ভারতের আসাম রাজ্য থেকে ‘জাতীয় নাগরিক পঞ্জি’ (এনআরসি)-র নোটিশ পেলেন পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার মাথাভাঙ্গা-২ ব্লকের লতাপাতা এলাকার এক বাসিন্দা। দেড় মাস আগে ৭০ বছর বয়সী নিশিকান্ত দাস নামে ওই ব্যক্তির কাছে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল থেকে ওই নোটিশ আসলেও বিষয়টি জানাজানি হয় শুক্রবার রাতে। 

নিশিকান্ত পেশায় একজন খুচরা ডিম বিক্রেতা। 

তিনি জানান, প্রায় ২৮ থেকে ৩০ বছর আগে কাজের সন্ধানে তিনি আসামে গিয়েছিলেন। সেখানে এয়ারপোর্ট সংলগ্ন ভিআইপি চৌপথি এলাকা থেকে আসাম রাজ্য পুলিশ তাকে বাংলাদেশি নাগরিক সন্দেহে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এরপরই তার এজেন্ট (যার অধীনে তিনি সেখানে কাজে গিয়েছিলেন) থানায় গিয়ে জানায় নিশিকান্ত দাস বাংলাদেশি নন। তিনি কোচবিহার জেলার বাসিন্দা এবং একজন ভারতীয় নাগরিক। 
নিজেকে ভারতীয় প্রমাণ করতে সেসময় নিশিকান্ত বাড়িতে এসে সব নথি আসামে নিয়ে গিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তাদের দেখান। এরপর আসাম পুলিশ তাকে ছেড়েও দেয়। 

প্রায় দেড়/দুই মাস আগে তার কাছে ফরেনারর্স ট্রাইব্যুনাল থেকে এনআরসি-র নোটিশ আসে। তারপর তিনি ১৯৬০ সালের জমির কাগজপত্র ও বিভিন্ন প্রমাণপত্র নিয়ে আসামে যান। কিন্তু সব নথি ও প্রমাণ পত্র দেখার পরেও সন্তুষ্ট নয় ফরেনারস্ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃপক্ষ। তৎকালীন সময়ের ভোটার তালিকা ও তার বাবার পরিচয়পত্র চান। সেসব নথি সঙ্গে না থাকায় তিনি কার্যত হতাশ হয়ে বাড়ি ফেরেন। 

নিশিকান্তের অভিযোগ বাবা দেবেন্দ্র চন্দ্র দাস প্রায় ৪৫ বছর আগে মারা গেছেন। ফলে এখন তার বাবার এসব নথি কীভাবে জোগাড় করবেন, তা নিয়ে চিন্তায় আছেন। 

শুক্রবার বিষয়টি সামনে আসার পরই শনিবার তার বাড়িতে গিয়ে দেখা করেন কোচবিহারে জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক। 

তিনি বলেন, “বাংলাভাষা বলাটা কি অপরাধ? বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে বাঙালিদের যেভাবে বিজেপি হয়রানি করছে, আমরা তার প্রতিবাদে আন্দোলনে আছি।”

কয়েকদিন আগেই ওই জেলার দিনহাটার বাসিন্দা উত্তম কুমার ব্রজবাসীর কাছে ‘ফরেনারস্ ট্রাইবুনাল’ থেকে এনআরসির নোটিশ আসার বিষয়টি সামনে আসে। বিষয়টি নিয়ে রাজ্য রাজনীতি তোলপাড় হয়ে যায়। এমনকি ২১ জুলাই ধর্মতলার তৃণমুল কংগ্রেসের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সভায় উপস্থিত করানো হয় উত্তম কুমার ব্রজবাসীকে। আর সেখান থেকেই এর প্রতিবাদে আন্দোলনের বার্তা দেন দলের প্রধান তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। 
 

সুচরিতা/শাহেদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফর ন র

এছাড়াও পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।

আরো পড়ুন:

ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০

বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী

প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। 

দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।

হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী। 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”

 

শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।

লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।

স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, ‍“হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”

রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?” 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”

বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
  • সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন
  • ৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে