সরকারের এক বছর হতে চলেছে, আজকে পাওনার হিসাবটা খুবই জরুরি: হোসেন জিল্লুর রহমান
Published: 23rd, July 2025 GMT
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর হতে চলেছে। গত এক বছরে সরকারের কার্যক্রম নিয়ে শক্ত কথা বলার সময় এসেছে বলে মনে করছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান।
জিল্লুর রহমান বলেছেন, ‘মিষ্টি কথা, ভালো কথা, ভালো উদ্যোগ ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক কিছু হয়েছে। আমরাও অনেক ধরনের আশাপ্রদ, অনেক কিছু দেখেছি। আজকের ফ্রেমিং আমার দৃষ্টিতে হতে হবে, পাওনার হিসাব এবং উত্তরণের পথরেখা। আজকে পাওনার হিসাবটা খুবই জরুরি। বিচার, সংস্কার, নির্বাচন—এই বিষয়গুলোতে এক বছরে কী কী হলো, সেই পাওনার হিসাবটা আজকে মূল কথা হতে হবে।’
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে হোসেন জিল্লুর রহমান এসব কথা বলেন। ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান: এক বছরের অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এই গোলটেবিলের আয়োজক প্রথম আলো। গোলটেবিল বৈঠকের শুরুতে রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে হতাহতের ঘটনায় শোক জানানো হয়। সবাই এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করেন।
গোলটেবিল বৈঠকে হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, করণীয়র কথা যদি বলি, মানুষকে গণনার বাইরে ফেলে দিয়েছে, মানুষ যে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে; এখন দর্শক, এত বিশাল একটা পরিবর্তনে অংশগ্রহণকারী নয়—মূল কাজ হতে হবে এই মানুষকে কীভাবে দর্শক থেকে সক্রিয় অংশগ্রহণকারীর পর্যায়ে আবার নিয়ে আসা যায়। সেটার একটা মাধ্যম অবশ্যই নির্বাচন। কিন্তু এর পাশাপাশি আরও অনেকভাবে চিন্তা করতে হবে। এ ছাড়া সক্ষমতায় যে ধস নেমেছে, এ ব্যাপারে আমাদের একটা চিৎকার দিতে হবে। প্রয়োজন হলে এটার বিদায় দিতে হবে। যাঁরা দায়িত্বে আছেন, তাঁদের এটা শুনতে হবে। তাঁদের শুনতে হবে, সক্ষমতার এই ধস পাল্টাতে হবে। মানুষকে গণনার বাইরে নিয়ে যাওয়া যাবে না। কাগুজে প্রক্রিয়ায় আমাদের মেধা ও মনোযোগ সবকিছু আটকে রেখে জাতীয় ঐক্যকে পশ্চাতে ফেলে দেওয়া যাবে না।
আরও পড়ুনঅন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরেও আরেকটা সরকার আছে: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য২ ঘণ্টা আগেঅন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার চার দলের শীর্ষ নেতাদের হওয়ার বৈঠকের প্রতি ইঙ্গিত করে হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘এখানে খুবই পরিষ্কার, জনগণ আর কোনো বিষয় নয়। দেশ কোন দিকে যাবে, কীভাবে পরিচালনা হবে, জনগণ কোনো বিষয় নয়। জনগণের নামেই সবকিছু হচ্ছে, তাদের কথা বলেই সবকিছু হচ্ছে, কিন্তু জনগণকে আমরা গণনার বাইরে ফেলে দিয়েছি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, আমি দেখতে পাচ্ছি একধরনের বাংকার মেন্টালিটি আস্তে আস্তে প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে। বাংকার মেন্টালিটি হয় তখন, যখন সবকিছু একটা নির্দিষ্ট লেন্স দিয়ে শুধু দেখা হয়, মানুষকে সহযোগী হিসেবে না দেখে শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শক্তিগুলোকে নিয়েই চেষ্টা করা হয়। এখানে একই সঙ্গে এটাও বলা দরকার, পতিত সরকারের অনুশোচনাহীন সমর্থকগোষ্ঠীর দেশকে অস্থিতিশীল করার নানামুখী প্রচেষ্টা একটা বিরাট বিপদ হিসেবে সমাজের মধ্যে আছে বটে। কিন্তু বাংকার মেন্টালিটি দিয়ে এটা কোনো দিনও সমাধান করা যাবে না।’
