখের সামনের স্বচ্ছ অংশ) রোগ, যেমন কর্নিয়ার আলসার বা কর্নিয়ার সংক্রমণের ক্ষেত্রে এই সাব-স্পেশালিটিতে দেখাতে হবে। কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করার কাজটি তাঁরাই করেন। আরও করেন ল্যাসিক ও অন্যান্য সার্জারি; অর্থাৎ যেসব সমস্যা দৃষ্টিশক্তি বা দেখার ক্ষমতার সঙ্গে যুক্ত (রিফ্রাকটিভ সার্জারি), সেসব সার্জারি করেন তাঁরা।
২. নিউরো-অফথ্যালমোলজিস্ট
চোখ ও স্নায়ুর সংযোগজনিত সমস্যার চিকিৎসা করেন এই বিশেষজ্ঞরা। ডাবল ভিশন (একটি জিনিস দুটি দেখা), চোখের পাতা পড়ে যাওয়া, অপটিক নার্ভের সমস্যা, মস্তিষ্কের টিউমার এবং স্ট্রোকজনিত চোখের সমস্যায় নিউরো-অফথ্যালমোলজিস্ট চিকিৎসা দেন।
৩. পেডিয়াট্রিক অফথ্যালমোলজিস্ট
শিশুদের চোখের সমস্যায় চিকিৎসা দেন তাঁরা। শিশুদের ট্যারা চোখের সমস্যা সমাধানে এই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
আরও পড়ুনচোখ ভালো রাখতে চাইলে এসব খাবার খান০৪ নভেম্বর ২০২৪৪. গ্লুকোমা বিশেষজ্ঞ
চোখের চাপ বৃদ্ধি এবং অপটিক নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সমস্যায় গ্লুকোমা বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হয়। এ ধরনের সমস্যায় ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়ে যায় এবং চিরস্থায়ী অন্ধত্বের ঝুঁকি থাকে।
৫. রেটিনা ও ভিট্রিয়াস বিশেষজ্ঞ
ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি, রেটিনাল ডিটাচমেন্ট, ম্যাকুলার ডিজেনারেশনের মতো রোগের চিকিৎসা করেন এই বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ ধরনের ইনজেকশন বা রেটিনাল সার্জারির মাধ্যমে চিকিৎসা দেন তাঁরা।
৬. ক্যাটার্যাক্ট ও ইন্ট্রা-অকুলার সার্জন
চোখের ছানি অপারেশন ও লেন্স প্রতিস্থাপন করেন এই বিশেষজ্ঞরা।
কর্নিয়া ও রিফ্রাকটিভ সার্জারি বিশেষজ্ঞরা কর্নিয়াসংক্রান্ত সমস্যায় সার্জারি করেনউৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পরাবাস্তবতার আবেদন কি ফুরিয়েছে
অবচেতনের মানচিত্র ধরে এক অন্তহীন অভিযাত্রা কবি–সাহিত্যিকেরা যুগ যুগ ধরে করে আসছেন। সাহিত্যের দীর্ঘ যাত্রাপথে এমন কিছু বাঁক আসে, যা তার গতিপথকে চিরতরে বদলে দেয়। পরাবাস্তবতা বা সুররিয়ালিজম ছিল এমনই এক যুগান্তকারী আন্দোলন, যা কেবল শিল্পের আঙ্গিক নয়; বরং শিল্পীর বিশ্ববীক্ষা এবং আত্মবীক্ষণকে সম্পূর্ণ নতুন এক দর্শন দান করেছিল। এটি ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ। এর মূল লক্ষ্য ছিল মানব মনের সেই গভীরে প্রবেশ করা, যেখানে যুক্তির আলো পৌঁছায় না; সেই অবচেতনের অন্ধকার মহাসাগর থেকে তুলে আনা বিস্মৃত স্বপ্ন, অবদমিত ইচ্ছা আর আদিম প্রবৃত্তির মণি–মুক্তা। পরাবাস্তবতা তাই কেবল একটি শিল্পরীতি নয়, এটি চেতনার শৃঙ্খলমুক্তির এক দুঃসাহসী ইশতেহার।
১৯২৪ সালে ফরাসি কবি ও লেখক আঁদ্রে ব্রেটন তাঁর ‘পরাবাস্তবতার প্রথম ইশতেহার’ (ম্যানিফেস্টো অব সুররিয়ালিজম) প্রকাশের মাধ্যমে এই আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। ব্রেটনের সংজ্ঞায়, পরাবাস্তবতা হলো, ‘বিশুদ্ধ মানসিক স্বয়ংক্রিয়তা, যার মাধ্যমে মুখ বা লেখনী দিয়ে অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে চিন্তার আসল কার্যকারিতাকে প্রকাশ করার ইচ্ছা পোষণ করা হয়। এটি যুক্তির সমস্ত নিয়ন্ত্রণ থেকে এবং সকল প্রকার নান্দনিক ও নৈতিক উদ্দেশ্য থেকে বিযুক্ত চিন্তার এক শ্রুতলিখন।’
এই দর্শনের প্রধান পাথেয় ছিল ভিয়েনার মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের যুগান্তকারী মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব। ফ্রয়েড দেখিয়েছিলেন যে মানুষের সচেতন মনের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক বিশাল অবচেতন জগৎ, যা তার আচরণ, স্বপ্ন ও ব্যক্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। পরাবাস্তববাদীরা ফ্রয়েডের এই তত্ত্বকে লুফে নিয়েছিলেন। তাঁদের কাছে শিল্পসৃষ্টির উদ্দেশ্যই ছিল যুক্তির সেন্সরশিপকে ফাঁকি দিয়ে অবচেতন মনের এই লুকানো জগৎকে উন্মোচিত করা। তাঁরা চেয়েছিলেন, স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে একীভূত করে এক ‘পরম বাস্তবতা’ বা ‘সুররিয়ালিটি’ তৈরি করতে।
পরাবাস্তবতা ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ।পরাবাস্তবতার পদযাত্রা প্যারিসের শৈল্পিক পরিমণ্ডল থেকে শুরু হলেও এর ঢেউ খুব দ্রুতই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আঁদ্রে ব্রেটন ছিলেন এই আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা, কিন্তু তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় সমবেত হয়েছিলেন বহু প্রতিভাবান স্রষ্টা, যাঁরা নিজ নিজ ভাষায় ও সংস্কৃতিতে পরাবাস্তবতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।
আঁদ্রে ব্রেটন (জন্ম: ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৬—মৃত্যু: ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬)