আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সরকারকে শক্ত অবস্থান নেওয়ার পরামর্শ
Published: 22nd, July 2025 GMT
দেশের আইন–শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারকে আরও শক্ত অবস্থান নিতে বলেছেন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে তাঁরা এই অভিমত জানিয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার রাত ৯টায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় চারটি রাজনৈতিক দল বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপির) শীর্ষস্থানীয় নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠক শেষে রাত ১১টার পর সাংবাদিকদের কাছে বৈঠকে আলোচনার বিষয়গুলো তুলে ধরেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য দৃশ্যমান করার কথা বলেছেন বলে জানান আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোকে শুধু ঐক্যের কথা বলেননি, উনি বলেছেন আপনাদের মধ্যে ঐক্য আছে এটা আরেকটু দৃশ্যমান হলে ভালো হয়। আপনারা ফ্যাসিবাদবিরোধী প্রশ্ন হোক, গঠনমূলক কোনো কর্মসূচির প্রসঙ্গে হোক। যদি একসাথে থাকেন এটা যদি মানুষ দেখে মানুষের মধ্যে স্বস্তির ভাব আসবে, অনেক বেশি মানুষ খুশি হবে এটা দেখে।’
রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে দুটি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে বলে জানান অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ‘প্রথমটা হচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষার ক্ষেত্রে আমরা যেন আরও শক্ত অবস্থান নিই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আমাদের কিছুটা ঘাটতি আছে সে কথা বলেছেন। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচন প্রক্রিয়ার দিকে আমাদের সুষ্ঠুভাবে অগ্রসর হওয়া উচিত।’
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য আছে বলে নেতারা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছেন বলে জানান আইন উপদেষ্টা। এর উদাহরণ হিসেবে তাঁরা যখনই প্রধান উপদেষ্টা ডাক দেন, তখনই তাঁরা এসে হাজির হন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে নিয়মিত গিয়ে কথা বলছেন সে সব বিষয় উল্লেখ করেছেন তাঁরা।
তাছাড়া ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য প্রশ্নে দলগুলোর মধ্যে কোনো হতাশা নেই বলেও উল্লেখ করেছেন রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা। উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছে, ফ্যাসিবাদ প্রশ্নে তাদের মধ্যে কোনো রকম মতভিন্নতা, মতবিরোধ নেই। তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলেছেন, রাজনীতির মাঠে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে মাঝে মাঝে কথা বলতে পারি। এর মানে এটা না যে, তারা আমাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। তারা আমাদের রাজনৈতিক সহযোগী, রাজনৈতিক মাঠে মাঝে মধ্যে এ রকম কিছু কথা বলা হবে। এর থেকে কোনোভাবে ধারণা করা উচিত না, ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যে ফাটল ধরেছে।’
বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ, এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্য সচিব আখতার হোসেন এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন ও যুগ্ম-মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুনবিএনপি–জামায়াতসহ চার দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা২ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বল ছ ন আম দ র ইসল ম ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
অজ্ঞাতনামা লাশ আর কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে, শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় জনমনে সন্দেহ: এমএসএফ
চলতি অক্টোবর মাসে দেশে অজ্ঞাতনামা লাশ এবং কারা হেফাজতে মৃত্যু সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় বেশ খানিকটা বেড়েছে। এ তথ্য তুলে ধরেছে মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। প্রতিষ্ঠানটির অক্টোবর মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এমএসএফ বলেছে, এসব ঘটনায় জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ দুই ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জনমনে সন্দেহ আছে।
এমএসএফ প্রতি মাসে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে। আজ শুক্রবার অক্টোবর মাসের প্রতিবেদন গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং নিজস্ব তথ্যানুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে এমএসএফ মানবাধিকার প্রতিবেদন তৈরি করে।
বেড়েছে অজ্ঞাতনামা লাশএমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্টোবর মাসে মোট ৬৬টি অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে। এটি অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়; বরং নাগরিক জীবনে নিরাপত্তাহীনতার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত মাসে (সেপ্টেম্বর) এর সংখ্যা ছিল ৫২। এসব অজ্ঞাতনামা লাশের বেশির ভাগই নদী বা ডোবায় ভাসমান, মহাসড়ক বা সড়কের পাশে, সেতুর নিচে, রেললাইনের পাশে, ফসলি জমিতে ও পরিত্যক্ত স্থানে পাওয়া যায়। অল্পসংখ্যক মৃতদেহ গলাকাটা, বস্তাবন্দী ও রক্তাক্ত বা শরীরে আঘাতের চিহ্নসংবলিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
এমএসএফ বলেছে, অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের ঘটনা বেড়েই চলেছে এবং তা জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় উদ্ধারে অপারগতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১টি শিশু, ১ কিশোর, ১১ জন নারী ও ৫৩ জন পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭ বছর বয়সী শিশু; ১৫ বছর বয়সী কিশোর; ২০ থেকে ৩০ বয়সী ১৫ জন পুরুষ ও ২ জন নারী; ৩১ থেকে ৪০ বয়সী ১৯ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী; ৪১ থেকে ৫০ বয়সী ১ নারী ও ৫ জন পুরুষ এবং ৫০ বছর বয়সের বেশি ১১ জন পুরুষ ও ১ নারী রয়েছেন। এর মধ্যে অজ্ঞাতনামা তিনজনের বয়স শনাক্ত করা যায়নি।
এমএসএফ বলেছে, শুধু অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না; বরং পরিচয় জানার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। পরিচয় উদ্ধার করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য।
কারা হেফাজতে মৃত্যু বাড়ছেইএমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে কারা হেফাজতে মোট ১৩ জন বন্দীর মৃত্যু হয়েছে। গত মাসে এ সংখ্যা ছিল মোট ৮। এ মাসে ছয়জন কয়েদি ও সাতজন হাজতির মৃত্যু হয়েছে।
কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চারজন কয়েদি ও দুজন হাজতি, গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে একজন কয়েদি ও শেরপুর জেলা কারাগারে একজন কয়েদি মারা যান। এ ছাড়া খুলনা জেলা কারাগারে, টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে, চট্টগ্রাম জেলা কারাগারে, সিরাজগঞ্জ কারাগারে ও মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে একজন করে হাজতি বন্দী মারা যান। সব বন্দীর মৃত্যু হয় কারাগারের বাইরে হাসপাতালে।
এমএসএফের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কারা হেফাজতে মৃত্যু এবং অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের সংখ্যা বৃদ্ধি মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতির চিত্র তুলে ধরে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই লাশ উদ্ধার করেই ক্ষান্ত হচ্ছে। কিন্তু এসব লাশ উদ্ধার করে তার পরিচয় শনাক্ত করা এবং সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত করে মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটন করাই শুধু নয়, এসব লাশ আত্মীয়-পরিজনের কাছে পৌঁছে দেওয়া এসব বাহিনীর কাজ। কিন্তু একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা করা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আর কোনো কাজ নেই।
সাইদুর রহমান বলেন, অজ্ঞাতনামা লাশের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং হেফাজতে মৃত্যু বৃদ্ধি জনমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করে।
গণপিটুনিতে হত্যা চলছেই, বেড়েছে রাজনৈতিক সহিংসতাঅক্টোবর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার শিকার হয়েছেন ৫৪৯ জন। এর মধ্যে ২ জন নিহত এবং ৫৪৭ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে চারজন গুলিবিদ্ধ এবং নিহত ব্যক্তিরা বিএনপির কর্মী–সমর্থক। সেপ্টেম্বর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৩৮টি ঘটনা ঘটেছিল।
সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার মধ্যে ১১টি ঘটনায় রাজনৈতিক বিরোধ ও সহিংসতাকে কেন্দ্র করে পার্টি অফিস, বসতবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নিকাণ্ড এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
অক্টোবর মাসে মোট গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে ৪৪টি। আগের মাসে এ ঘটনা ঘটেছিল ৪৩টি। এ মাসে গণপিটুনির শিকার হয়ে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ১২। আগের মাসে নিহত হয়েছিলেন ২৪ জন।