ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) পুকুর থেকে শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহর মরদেহ উদ্ধারের প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে ফের আন্দোলন করেছেন শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বেলা ১১ টার দিকে প্রশাসন ভবন চত্বরে তিন দফা দাবিতে মুখে কালো কাপড় বেঁধে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা।

তাদের দাবিসমূহ হলো- শিক্ষার্থী সাজিদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ, দ্রুত সময়ে সুষ্ঠু তদন্ত সমাপ্ত ও দায়িত্ব অবহেলায় প্রশাসনের ক্ষমা চেয়ে স্পষ্ট বিবৃতি দিতে হবে। 

আরো পড়ুন:

উক্যচিংয়ের মরদেহ পৌঁছেছে গ্রামে, সৎকার বুধবার

মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি: দগ্ধ সায়ান ইউসুফের মৃত্যু, লক্ষ্মীপুরে দাফন

পরে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে প্রশাসন ভবন থেকে মৌন মিছিল শুরু করে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে শেষ হয়। 

আন্দোলনকারীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার এক ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। তার হত্যার রহস্য দ্রুত উদঘাটনে প্রশাসনকে বারবার বলা হলেও আমাদের কথা শুনছে না। তখন বাধ্য হয়ে আন্দোলন করলে সেটাকে আবার মব বলে আমাদের দমিয়ে দিতে চায়। অথচ আমরা মব করতে আসিনি। আমরা চাই প্রশাসন তাদের অপারগতা স্বীকার করুক। আমাদের সঙ্গে কথা বলে সাজিদের মৃত্যুর তদন্তের অগ্রগতি জানিয়ে দিক।

তারা বলেন, ইবি প্রশাসনের ন্যূনতম দায়িত্ববোধ নেই। আধুনিক এ বিশ্ব যেখানে প্রযুক্তিতে এগিয়ে গেছে, সেখানে মান্ধাতার আমলের মতো প্রশাসন চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিজিটালাইজ ক্লাসরুম নেই। রাতে ক্যাম্পাসে ঢুকলে মনে হয়, ভূতুড়ে কোথায় প্রবেশ করেছি।

এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড.

শাহীনুজ্জামানকে একাধিকবার ফোন করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

এদিকে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময়কালে সাজিদ আব্দুল্লাহর মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছেন তার পরিবার। এ সময় তার লাশ নিয়ে রাজনীতি করে ক্যাম্পাসে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি না করার অনুরোধ করেন তারা। 

জানা যায়, সাজিদের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্তে কাজের অগ্রগতি জানতে ক্যাম্পাসে আসেন সাজিদের বাবা, চাচা, ভগ্নিপতি ও প্রতিবেশী। পরে সাজিদের মৃত্যুর কারণ উদঘাটনে গঠিত ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি ও হল কর্তৃপক্ষের তদন্ত কমিটির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তারা। 

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সাজিদের পরিবারের সদস্যরা বলেন, মেডিকেল থেকে যখন আমাদের কাছে সাজিদের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়, তার পূর্বে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্তের বিষয়ে লিখিত স্বাক্ষর করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আরো দ্রুত তদন্তের দাবি জানালে ছয়দিনের মধ্যে তা সম্পন্ন করার কথা জানতে পেরেছি। 

তারা বলেন, আমরা ক্যাম্পাসে এসে তদন্ত কমিটির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। আমাদের তদন্ত কমিটির উপর আস্থা আছে। আমরা চাই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সুষ্ঠু তদন্ত করে সাজিদের মৃত্যুর কারণ উদঘাটন হোক। তদন্তের পর যদি মনে হয় অস্বাভাবিক মৃত্যু, তাহলে আমরা এ হত্যার সুষ্ঠু বিচারের জন্য যা করা প্রয়োজন, করবো। আপাতত থানায় একটি জিডি করা আছে। তদন্তের পর পরিস্থিতি অনুযায়ী আমরা সিদ্ধান্ত নেব।

তারা আরো বলেন, ক্যাম্পাসের ১৬ হাজার শিক্ষার্থী আমাদের সন্তানের মতো। তারা এখানে পড়াশোনার জন্য এসেছে। সাজিদের এ মর্মান্তিক ঘটনায় সবাই ব্যথিত। তারা সাজিদের মৃত্যুর কারণ জানতে ও বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করছে। কিন্তু সাজিদের লাশ নিয়ে রাজনীতি করে ক্যাম্পাসে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হোক, এটা আমরা চাই না। আমরা চাই ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকুক এবং সাজিদের আকস্মিক মৃত্যুর তদন্ত কার্যক্রম দ্রুত ও সঠিকভাবে চলতে থাকুক।

মতবিনিময়কালে উপস্থিত ছিলেন, সাজিদের বাবা আহসান হাবিবুল্লাহ দেলওয়ার, সাজিদের চাচা, ভগ্নিপতি, প্রতিবেশী ও ধর্মতত্ত্ব অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আ ব ম ছিদ্দিকুর রহমান আশ্রাফী, আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. নাসির উদ্দীন মিঝি প্রমুখ।

গত ১৭ জুলাই বিকেল সাড়ে ৬টায় শাহ আজিজুর রহমান হল পুকুর থেকে আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ বর্ষের শিক্ষার্থী সাজিদের লাশ উদ্ধার করা হয়। এরপর থেকে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদঘাটনের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস।  গত ১৮ জুলাই সকাল সাড়ে ৯টায় সাজিদের লাশ ময়না তদন্ত করা হয়।

ঢাকা/তানিম/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন হত তদন ত ক তদন ত র র তদন ত আম দ র পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

বিয়ে বাড়িতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে বরের বাবার মৃত্যু

হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলায় বিয়ে বাড়ির আলোকসজ্জায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ হারালেন বরের বাবা বিষু পাল (৬৫)। বুধবার (৩০ জুলাই) উপজেলার গুনই মদনমুরত গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

বানিয়াচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। আইনানুগ প্রক্রিয়া শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

স্থানীয়রা জানান, বিষু পালের বড় ছেলে বিজয় পালের বিয়ে ঠিক হয় ৩১ জুলাই (বৃহস্পতিবার)। সেই উপলক্ষে বাড়িতে আলোকসজ্জার আয়োজন করা হয়। বাড়ির একটি গ্রিলে অস্থায়ী বিদ্যুৎ লাইনের তার ঝুলছিল। যেখানে লিকেজ ছিল। সকালে অসাবধানতাবশত সেই গ্রিলে হাত দিলে বিষু পাল বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। পরিবারের লোকজন তাকে উদ্দার করে হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। 

আরো পড়ুন:

কুড়িগ্রামে সাপের কামড়ে সাপুড়ের মৃত্যু

কিশোরগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ২ কৃষকের মৃত্যু

বানিয়াচং থানার এসআই সজিব ঘোষ জানান, ঘটনাটি মর্মান্তিক। বিয়ের আনন্দময় পরিবেশ হঠাৎ করে বিষাদে পরিণত হয়েছে। বিকেলে বিষু পালের পরিবারের সদস্যরা বিনা ময়নাতদন্তে লাশ নিয়ে যাওয়ার জন্য হবিগঞ্জ জেলা সদরে গিয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর আবেদন করেছেন। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। 

ঢাকা/মামুন/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