এসিসি সভা: ঢাকায় পাকিস্তান প্রধান, অতিথি তালিকায় নেই ভারত!
Published: 23rd, July 2025 GMT
তাহলে কী এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) বার্ষিক সাধারণ সভা বয়কটের যে সিদ্ধান্ত ভারত জানিয়েছে তা মেনে নিয়েছে সংস্থাটি?
ঢাকায় এসিসির এজিএম হলে ভারত বয়কট করবে তা আগেই জানিয়ে দিয়েছিল। এসিসি নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড়। তারা ঢাকাতেই আগামীকাল করবে এসিসি সভা। আজ অনুষ্ঠিত হবে প্রধান নির্বাহীদের বৈঠক। সেই বৈঠকে নেই ভারতের ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিসিসিআইয়ের কোনো প্রতিনিধি। এবং আয়োজক বাংলাদেশের কাছে যে অতিথি তালিকা পাঠিয়েছে এসিসি তাতে নেই ভারতের নামও। তাতে স্পষ্ট হচ্ছে, ভারতকে উপেক্ষা করেই ঢাকায় আগামীকাল হতে যাচ্ছে এসিসির সভা।
প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ এই সভা আয়োজন করতে যাচ্ছে। এসিসি সভাপতি ও পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান মহসিন নাকভী আজ দুপুরে বাংলাদেশে পা রেখেছেন। তাকে ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করে নেন বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী।
আরো পড়ুন:
সাকিবের দরজা সবসময় খোলা: বিসিবি পরিচালক
কয়েকবার শর্ত বদল, তবুও টিভি স্বত্ব বিক্রি করতে পারছে না বিসিবি
বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম একাধিকবার জানিয়েছেন, তারা কেবল এসিসি সভার হোস্ট এবং ‘লজিস্টিক সাপোর্ট দেওয়ার কাজ করছে। সভার প্রাক্কালে আরো একবার এই কথা মনে করিয়ে দিলেন তিনি, “এসিসির সভার ব্যাপারটি পরিষ্কার করি। এশিয়ার ৫টি পূর্ণ সদস্য ও ২৫টি সহযোগী সদস্য নিয়ে তারা কাজ করে। এসিসির কাছ থেকে আমাদের কাছে প্রস্তাব এসেছিল যে আমরা এই এজিএম আয়োজন করতে চাই কি না। আমরা রাজি হয়েছি। এটি এসিসিরই প্রোগ্রাম। আমরা তাদেরকে লজিস্টিকাল সাপোর্ট করছি। এটাই একমাত্র ব্যাপার, যা আমরা করছি।”
কে আসছে, কে আসছে না পুরো বিষয়টি তদারকি করছে এসিসির কর্মকর্তারা। বিসিবি যা করছে তা-ও পরিস্কার করেছেন সভাপতি, “আমরা এসিসির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। তারা জানাচ্ছে কে আসছেন, কে আসছেন না, তাদের কখন এয়ারপোর্ট থেকে পিক করতে হবে, হোটেল বুকিং, অনুষ্ঠানস্থলে আমাদের কী কী সাপোর্ট দিতে হবে, এসব। এর বাইরে আমাদের কোনো কাজ নেই।”
ভারত তাদের কোনো প্রতিনিধি পাঠাচ্ছে না। একই সঙ্গে শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড এই সভায় কোনো প্রতিনিধি পাঠানো নিশ্চিত করেনি। তাতে এসিসির পূর্ণ সদস্য পাঁচ দেশগুলোর বৈঠকে যদি তিনটিই অনুপস্থিত থাকে তাহলে সভার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। পাশাপাশি সামনে এশিয়া কাপ নিয়েও কী সিদ্ধান্ত আসবে সেটাও দেখার।
ভারত এবারের এশিয়া কাপের আয়োজক। তারা সংযুক্ত আরব আমিরাতে এই আয়োজন করতে উৎগ্রীব। তবে এসিসি সভা বয়কটের প্রতিক্রিয়াতে ভারত নতুন করে কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটাও দেখার।