কাগুজে ঐকমত্যের প্রক্রিয়া সরাসরি জাতীয় ঐক্যের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেন হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্য ও কাগুজে ঐকমত্য প্রক্রিয়া মুখোমুখি অবস্থানে আছে। জাতীয় ঐক্য আসলে পেছনে পড়ে গেছে। জাতীয় ঐক্যের প্রতি মনোযোগ নেই। এই কাগুজে ঐকমত্যের প্রক্রিয়াটা জুলাই-আগস্টের জাতীয় ঐক্যের শক্তিটাকে আমরা পেছনে ফেলে দিয়েছি। কেতাবি যোগ্যতার একটা প্রচণ্ড সমাহার হয়েছে এবং একই সময়ে সক্ষমতার বিশাল ধস নেমেছে। কেতাবি যোগ্যতার সমাহার, একটা নির্দিষ্ট ধরনের আচরণ আর প্রকৃত সক্ষমতার ধস—এখানে আমরা একটা বড় ধরনের বৈপরীত্য দেখতে পাচ্ছি। মন্ত্রণালয়, নীতিনির্ধারণ, নেগোসিয়েশন—প্রতিটা ক্ষেত্রেই আমরা সক্ষমতার ধস দেখছি। কিন্তু ওই কেতাবি যোগ্যতার খুবই সরব ও খুবই প্রবল উপস্থিতি আছে। সেই অর্থে জনগণ গণনার বাইরে চলে গেছে। নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছে।
আরও পড়ুনকী বললে কী ট্যাগিং খাব, এসব হওয়ায় কথা ছিল না : মাহা মির্জা৫২ মিনিট আগে`প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি পূর্ণোদ্যমে ফিরেছে'
গোলটেবিল বৈঠকে অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান বিভিন্ন ক্ষেত্রে চলমান নানা সংকটের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, শিক্ষা, আইনশৃঙ্খলা ও বেকারত্ব—এখানে যদি পাওনার হিসাব দেখি, এটা একটা ভয়াবহ অবস্থা। গত পরশুদিন তো ট্র্যাজেডি দেখলাম। কিন্তু সাধারণ সময়ে শিক্ষা ঘিরে যে আকাঙ্ক্ষাগুলো, সেখানে একটা ভয়াবহ বাস্তবতা আছে। সেদিন বগুড়ায় গেলাম, একটা মতবিনিময়ে একই চিত্র উঠে এল। আইনশৃঙ্খলার ক্ষেত্রে মবের কথা বলা হচ্ছে বটে, কিন্তু বগুড়ায় গিয়ে অদ্ভুতভাবে শুনলাম যে, সবাই নাকি ছুরি মারছে সবাইকে! ছুরি মারাটা স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে গেছে।
দৈনন্দিন বাস্তবতায় আইনশৃঙ্খলার একটা ভয়াবহ অবনতি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, পুলিশ নিষ্ক্রিয়। এমন নয় যে কাঠামো নেই। মানুষের মধ্যে অস্থিরতা প্রচণ্ড। নারী নির্যাতনের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, নির্যাতনকারীর অধিকাংশ হচ্ছে তরুণ। আইনশৃঙ্খলার একটা ভয়াবহ বাস্তবতা আছে। বেকারত্ব বা কর্মসংস্থানের একটা ভয়াবহ অবস্থা। ঢাকা শহরে যে প্রচণ্ড বিস্তার ঘটেছে ইজি বাইক ইত্যাদির, এরা কিন্তু নতুন পেশায় এসেছে।
হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত হয়তো একটা ধারণা ছিল যে, প্রাতিষ্ঠানিক ভিন্ন পথে আমরা এগোবার চেষ্টা করব। চেষ্টাও হয়তো ছিল। কিন্তু পরে নরমাল স্টেট ডাইনামিকস বুঝে গেছে যে বড় কিছু হবে না। ডিসেম্বরের পর থেকে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি পূর্ণোদ্যমে আবার নিজেকে এসার্ট করেছে। হাসিনার পলায়ন এবং ওই সরকারের পতন, এটাতে আমাদের অবশ্যই একটা আকাঙ্ক্ষার বিস্ফোরণ ঘটেছে। সেটা একটা বাস্তবতা আছে বটে। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি প্রচণ্ডভাবে ফিরে এসেছে। আমলা কর্তৃত্ব পূর্ণাঙ্গভাবে জেঁকে বসে আছে।
আরও পড়ুনবৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার উল্টো যাত্রা করেছে সরকার: আনু মুহাম্মদ ২ ঘণ্টা আগেযে মানুষ পরিবর্তন এনেছিল, যাদের অংশগ্রহণে পরিবর্তন এসেছিল, তারা নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছে বলে উল্লেখ করেন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এই গুটিয়ে নেওয়াটা একটা সিগনাল। এই গুটিয়ে নেওয়াটা সর্বকালের জন্য নয়। তারা দেখেছে, তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা ছিল, তারা দেখছে যে, প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ ও কথার ফুলঝুরির মারপ্যাঁচে আসলে চলছে অন্য ব্যাপার।
ন্যায়বিচার প্রসঙ্গে হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্যমাত্রায় যে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ, ইনসাফ শব্দটা এত জনপ্রিয় হলো, কিন্তু ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করার পথ হিসেবে আমরা প্রতিশোধকেই মাধ্যম হিসেবে নিলাম। লক্ষ্য ও উপায়ের মধ্যে এই যে অমিল.
প্রথম আলোর এই গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেন লেখক ও চিন্তক ফরহাদ মজহার, গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন, লেখক ও গবেষক আলতাফ পারভেজ, অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, নির্মাতা কামার আহমাদ সাইমন, লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান, লেখক ও গবেষক মাহা মীর্জা, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের গবেষণা বিশেষজ্ঞ সহুল আহমদ প্রমুখ।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হ স ন জ ল ল র রহম ন ব প রক র য় সরক র র ব স তবত প রচণ ড এক বছর আম দ র সবক ছ র একট
এছাড়াও পড়ুন:
অজ্ঞাতনামা লাশ আর কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে, শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় জনমনে সন্দেহ: এমএসএফ
চলতি অক্টোবর মাসে দেশে অজ্ঞাতনামা লাশ এবং কারা হেফাজতে মৃত্যু সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় বেশ খানিকটা বেড়েছে। এ তথ্য তুলে ধরেছে মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। প্রতিষ্ঠানটির অক্টোবর মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এমএসএফ বলেছে, এসব ঘটনায় জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ দুই ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জনমনে সন্দেহ আছে।
এমএসএফ প্রতি মাসে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে। আজ শুক্রবার অক্টোবর মাসের প্রতিবেদন গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং নিজস্ব তথ্যানুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে এমএসএফ মানবাধিকার প্রতিবেদন তৈরি করে।
বেড়েছে অজ্ঞাতনামা লাশএমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্টোবর মাসে মোট ৬৬টি অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে। এটি অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়; বরং নাগরিক জীবনে নিরাপত্তাহীনতার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত মাসে (সেপ্টেম্বর) এর সংখ্যা ছিল ৫২। এসব অজ্ঞাতনামা লাশের বেশির ভাগই নদী বা ডোবায় ভাসমান, মহাসড়ক বা সড়কের পাশে, সেতুর নিচে, রেললাইনের পাশে, ফসলি জমিতে ও পরিত্যক্ত স্থানে পাওয়া যায়। অল্পসংখ্যক মৃতদেহ গলাকাটা, বস্তাবন্দী ও রক্তাক্ত বা শরীরে আঘাতের চিহ্নসংবলিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
এমএসএফ বলেছে, অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের ঘটনা বেড়েই চলেছে এবং তা জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় উদ্ধারে অপারগতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১টি শিশু, ১ কিশোর, ১১ জন নারী ও ৫৩ জন পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭ বছর বয়সী শিশু; ১৫ বছর বয়সী কিশোর; ২০ থেকে ৩০ বয়সী ১৫ জন পুরুষ ও ২ জন নারী; ৩১ থেকে ৪০ বয়সী ১৯ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী; ৪১ থেকে ৫০ বয়সী ১ নারী ও ৫ জন পুরুষ এবং ৫০ বছর বয়সের বেশি ১১ জন পুরুষ ও ১ নারী রয়েছেন। এর মধ্যে অজ্ঞাতনামা তিনজনের বয়স শনাক্ত করা যায়নি।
এমএসএফ বলেছে, শুধু অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না; বরং পরিচয় জানার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। পরিচয় উদ্ধার করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য।
কারা হেফাজতে মৃত্যু বাড়ছেইএমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে কারা হেফাজতে মোট ১৩ জন বন্দীর মৃত্যু হয়েছে। গত মাসে এ সংখ্যা ছিল মোট ৮। এ মাসে ছয়জন কয়েদি ও সাতজন হাজতির মৃত্যু হয়েছে।
কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চারজন কয়েদি ও দুজন হাজতি, গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে একজন কয়েদি ও শেরপুর জেলা কারাগারে একজন কয়েদি মারা যান। এ ছাড়া খুলনা জেলা কারাগারে, টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে, চট্টগ্রাম জেলা কারাগারে, সিরাজগঞ্জ কারাগারে ও মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে একজন করে হাজতি বন্দী মারা যান। সব বন্দীর মৃত্যু হয় কারাগারের বাইরে হাসপাতালে।
এমএসএফের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কারা হেফাজতে মৃত্যু এবং অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের সংখ্যা বৃদ্ধি মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতির চিত্র তুলে ধরে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই লাশ উদ্ধার করেই ক্ষান্ত হচ্ছে। কিন্তু এসব লাশ উদ্ধার করে তার পরিচয় শনাক্ত করা এবং সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত করে মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটন করাই শুধু নয়, এসব লাশ আত্মীয়-পরিজনের কাছে পৌঁছে দেওয়া এসব বাহিনীর কাজ। কিন্তু একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা করা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আর কোনো কাজ নেই।
সাইদুর রহমান বলেন, অজ্ঞাতনামা লাশের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং হেফাজতে মৃত্যু বৃদ্ধি জনমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করে।
গণপিটুনিতে হত্যা চলছেই, বেড়েছে রাজনৈতিক সহিংসতাঅক্টোবর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার শিকার হয়েছেন ৫৪৯ জন। এর মধ্যে ২ জন নিহত এবং ৫৪৭ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে চারজন গুলিবিদ্ধ এবং নিহত ব্যক্তিরা বিএনপির কর্মী–সমর্থক। সেপ্টেম্বর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৩৮টি ঘটনা ঘটেছিল।
সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার মধ্যে ১১টি ঘটনায় রাজনৈতিক বিরোধ ও সহিংসতাকে কেন্দ্র করে পার্টি অফিস, বসতবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নিকাণ্ড এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
অক্টোবর মাসে মোট গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে ৪৪টি। আগের মাসে এ ঘটনা ঘটেছিল ৪৩টি। এ মাসে গণপিটুনির শিকার হয়ে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ১২। আগের মাসে নিহত হয়েছিলেন ২৪ জন।