সংখ্যালঘুদের বাদ দিয়ে সফল রাষ্ট্র সম্ভব নয়
Published: 22nd, July 2025 GMT
বিভেদ, বিচ্যুতির পথ ছেড়ে দায়িত্বশীল রাজনীতির মাধ্যমে রাষ্ট্রকাঠামোর জবাবদিহি নিশ্চিত করার মাধ্যমে সংকটের সমাধান সম্ভব। সংখ্যালঘুদের বাদ দিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সফল রাষ্ট্র গঠন সম্ভব হবে না। এই রাষ্ট্রকে একটা নাগরিকবান্ধব রাষ্ট্র হতে হবে।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে ‘সংবিধান সংস্কার এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার মিলনায়তনে এই আলোচনার আয়োজন করে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ও বাংলাদেশ মাইনোরিটি অ্যালায়েন্স। এতে সভাপতিত্ব করেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম।
মাইলস্টোন স্কুলে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত ও শিক্ষার্থীদর প্রাণহানির কথা উল্লেখ করে হাসনাত কাইয়ূম বলেন, ‘এ ঘটনা আমাদের প্রত্যেককে শোকার্ত করে রেখেছে। অভ্যুত্থানের সময়ে আমরা যে ধরনের একটা পরিস্থিতির মধ্যে ছিলাম, সেটা থেকে আরেক স্তর নিচে, আমাদের জন্য আরেকটু বিষণ্ন একটা সময় আসছে। সে সময় একটা ভয় ছিল, একটা প্রতিরোধের আকাঙ্ক্ষা ছিল। আজকের পরিস্থিতিটা আসলে এত বেশি শোকাবহ এবং এত ছোট বাচ্চাদের ওপর দিয়ে আসলে ঘটনাটা গেছে, এটা বহন করা কঠিন।’
হাসনাত কাইয়ূম বলেন, বিভেদ, বিচ্যুতির পথ ছেড়ে দায়িত্বশীল রাজনীতির মাধ্যমে রাষ্ট্রকাঠামোর জবাবদিহি নিশ্চিত করার মাধ্যমে সংকটের সমাধান সম্ভব। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, পাহাড়ি, দলিত, হরিজনসহ সব জাতিগোষ্ঠীর সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও রাষ্ট্রকর্মে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারলে রাষ্ট্রের মনস্তাত্ত্বিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক অনেকগুলো সংকট কেটে যাবে। সংখ্যালঘুদের বাদ দিয়ে সফল রাষ্ট্র গঠন সম্ভব হবে না। এই রাষ্ট্রকে একটা নাগরিকবান্ধব রাষ্ট্র হতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও গণ–অভ্যুত্থানের পর গত এক বছরে অন্তর্বর্তী সরকার সবচেয়ে বেশি বৈষম্যের শিকার মানুষগুলোর জন্য কী করেছে, এই প্রশ্ন তোলেন লেখক ও গবেষক আলতাফ পারভেজ। তিনি বলেন, সংখ্যালঘুদের সমস্যার সমাধান করা না গেলে বিপদের আশঙ্কা রয়েছে। বৈশ্বিক স্নায়ুযুদ্ধ দক্ষিণ এশিয়ার দিকে এগোচ্ছে। সমস্যা জিইয়ে রাখলে সেগুলোকে কেন্দ্র করে বৈদেশিক হস্তক্ষেপ আসতে পারে। এটি সবার জন্যই ক্ষতির কারণ হবে।
আলতাফ পারভেজ বলেন, সবাইকে নিয়ে রাষ্ট্র গঠন করা না গেলে, সংস্কার করা না গেলে অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র গঠন সম্ভব হবে না। তিনি বাংলাদেশের স্বার্থে একটি সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করার প্রস্তাব করে বলেন, এই কমিশন থেকে সংখ্যালঘুদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক অবস্থা নিয়ে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ থাকতে হবে। কমিশনের প্রতিবেদনের আলোকে সংবিধানে সংখ্যালঘুদের বিষয়গুলো আনতে হবে।
জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, রাজনীতিবিদদের সংবিধান সংস্কারের জন্য ডাকা হচ্ছে। সংবিধান সংস্কার সংখ্যাগুরুর সুরক্ষার জন্য নয়, সংখ্যালঘুদের জন্যও। অথচ সংবিধান সংস্কার কমিটিতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কোনো শ্রমিক, পেশাজীবী নেই।
বাংলাদেশ মাইনোরিটি অ্যালায়েন্সের সভাপতি প্রদীপ চন্দ্র এখনো সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চলছে বলে অভিযোগ করেন।
বাংলাদেশ মাইনোরিটি অ্যালায়েন্সের সদস্য খোকন দাসের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন কবি শহীদুল্লাহ ফরায়জী, গবেষক হেলাল মহিউদ্দীন, বিবেকানন্দ গবেষণা কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক নরেন্দ্রনাথ মজুমদার, শ্রীশ্রী হরিচাঁদ মন্দির পরিচালনা কমিটি সাধারণ সম্পাদক নিপীন্দ্রনাথ হিরা এবং আইনজীবী কাজী জাহিদ ইকবাল, প্রহল্লাত দেবনাথ ও উৎপল বিশ্বাস।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ষ ট র গঠন র ষ ট রক র জন য র জন ত
এছাড়াও পড়ুন:
লোহাগড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র কারাগারে
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় নড়াইলের লোহাগড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আশরাফুল আলমের জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বুধবার (৩০ জুলাই) লোহাগড়া আমলী আদালতের বিচারক রত্না সাহা এই আদেশ দেন। নড়াইল আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) অ্যাডভোকেট আজিজুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলা চালায় আওয়ামী লীগ (কার্যক্রম নিষিদ্ধ), যুবলীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
আরো পড়ুন:
সমন্বয়ক পরিচয়ে তদবির-হুমকি: যুবককে ২ মাসের কারাদণ্ড
চট্টগ্রাম কারাগার পরিদর্শন: ছবি তোলা নিয়ে যা বললেন ধর্ম উপদেষ্টা
এ সময় ছাত্র-জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে তারা গুলি ছুঁড়ে ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। ১৩ শিক্ষার্থীকে রামদা, বাঁশের লাঠি, লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করা হয়।
এ ঘটনায় ওই বছরের ৯ ডিসেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নড়াইল জেলা শাখার মুখ্য সংগঠক কাজি ইয়াজুর রহমান বাবু বাদী হয়ে ২৯৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো সাড়ে ৩০০ থেকে ৩৫০ জনকে আসামি করে লোহাগড়া থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় ১৯ নম্বর আসামি করা হয় আশরাফুল আলমকে।
ঢাকা/শরিফুল/রাজীব