এশিয়ার তিন দেশ, ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কের টানাপোড়ন এবং পাকিস্তান-বাংলাদেশ সুসম্পর্ক গড়ে উঠায় ক্রিকেট আবহ পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে অনেকটাই। তাতে বাংলাদেশকে নিকট ভবিষ্যতে কিংবা অদূর ভবিষ্যতে কোনো সমস্যায় পড়তে হবে কিনা তা নিয়েও চিন্তা বাড়ছে।
যদিও আমিনুল ইসলামের বিশ্বাস এসব কিছুই হবে না, “আমার মনে হয় না (সমস্যা হবে)। ক্রিকেট সবার ওপরে। এই ধরনের সমস্যা হবে না বলেই মনে হয়। আমি আবারও বলছি, আমরা কেবলই আয়োজক। আগে কখনও আমরা এজিএম হোস্ট করিনি। বোর্ডের সবাই মিলে, দেশের সবাই মিলে আমরা চেষ্টা করব যেন ভালো একটা এজিএম হয়।”
পাকিস্তানের সঙ্গে আলাদা করে বৈঠক করার কথাও জানালেন আমিনুল, “পাকিস্তান বোর্ডের প্রেসিডেন্ট আসছেন, তিনি এখন এসিসির প্রধান। এটা তার প্রোগ্রাম। এর ফাঁকে ফাঁকে আমরা আলোচনা করব যদি দ্বিপাক্ষিক সিরিজ বাড়ানো যায়, ক্রিকেট নিয়ে আরও যদি আলোচনা বাড়ানো যায়, সেই চেষ্টা করব।”
এদিকে বিসিবির ভেতরের খবর, বোর্ডের কিছু পরিচালক এসিসির এই সভা আয়োজন করতে আমিনুলকে বিরত থাকতে বলেছিলেন। ভারতকে অসন্তুষ্ট করতে চাইছিলেন না তারা। কিন্তু সভাপতি আমিনুল জোর দিয়ে তাদেরকে জানান, তিনি আগেই এসিসি চেয়ারম্যানকে কথা দিয়েছেন ঢাকাতেই সভা হবে। সেখান থেকে সরে আসতে পারবেন না।’’
এদিকে এসিসি প্রধান ঢাকায় পা রেখে এসিসি সভা স্থগিত করার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন।
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ক্রিকেট বোর্ডকে ছাড়া যেকোনো আয়োজন করা সিদ্ধান্তই কঠিন। এসিসি এবং বিসিবি সেই কাজটাই করতে যাচ্ছে। সামনে এশিয়ান ক্রিকেটে সেই প্রভাব কতটুকু পড়ে দেখার।
ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম ন ল এস স র
এছাড়াও পড়ুন:
আফ্রিদি-জয় শাহর ভাইরাল ভিডিওটি এশিয়া কাপের নয়
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ভাসছে। স্টেডিয়ামে বিশেষ অতিথিদের গ্যালারিতে পাশাপাশি বসে বর্তমান আইসিসি চেয়ারম্যান জয় শাহ এবং পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক ও অলরাউন্ডার শহীদ আফ্রিদি। বেশ হাসিমুখে কথা বলছেন দুজন। জয় শাহর পাশেই বসে পিসিবি চেয়ারম্যান মহসিন নাকভি। মাঝে একটি আসন দূরে বসে বিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সংসদ সদস্য অনুরাগ ঠাকুর। তিনিও জয় শাহ ও আফ্রিদির সঙ্গে বেশ হাসিমুখে কথা বলছিলেন।
আরও পড়ুনবাংলাদেশ এশিয়া কাপে কয়েকবারের ‘চ্যাম্পিয়ন’, ভেবেছিলেন আফগানিস্তান কোচ১০ ঘণ্টা আগেদুবাইয়ে গত পরশু ভারত–পাকিস্তান ম্যাচ ঘিরে এ ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। অনেকেই দাবি করেন, এই ভিডিও চলমান এশিয়া কাপে ভারত–পাকিস্তান ম্যাচের। সমালোচনা করে অনেকেই বলেন, ভারতে যেখানে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি বয়কটের দাবি উঠেছে, সেখানে তাঁদের মধ্যে এত হৃদ্যতা আসে কোত্থেকে? একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী ভিডিওটি শেয়ার করে ক্যাপশনে লেখেন, ‘পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর জনতার ক্ষোভের মধ্যেই এশিয়া কাপে ভারত–পাকিস্তান ম্যাচে জয় শাহ ও অনুরাগ ঠাকুরকে শহীদ আফ্রিদির সঙ্গে দেখা যাচ্ছে। গোটা দেশ যখন ম্যাচটি বয়কটের ডাক দিয়েছে, তখন বিজেপির নেতা অনুরাগ ঠাকুর ও জয় শাহ শহীদ আফ্রিদি ও মহসিন নাকভির সঙ্গে মজা করছেন ও সময়টা উপভোগ করছেন।’
ভিডিওটির সত্যতা পরীক্ষা করে ভারতের সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়া টুডে’ জানিয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এই ভিডিও গত পরশু ভারত–পাকিস্তান ম্যাচের নয়। এটি গত ২৩ ফেব্রুয়ারির ভিডিও। তখন দুবাইয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ভারতের মুখোমুখি হয়েছিল পাকিস্তান। সেই ম্যাচের এই ভিডিও নতুন করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর অনেকেই এটাকে গত পরশুর ম্যাচের ভেবে ভুল করেছেন। ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গত ২২ এপ্রিল। অর্থাৎ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এই ভিডিও পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা হওয়ার আগে।
আরও পড়ুনকেন পাকিস্তানের এমন হার—ব্যাখ্যা দিলেন আকরাম, আফ্রিদি ও গাভাস্কার১০ ঘণ্টা আগেভিডিওটি আরেকটু ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় মাঠের হোর্ডিংয়ে ‘চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ২০২৫’ লেখা। পাশাপাশি গত ২৪ ফেব্রুয়ারি এক ‘এক্স’ ব্যবহারকারী একই ভিডিও শেয়ার দিয়ে ক্যাপশনে লেখেন, ‘দুবাই স্টেডিয়ামে শহীদ আফ্রিদি ও জয় শাহ একসঙ্গে ভারত–পাকিস্তান ম্যাচ দেখছেন।’ ক্যাপশনের নিচে হ্যাশট্যাগ দিয়ে ভারত–পাকিস্তান ও চ্যাম্পিয়নস ট্রফি লেখা। গত ফেব্রুয়ারি–মার্চে অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সূচিতেও দেখা যাচ্ছে, দুবাইয়ে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি গ্রুপ পর্বের ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত ও পাকিস্তান। ম্যাচে ৬ উইকেটে জেতে ভারত।
এশিয়া কাপে গত রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুবাইয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৭ উইকেটের সহজ জয় পায় ভারত। পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর পাকিস্তানের বিপক্ষে এই ম্যাচ বয়কটের দাবি তুলেছিলেন ভারতের সাবেক ক্রিকেটাররাই। দেশটির সাবেক অফ স্পিনার হরভজন সিং ও সাবেক ক্রিকেটার কেদার যাদবরা এই ম্যাচ বয়কটের আহ্বান জানান। কিছুদিন আগে শেষ হওয়া ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ অব লেজেন্ডস (ডব্লুসিএল) টুর্নামেন্টে গ্রুপ পর্ব ও সেমিফাইনালে পাকিস্তানের মুখোমুখি হতে অস্বীকৃতি জানায় ভারত। এর পর থেকে এশিয়া কাপের ম্যাচটি বয়কটের ক্যাম্পেইন আরও বেশি করে শুরু হয় ভারতে। এমনকি ম্যাচটি বাতিলে পাবলিক ইন্টারেস্ট লিটিগেশন (পিআইএল) আবেদন করা হয়েছিল ভারতের সুপ্রিম কোর্টে। যদিও জরুরি ভিত্তিতে তা শুনানির জন্য রাজি হননি আদালত।