ফ্যাসিস্ট শক্তি উত্থানের শঙ্কায় মতবিনিময় করেছেন প্রধান উপদেষ্টা: মির্জা ফখরুল
Published: 23rd, July 2025 GMT
জুলাই-আগস্টের ফ্যাসিস্ট শক্তি উত্থানের শঙ্কায় গতকাল প্রধান উপদেষ্টা মতবিনিময় সভা করেছেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকার গঠন হলে সমস্যা কমে আসবে বলেও জানান তিনি।
বুধবার (২৩ জুলাই) ঢাকার গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি এসব কথা জানান।
তিনি বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলো ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল, তাদের সবার সঙ্গে আলোচনার জন্য তিনি ডেকেছেন। আমরা সেখানে আলোচনা করেছি। মাঝে মাঝে যখন ক্রাইসিস তৈরি হয় তখন অন্তর্বর্তী সরকার আমাদের ডাকেন। আমরা যাই, কারণ আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এই সরকারকে সহযোগিতা করবো। গণতন্ত্র উত্তরণের জন্য যা কিছু করা দরকার করবো। তবে আমরা মনে করি এই মতবিনিময়টা আরো ঘন ঘন হলে ভালো হতো।”
সরকারের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, “সরকারের সবচেয়ে বড় সমস্যা অভিজ্ঞতার অভাব। তাদের মধ্যে ইগো কাজ করে। তবে সরকারের দুর্বলতাকে বড় করে না দেখে তাদের সদিচ্ছাকে বড় করে দেখা উচিত। দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকার গঠন হলে সমস্যাগুলো কমে আসবে।”
এনসিপির ওপর হামলা কিংবা সচিবালয়ে প্রবেশ করে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা নির্বাচন বানচালের চক্রান্ত হতে পারে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
বিমান দুর্ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, “একটি বিমান দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনেক কচি প্রাণ গেছে। আমি নিজেও দেখতে গিয়েছিলাম। আমরা দুঃখপ্রকাশ করেছি, শোক জানিয়েছি। গতকালকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মাইলস্টোন স্কুলে দুই উপদেষ্টাকে অবরুদ্ধ করা হয়েছিল। পরীক্ষা সংক্রান্ত জটিলতায় সচিবালয়ে ছাত্ররা ঢুকে পড়ে যেটা সবার কাছে মনে হয়েছে এটা প্রশাসনিক জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।”
ঢাকা/কেএন/ইভা
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপদ ষ ট সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
পরাবাস্তবতার আবেদন কি ফুরিয়েছে
অবচেতনের মানচিত্র ধরে এক অন্তহীন অভিযাত্রা কবি–সাহিত্যিকেরা যুগ যুগ ধরে করে আসছেন। সাহিত্যের দীর্ঘ যাত্রাপথে এমন কিছু বাঁক আসে, যা তার গতিপথকে চিরতরে বদলে দেয়। পরাবাস্তবতা বা সুররিয়ালিজম ছিল এমনই এক যুগান্তকারী আন্দোলন, যা কেবল শিল্পের আঙ্গিক নয়; বরং শিল্পীর বিশ্ববীক্ষা এবং আত্মবীক্ষণকে সম্পূর্ণ নতুন এক দর্শন দান করেছিল। এটি ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ। এর মূল লক্ষ্য ছিল মানব মনের সেই গভীরে প্রবেশ করা, যেখানে যুক্তির আলো পৌঁছায় না; সেই অবচেতনের অন্ধকার মহাসাগর থেকে তুলে আনা বিস্মৃত স্বপ্ন, অবদমিত ইচ্ছা আর আদিম প্রবৃত্তির মণি–মুক্তা। পরাবাস্তবতা তাই কেবল একটি শিল্পরীতি নয়, এটি চেতনার শৃঙ্খলমুক্তির এক দুঃসাহসী ইশতেহার।
১৯২৪ সালে ফরাসি কবি ও লেখক আঁদ্রে ব্রেটন তাঁর ‘পরাবাস্তবতার প্রথম ইশতেহার’ (ম্যানিফেস্টো অব সুররিয়ালিজম) প্রকাশের মাধ্যমে এই আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। ব্রেটনের সংজ্ঞায়, পরাবাস্তবতা হলো, ‘বিশুদ্ধ মানসিক স্বয়ংক্রিয়তা, যার মাধ্যমে মুখ বা লেখনী দিয়ে অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে চিন্তার আসল কার্যকারিতাকে প্রকাশ করার ইচ্ছা পোষণ করা হয়। এটি যুক্তির সমস্ত নিয়ন্ত্রণ থেকে এবং সকল প্রকার নান্দনিক ও নৈতিক উদ্দেশ্য থেকে বিযুক্ত চিন্তার এক শ্রুতলিখন।’
এই দর্শনের প্রধান পাথেয় ছিল ভিয়েনার মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের যুগান্তকারী মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব। ফ্রয়েড দেখিয়েছিলেন যে মানুষের সচেতন মনের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক বিশাল অবচেতন জগৎ, যা তার আচরণ, স্বপ্ন ও ব্যক্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। পরাবাস্তববাদীরা ফ্রয়েডের এই তত্ত্বকে লুফে নিয়েছিলেন। তাঁদের কাছে শিল্পসৃষ্টির উদ্দেশ্যই ছিল যুক্তির সেন্সরশিপকে ফাঁকি দিয়ে অবচেতন মনের এই লুকানো জগৎকে উন্মোচিত করা। তাঁরা চেয়েছিলেন, স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে একীভূত করে এক ‘পরম বাস্তবতা’ বা ‘সুররিয়ালিটি’ তৈরি করতে।
পরাবাস্তবতা ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ।পরাবাস্তবতার পদযাত্রা প্যারিসের শৈল্পিক পরিমণ্ডল থেকে শুরু হলেও এর ঢেউ খুব দ্রুতই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আঁদ্রে ব্রেটন ছিলেন এই আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা, কিন্তু তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় সমবেত হয়েছিলেন বহু প্রতিভাবান স্রষ্টা, যাঁরা নিজ নিজ ভাষায় ও সংস্কৃতিতে পরাবাস্তবতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।
আঁদ্রে ব্রেটন (জন্ম: ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৬—মৃত্যু: ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬)