আবারো পশ্চিমবঙ্গের নাগরিককে বাংলাদেশি দাবি করে এনআরসির নোটিশ
Published: 26th, July 2025 GMT
ভারতের আসাম রাজ্য থেকে ‘জাতীয় নাগরিক পঞ্জি’ (এনআরসি)-র নোটিশ পেলেন পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার মাথাভাঙ্গা-২ ব্লকের লতাপাতা এলাকার এক বাসিন্দা। দেড় মাস আগে ৭০ বছর বয়সী নিশিকান্ত দাস নামে ওই ব্যক্তির কাছে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল থেকে ওই নোটিশ আসলেও বিষয়টি জানাজানি হয় শুক্রবার রাতে।
নিশিকান্ত পেশায় একজন খুচরা ডিম বিক্রেতা।
তিনি জানান, প্রায় ২৮ থেকে ৩০ বছর আগে কাজের সন্ধানে তিনি আসামে গিয়েছিলেন। সেখানে এয়ারপোর্ট সংলগ্ন ভিআইপি চৌপথি এলাকা থেকে আসাম রাজ্য পুলিশ তাকে বাংলাদেশি নাগরিক সন্দেহে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এরপরই তার এজেন্ট (যার অধীনে তিনি সেখানে কাজে গিয়েছিলেন) থানায় গিয়ে জানায় নিশিকান্ত দাস বাংলাদেশি নন। তিনি কোচবিহার জেলার বাসিন্দা এবং একজন ভারতীয় নাগরিক।
নিজেকে ভারতীয় প্রমাণ করতে সেসময় নিশিকান্ত বাড়িতে এসে সব নথি আসামে নিয়ে গিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তাদের দেখান। এরপর আসাম পুলিশ তাকে ছেড়েও দেয়।
প্রায় দেড়/দুই মাস আগে তার কাছে ফরেনারর্স ট্রাইব্যুনাল থেকে এনআরসি-র নোটিশ আসে। তারপর তিনি ১৯৬০ সালের জমির কাগজপত্র ও বিভিন্ন প্রমাণপত্র নিয়ে আসামে যান। কিন্তু সব নথি ও প্রমাণ পত্র দেখার পরেও সন্তুষ্ট নয় ফরেনারস্ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃপক্ষ। তৎকালীন সময়ের ভোটার তালিকা ও তার বাবার পরিচয়পত্র চান। সেসব নথি সঙ্গে না থাকায় তিনি কার্যত হতাশ হয়ে বাড়ি ফেরেন।
নিশিকান্তের অভিযোগ বাবা দেবেন্দ্র চন্দ্র দাস প্রায় ৪৫ বছর আগে মারা গেছেন। ফলে এখন তার বাবার এসব নথি কীভাবে জোগাড় করবেন, তা নিয়ে চিন্তায় আছেন।
শুক্রবার বিষয়টি সামনে আসার পরই শনিবার তার বাড়িতে গিয়ে দেখা করেন কোচবিহারে জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক।
তিনি বলেন, “বাংলাভাষা বলাটা কি অপরাধ? বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে বাঙালিদের যেভাবে বিজেপি হয়রানি করছে, আমরা তার প্রতিবাদে আন্দোলনে আছি।”
কয়েকদিন আগেই ওই জেলার দিনহাটার বাসিন্দা উত্তম কুমার ব্রজবাসীর কাছে ‘ফরেনারস্ ট্রাইবুনাল’ থেকে এনআরসির নোটিশ আসার বিষয়টি সামনে আসে। বিষয়টি নিয়ে রাজ্য রাজনীতি তোলপাড় হয়ে যায়। এমনকি ২১ জুলাই ধর্মতলার তৃণমুল কংগ্রেসের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সভায় উপস্থিত করানো হয় উত্তম কুমার ব্রজবাসীকে। আর সেখান থেকেই এর প্রতিবাদে আন্দোলনের বার্তা দেন দলের প্রধান তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।
সুচরিতা/শাহেদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
লাইলীকে বিশ্ব দরবারে নিয়ে যেতে চান আনোয়ার
বরগুনার বিষখালী নদীর পাড়ে বেড়ে উঠেছেন লাইলী বেগম। বাবার মৃত্যুর পর ভাইয়েরা অসুস্থ মায়ের দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানান, তখন কন্যা হয়েও লাইলী সেই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। অভাব, ক্ষুধা আর সমাজের অবহেলা তার নিত্যসঙ্গী হয়। তারপরও থেমে যাননি লাইলী।
জীবনের চাকা ঘুরাতে, মাছ ধরা থেকে বর্গাচাষ—সবই করেছেন লাইলী। গত ২১ বছর ধরে নদী ও সাগরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন। বরগুনা জেলার সরকারিভাবে নিবন্ধিত একমাত্র নারী জেলে তিনি। এই লাইলীকে নিয়ে নির্মিত হয়েছে প্রামাণ্যচিত্র ‘উত্তরের বৈঠা’। এটি নির্মাণ করেছেন আনোয়ার হোসেন।
পরিচালক আনোয়ার হোসেন
আরো পড়ুন:
জসীমের কবরে রাতুলকে সমাহিত করে দুই ভাইয়ের আবেগঘন পোস্ট
নীনার অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার খবরে কী বলেছিলেন ক্রিকেটার ভিভ?
এ নিয়ে রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলেন পরিচালক আনোয়ার হোসেন। তরুণ এই নির্মাতা বলেন, “এই চলচ্চিত্র শুধু একজন নারী জেলের গল্প নয়, এটি একজন মানুষের বেঁচে থাকার অদম্য চেষ্টা, একাকিত্বে গড়ে ওঠা সাহসিকতার প্রতিচ্ছবি। লাইলী বেগম যখন নদীতে জাল ছুঁড়ে দেন, সেই মুহূর্তে তিনি শুধু মাছ খোঁজেন না—তিনি খুঁজে ফেরেন নিজের অবস্থান, নিজের সম্মান, আর অস্তিত্বের উত্তর।”
লাইলীর চোখ দিয়ে বাস্তবতা দেখাতে চেয়েছেন নির্মাতা। তার ভাষায়, “এই ফিল্মে আমি কোনো কৃত্রিম কণ্ঠ বা নাটকীয় ভাষা ব্যবহার করিনি। কারণ আমি চেয়েছি দর্শক যেন লাইলীর চোখ দিয়েই এই বাস্তবতা দেখেন। তার নীরবতা, তার কথাবার্তা, তার দৃষ্টি—সবই যেন একেকটি দৃশ্যপট হয়ে ওঠে। একজন নির্মাতা হিসেবে আমার দায়িত্ব ছিল শুধু একটি ফ্রেম তৈরি করে দেওয়া, বাকিটা বলে গেছেন লাইলী নিজেই—তার জীবনযাত্রা, নদী এবং অব্যক্ত যন্ত্রণা দিয়ে।”
‘লাইলী’-কে বিশ্ব দরবারে নিয়ে যেতে চান পরিচালক। তা জানিয়ে আনোয়ার হোসেন বলেন, “এই ফিল্মটি তাদের জন্য, যারা নিঃশব্দে লড়াই করেন এবং যারা কখনো আলোয় আসেন না। এখানে আমি সংক্ষিপ্ত আকারে প্রামাণ্য চিত্রটি তৈরি করেছি, পূর্ণদৈর্ঘ্য আকারে তৈরি করার প্রস্তুতি চলছে। আপনাদের সহযোগিতা ও আগ্রহ আমাকে অনুপ্রাণিত করবে। এই জীবন সংগ্রামের কথা বিশ্ব দরবারে নিয়ে যেতে চাই।”
সমাজের বাঁকা চোখ উপেক্ষা করে লাইলী প্রমাণ করেছেন, নারীর স্থান কেবল ঘরে নয়, সাহস আর সংগ্রামেও। লাইলী কেবল একজন নারী জেলে নন, এক অনুপ্রেরণার নাম। নারী চাইলে সব পারে—লাইলী তা নিঃশব্দে প্রমাণ করেছেন বলেও মনে করেন নির্মাতা।
ঢাকা/শান্ত