আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে পড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়কের চিকিৎসা চলছিল রাজধানীর ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে। তাঁদের একজন নাহিদ ইসলাম (এখন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক), অন্যজন আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া (এখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা)। হাসপাতালে আসিফের দেখভাল করছিলেন আরেক সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার (এখন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক)।

এই তিন সমন্বয়কের ওপর নজর রাখছিলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। ২৬ জুলাই (২০২৪ সাল) বেলা সাড়ে তিনটার দিকে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে তিনজনকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। তুলে নিতে যাওয়া ব্যক্তিদের কেউ কেউ নিজেদের গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি), আবার কেউ পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্য হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন।

সেদিন রাত ১১টার পর তিন সমন্বয়ককে হেফাজতে নেওয়ার কথা স্বীকার করে ডিবি। এর পরের দুই দিনে আরও তিনজন সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম ও নুসরাত তাবাসসুমকেও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে তুলে নিয়ে যায় ডিবি। তিনজনই এখন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) গুরুত্বপূর্ণ নেতা। ডিবির পক্ষ থেকে তখন বলা হয়েছিল, নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য সমন্বয়কদের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

সমন্বয়কদের তুলে নেওয়ার পাশাপাশি সারা দেশে এলাকা ভাগ করে তখন চলছিল ‘ব্লক রেইড’। ঢালাও মামলার পাশাপাশি চলছিল গণগ্রেপ্তার। ২৬ জুলাই পর্যন্ত সারা দেশে মামলা হয়েছিল অন্তত ৫৫৫টি। গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ৬ হাজার ২৬৪ জনকে। তখন পর্যন্ত মুঠোফোনের ইন্টারনেট সেবা বন্ধ ছিল।

২৬ জুলাই সকালে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের আয়োজনে সমাবেশ হয়। এই সমাবেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, মানবাধিকারকর্মী, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মীরা বক্তব্য দেন। সমাবেশে ছাত্র–জনতার ওপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করা হয়।

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে জুলাই: মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু নামে একটি বই লিখেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। গত মার্চ মাসে প্রথমা প্রকাশন থেকে বের হওয়া ওই বইয়ে ২৬ জুলাইয়ের ঘটনা সম্পর্কে তিনি লিখেছেন, ‘গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা আমাদের প্রায় গৃহবন্দী করে রাখে। আমরা যাতে ইন্টারনেটে যুক্ত হতে না পারি, সে জন্য তারা রাউটার খুলে ওয়াই–ফাই বন্ধ করে দেয়। সব ধরনের যোগাযোগ থেকে তারা আমাদের বিচ্ছিন্ন করে রাখে।’

একই হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও নাহিদ ইসলামকে তাঁদের কেবিনে আসতে দেওয়া হয়নি বলেও স্মৃতিকথায় উল্লেখ করেন আসিফ মাহমুদ।

২৬ জুলাই হাসপাতাল থেকে তুলে নেওয়া তিন সমন্বয়কের একজন আবু বাকের মজুমদার। তিনি গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা বলেছিল নিরাপত্তার জন্য আমাদের তেজগাঁওয়ের ইমপালস হাসপাতালে শিফট (স্থানান্তর) করা হবে। কিন্তু ডিবি, ডিজিএফআই, সিটিটিসি, এনএসআই মিলে আমাদের ডিবি হেফাজতে নিয়ে যায়। ডিবি কার্যালয়ের একটি কক্ষে আমাদের বসিয়ে সামনে পিস্তল রেখে ভয় দেখানোর চেষ্টা করা হয়। শারীরিক–মানসিক নির্যাতন করা হয়। শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ দিয়ে একটা বিবৃতি দেওয়ার জন্য আমাদের ওপর নানাভাবে জোর করা হয়। এমনকি ডিবি কার্যালয় থেকে আমাদেরকে শেখ হাসিনার কাছে নিয়ে যাওয়ারও চেষ্টা করেছিল। এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আমরা আমরণ অনশন শুরু করেছিলাম। অনশনে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তারা আমাদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।’

ডিবি কার্যালয়ে নেওয়ার আগে গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা নানাভাবে ভয় দেখাচ্ছিলেন, হুমকি দিচ্ছিলেন বলে উল্লেখ করেন আবু বাকের মজুমদার। তিনি বলেন, ‘আমরাও পাল্টা হুমকি দিয়ে বলেছিলাম, বেশি চাপাচাপি করলে এখানে ১০ হাজার মানুষ ডেকে নিয়ে আসব। বাগ্‌বিতণ্ডার এক পর্যায়ে তারা (গোয়েন্দারা) জোর করে আমাদের মুঠোফোন নিয়ে যায়, সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। একই হাসপাতালের পৃথক ফ্লোরে থাকলেও তুলে নেওয়ার আগের রাত থেকেই নাহিদ ইসলামের সঙ্গে আমার ও আসিফ ভাইয়ের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। সে জন্য তুলে নেওয়ার সময় আমরা বলছিলাম যে নাহিদ ভাইকে দেখতে চাই। আমাদের জোরাজুরিতে তারা নাহিদ ভাইকে আমাদের সামনে আনতে বাধ্য হয় এবং আমাদের তিনজনকে একসঙ্গে ডিবি কার্যালয়ে নেয়।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত ন সমন বয়ক গণস ব স থ য রক ষ ক র ২৬ জ ল ই আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

‎পূজাকে  ঘিরে আইনশৃঙ্খলায় বাহিনী তৎপর : ডিসি

‎নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, আইনসৃঙ্খলা স্বাভাবিক রয়েছে, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজাকে ঘিরে সকল ধর্মমত, সকল  সম্প্রদায় তারা একত্রিত হয়েছে।

সকলেই সার্বিক সহয়তা করছে যাতে করে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজা উৎসব সুন্দর ভাবে পজলন করতে পারে। পূজাকে ঘিরে  একটি গোষ্ঠি চাইবে পূজা উৎসব নষ্ট করে দেয়ার জন্য। 

সে জন্য আমাদের তৎপরতা রয়েছে। আমাদের  গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। তার পাশাপাশি র‍্যাব, বিজিবি,  সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশবাহিহনী সবাই কাজ করছে যাতে করে সুন্দর ভাবে পূজা উৎসব শেষ করতে পারি।

‎‎মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর)  শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে ৫নং ঘাটে দূর্গা পূজার প্রতিমা বিসর্জনের স্থান পরিদর্শনকালে তিনি এ নির্দেশনা দেন।

‎দূর্গা পূজা বিজয়া দশমী শেষে প্রতিমা বিসর্জনের সময় যেকোনো অপ্রীতিকর দূর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সুন্দর ভাবে প্রতিমা বিসর্জনের স্থান নিরাপদ রাখতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন জেলা প্রশাসক।

‎‎জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, নারায়ণগঞ্জের ২২৩টি পূজা মণ্ডপে সুষ্ঠুভাবে পূজা উদযাপনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে এবং সম্প্রীতি বজায় রেখে বর্তমানে পূজা উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে।

‎‎এসময় তিনি প্রতিটি মণ্ডপে সুষ্ঠুভাবে ও নির্বিঘ্নে পূজা অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথাযথ সহযোগিতার নির্দেশনা দেন।

‎‎তিনি বলেন, সকলে মিলে সব উৎসব উদযাপন করাই বাংলার ঐতিহ্য ও গৌরব।

‎‎এসময় জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিআইডব্লিউটিএ, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‎পূজাকে  ঘিরে আইনশৃঙ্খলায় বাহিনী তৎপর : ডিসি
  • নুরুল হকের ওপর হামলার ঘটনায় জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন
  • ১৭ কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ, নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুই হাজার সদস্য
  • ফরিদপুরে অবরোধ শনিবার পর্যন্ত স্থগিত
  • আসন্ন নির্বাচনে নিরপেক্ষতা বজায় রাখার নির্দেশ ডিএমপি কমিশনারের