এক লাখ ৪০ হাজার টন সার আমদানির প্রস্তাব পাস
Published: 23rd, July 2025 GMT
দেশের সারের চাহিদা মেটাতে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ থেকে এক লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের সার আমদানি করবে সরকার। এতে মোট ব্যয় হবে ৮৯২ কোটি ৪৩ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। চারটি পৃথক প্রস্তাবের আওতায় এই সার আমদানি করা হবে।
বুধবার (২৩ জুলাই) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড.
সূত্র জানায়, মরক্কো এবং বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায় প্রথম লটের ৪০,০০০ মেট্রিক টন ডিএপি সার আমদানি করা হবে। ফসল উৎপাদনে ডাই-এ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) সার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ।বাংলাদেশে ডিএপি সারের ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের নিরুপিত চাহিদা প্রায় ১৪.৮৫ লাখ মেট্রিক টন। বিএডিসিতে নিরাপত্তা মজুত হিসেবে প্রতি বছর ৩.০০ লাখ মেট্রিক টন ডিএপি সার মজুত রাখতে হয়। উক্ত নিরাপত্তা মজুতসহ ডিএপি সারের ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের নিরুপিত মোট চাহিদা ১৭.৮৫ লাখ মেট্রিক টন। চলতি অর্থবছরের শুরুতে বিএডিসিতে ডিএপি সারের প্রারম্ভিক মজুত ছিল ৩.০৪ লাখ মেট্রিক টন। বিসিআইসি বছরে প্রায় ১.০০ লাখ মেট্রিক টন ডিএপি সার উৎপাদন করে থাকে। বেসরকারি পর্যায়ে ৫.০০ লাখ মেট্রিক টন ডিএপি সার আমদানিক্রমে সরবরাহ কার্যক্রম চলমান। অবশিষ্ট ৮.৮১ লাখ মেট্রিক টন ডিএপি সার বিএডিসির মাধ্যমে আমদানিক্রমে সরবরাহ করা হচ্ছে।
ফসল উৎপাদনে মিউরেট-অব-পটাশ (এমওপি) সার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। বাংলাদেশে এমওপি সারের ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের নিরুপিত চাহিদা ৯.৫০ লাখ মেট্রিক টন। বিএডিসিতে নিরাপত্তা মজুত হিসেবে প্রতি বছর ২.০০ লাখ মেট্রিক টন এমওপি সার মজুত রাখতে হয়। উক্ত নিরাপত্তা মজুতসহ এমওপি সারের ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে নিরুপিত মোট চাহিদা ১১.৫০ লাখ মেট্রিক টন। চলতি অর্থবছরের শুরুতে বিএডিসিতে এমওপি সারের প্রারম্ভিক মজুত ছিল ৩.০১ লাখ মেট্রিক টন। বেসরকারি পর্যায়ে ২.৫০ লাখ মেট্রিক টন এমওপি সার আমদানিক্রমে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। অবশিষ্ট ৫.৯৯ লাখ মেট্রিক টন এমওপি সার বিএডিসির মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে আমদানি কার্যক্রম চলমান।
রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে রাশিয়া ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায় ১২তম (ঐচ্ছিক ২য়) লটের ৩০,০০০ মেট্রিক টন এমওপি সার আমদানি করা হবে। ফসল উৎপাদনে মিউরেট-অব-পটাশ(এমওপি) সার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ।
বাংলাদেশে এমওপি সারের ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের নিরুপিত চাহিদা ৯.৫০ লাখ মেট্রিক টন। বিএডিসিতে নিরাপত্তা মজুত হিসেবে প্রতি বছর ২.০০ লাখ মেট্রিক টন এমওপি সার মজুত রাখতে হয়। উক্ত নিরাপত্তা মজুতসহ এমওপি সারের ২০২৫-২৬ অর্থবছরে নিরূপিত মোট চাহিদা ১১.৫০ লাখ মেঃটন। চলতি অর্থবছরের শুরুতে বিএডিসিতে এমওপি সারের প্রারম্ভিক মজুদ ছিল ৩.০১ লাখ মে.টন। বেসরকারি পর্যায়ে ২.৫০ লাখ মেঃটন এমওপি সার আমদানিক্রমে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। অবশিষ্ট ৫.৯৯ লাখ মেঃটন এমওপি সার বিএডিসির মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে আমদানি কার্যক্রম চলমান। দেশের কৃষি উৎপাদনে এমওপি সারের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে বিএডিসির মাধ্যমে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান জেএসসি ‘ফরেন ইকোনমিক করপোরেশন (প্রডিংটরক)’ থেকে রাষ্ট্রীয় চুক্তির আওতায় ২০১৩-২০১৪ অর্থ বছর থেকে এমওপি সার আমদানি করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, বিএডিসি কর্তৃক রাশিয়া হতে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে এমওপি সার আমদানিতে ব্যয় হবে ১২৯ কোটি ৫৯ লাখ ৮০ হাজার ৫০০ টাকা।
রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় মরক্কো এবং বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায় ১ম লটের ৩০,০০০ মেট্রিক টন টিএসপি সার আমদানি করা হবে।ফসল উৎপাদনে টিএসপি সার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। বাংলাদেশে টিএসপি সারের ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের নিরুপিত চাহিদা প্রায় ৭.৫০ লাখ মেট্রিক টন। বিএডিসিতে নিরাপত্তা মজুত হিসেবে প্রতি বছর ২.০০ লাখ মেট্রিক টন টিএসপি সার মজুত রাখতে হয়। উক্ত নিরাপত্তা মজুতসহ টিএসপি সারের ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের নিরুপিত মোট চাহিদা ৯.৫০ লাখ মেট্রিক টন। চলতি অর্থবছরের শুরুতে বিএডিসিতে টিএসপি সারের প্রারম্ভিক মজুত ছিল ২.২৫ লাখ মেট্রিক টন। বিসিআইসি বছরে প্রায় ১.০০ লাখ মেট্রিক টন টিএসপি সার উৎপাদন করে থাকে। অবশিষ্ট ৬.২৫ লাখ মেট্রিক টন টিএসপি সার বিএডিসি ও বেসরকারি পর্যায়ে আমদানিক্রমে সরবরাহ কার্যক্রম চলমান। চলতি বছরে বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি লক্ষমাত্রা ২.০০ লাখ মেট্রিক টন। চলতি অর্থবছরে বিএডিসি কর্তৃক আমদানিতব্য সারের পরিমাণ ৪.২৫ লাখ মেট্রিক টন, যা পর্যায়ক্রমে সংগ্রহ করা হচ্ছে। মরক্কো থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন টিএসপি সার আমদানি করতে ব্যয় হবে ২১১ কোটি ৮১ লাখ ৮১ হাজার ৫০০ টাকা।
ঢাকা/হাসনাত/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ৫০ ল খ ম ট র ক টন র ষ ট র য় পর য য় চ ক ত র আওত য় স র ব এড স স র আমদ ন আমদ ন ক র সরবর হ ক ব এড স ত অবশ ষ ট স র একট ব সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
শেষে এসে ‘বিপদে’ ওয়াসা
একের পর এক জটিলতায় পড়ছে চট্টগ্রাম ওয়াসার পয়োনিষ্কাশন প্রকল্পটি। অর্থ বরাদ্দের সংকট, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বকেয়া নিয়ে বিরোধ, কাজের ধীরগতি—সব মিলিয়ে প্রকল্পের নির্মাণকাজ বর্ধিত সময়ে শেষ হওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
প্রায় ৫ হাজার ২০৪ কোটি টাকার এই প্রকল্পে ২২টি ওয়ার্ডের ২০ লাখ মানুষের জন্য আধুনিক পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা রয়েছে। প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ৭০ শতাংশ। এই সময়ে এসে নানা জটিলতায় ‘বিপদে’ পড়েছে ওয়াসা।
‘চট্টগ্রাম মহানগরের পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পায়। শুরুতে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা। এরপর প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় বেড়েছে। মেয়াদ বেড়েছে তিন দফা। ২০২৩ সালের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি।
বর্তমানে অর্থ বরাদ্দের সংকট নিয়ে বিপাকে আছে ওয়াসা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সংস্থাটি চেয়েছিল ১ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা, সরকারের কাছ থেকে পেয়েছে ৭৪৪ কোটি। চলতি অর্থবছরে (২০২৫-২৬) দরকার ১ হাজার ৪০ কোটি টাকা, কিন্তু এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে ৬৭৬ কোটি টাকা। প্রকল্পে খরচ হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিল পরিশোধ করা হয়েছিল। এরপর ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত করা কাজের টাকা আমরা পাইনি। আগেও একই কারণে কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছিল, পরে আশ্বাস পেয়ে শুরু করেছিলাম। এবারও সেই পরিস্থিতি।প্রকল্প পরিচালক, এসএ ইঞ্জিনিয়ারিংসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। এই নির্বাচনী মৌসুমে প্রকল্প বরাদ্দে আরও অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। অর্থ না এলে প্রকল্পের কাজ স্থবির হয়ে পড়বে। ২০২৭ সালের শুরুতে এ প্রকল্পের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। কাজ শেষ না হলে এই পরিকল্পনা পিছিয়ে যাবে।
জানতে চাইলে ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, গত বছরই অর্থ বরাদ্দের অভাবে অনেক কাজ আটকে ছিল। এ বছরও চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ না পেলে সময়সীমা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে অর্থ বরাদ্দ নিয়ে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে।
চলতি অর্থবছরে বরাদ্দের বিষয়ে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, পয়োনিষ্কাশন প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
বর্তমানে অর্থ বরাদ্দের সংকট নিয়ে বিপাকে আছে ওয়াসা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সংস্থাটি চেয়েছিল ১ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা, সরকারের কাছ থেকে পেয়েছে ৭৪৪ কোটি। চলতি অর্থবছরে (২০২৫-২৬) দরকার ১ হাজার ৪০ কোটি টাকা, কিন্তু এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে ৬৭৬ কোটি টাকা।প্রকল্পের নথিতে বলা হয়, দৈনিক ১০ কোটি লিটার পরিশোধনের ক্ষমতাসম্পন্ন একটি পয়োশোধনাগার, দৈনিক ৩০০ ঘনমিটার পরিশোধনের ক্ষমতাসম্পন্ন একটি সেপটিক ট্যাংকের বর্জ্য শোধনাগার, ২০০ কিলোমিটার পয়োনালা নির্মাণ করা হবে। এতে চট্টগ্রাম নগরের ২২টি ওয়ার্ডের ৩৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা প্রকল্পের আওতায় আসবে। আর উন্নত পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থার সুফল পাবেন ২০ লাখ মানুষ।
এখনো কাজ বন্ধ, অর্থের টানাপোড়েন
প্রকল্পের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ পাইপলাইন স্থাপনের কাজ ১৫ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাইয়ং ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড উপঠিকাদারদের অর্থ পরিশোধ না করায় সাতটি স্থানীয় প্রতিষ্ঠান কাজ বন্ধ রেখেছে।
হালিশহর এলাকায় পাইপ বসানোর কাজ করছে মেসার্স নূর এন্টারপ্রাইজ, এসএ ইঞ্জিনিয়ারিং, জাহান এন্টারপ্রাইজ, দেশ কন্ট্রাক্টরস অ্যান্ড ডেভেলপার লিমিটেড, ইনাস এন্টারপ্রাইজ, পোর্ট হারবার ইন্টারন্যাশনাল ও পাওয়ার বাংলা করপোরেশন। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, তাদের প্রায় ৪৬ কোটি টাকা বকেয়া পড়ে আছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার তাইয়ং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় উপঠিকাদাররা দুটি শর্তে কাজ শুরুতে রাজি হয়েছেন—আগামী সোমবারের মধ্যে ৫০ শতাংশ বকেয়া পরিশোধ এবং ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি অর্থ নিষ্পত্তি।
জানতে চাইলে এসএ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রকল্প পরিচালক আহাদুজ্জামান বাতেন বলেন, ‘চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিল পরিশোধ করা হয়েছিল। এরপর ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত করা কাজের টাকা আমরা পাইনি। আগেও একই কারণে কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছিল, পরে আশ্বাস পেয়ে শুরু করেছিলাম। এবারও সেই পরিস্থিতি।’
আহাদুজ্জামান জানান, ‘মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনায় আমরা দুটি শর্ত দিয়েছি—সোমবারের মধ্যে ৫০ শতাংশ বিল পরিশোধ এবং ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি অর্থ নিষ্পত্তি। এ দুই শর্তে কাজ আবার শুরু করছি।’